শিল্প-সাহিত্য
গান্ধীরও ২৫ বছর আগে ‘মহাত্মা’ উপাধি পান লালন
লালন শাহ, লালন সাঁই, মহাত্মা লালন, বাউল সম্রাট, মরমি সাধক, লালন ফকির, গুরুজি -এমন অনেক নামে পরিচিত তিনি। তবে শিষ্যদের কাছে তিনি কেবলই ‘সাঁইজি’ নামে পরিচিত। লালন জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ, গোত্রের ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষ ও মানবতাকে বড় করে দেখেছেন।শুধু জাত-পাতের বিরুদ্ধেই সোচ্চার ছিলেন না, সামাজিক অনাচার, বিভেদ বৈষম্য এবং সামন্ত শোষণের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এমনই এক বিস্ময়কর ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তি ছিলেন লালন সাঁই। আজ (১৭ অক্টোবর) ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান এই মরমী সাধকের মৃত্যুদিবস। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১১৬ বছর।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য যখন অস্তমিত, ইংরেজদের শাসনে দিশেহারা উপমহাদেশের জনগণ, গ্রামীণ সমাজ ধর্ম জাত-পাত ইত্যাদি নানা সমস্যায় জর্জরিত- বাঙালির জীবনের ওই ক্রান্তিকালে ১৭৭৪ সালের এই দিন লালন ফকিরের আর্বিভাব ঘটে। তিনি চেয়েছিলেন একটি জাত ধর্ম বর্ণ গোত্রহীন সমাজ গড়ে তুলতে। সবকিছুর ওপরে তিনি স্থান দিয়েছিলেন মানবতাবাদকে।
বাংলা ভাষা, বাংলাসংস্কৃতি, বাউল সম্প্রদায়, বাউল গান সবই বাঙালিদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়। আর বাঙালির এই গৌরবের ইতিহাসের গোড়াপত্তন করেন লালন সাঁই। গান্ধীরও ২৫ বছর আগে ভারত উপমহাদেশের সর্বপ্রথম ‘মহাত্মা’ উপাধি পাওয়া লালনের গান ও দর্শনের দ্বারা অনেক বিশ্বখ্যাত কবি, সাহিত্যিকরাও প্রভাবিত হয়েছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালনের দর্শনে প্রভাবিত হয়ে ১৫০টি গান রচনা করেন।
প্রখ্যাত লালন গবেষক ড. আবদুল ওয়াহাব জানান,‘১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর লালন শাহের মৃত্যুর ১২ দিন পর ৩১ অক্টোবর তৎকালীন পাক্ষিক পত্রিকা ’হিতকরী’তে লালন শাহ সম্পর্কে লেখনীতে তাকে ‘মহাত্মা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। সংবাদটির প্রতিবেদক ছিলেন রাইচরণ নামে এক সাংবাদিক। হিতকরীর সম্পাদক ছিলেন মীর মোশাররফ হোসেন।মৃত্যুর পর লালন শাহ ’মহাত্মা’ উপাধি পেলেও গান্ধীজী পেয়েছিলেন জীবদ্দশায়। ১৯১৫ সালের ২১ জানুয়ারি গুজরাটের কামরীবাই স্কুল পরিদর্শনে গেলে নৌতম লাল ভগবানজী মেহতা নামে এক রাজনৈতিক নেতা গান্ধীজীকে ওই উপাধি দেন।’
লালনকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। লালনের দর্শনে প্রভাবিত হয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান কবি এলেন গিন্সবার্গের রচনাবলীতেও লালনের দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে। লালন সংগীত ও দর্শন নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা গবেষণা হয়েছে এবং এই ধারা এখনও চলছে। দেশ-বিদেশের বহু ভক্ত বিভিন্ন ভাষায় গবেষণা করছেন, কীভাবে সাধারণ এক ব্যক্তি এমন কালজয়ী গান লিখে গেছেন? স্বশিক্ষিত লালন তাইতো গবেষকদের কাছে এক বিস্ময়ের নাম।
লালনের অসম্ভব কামিশমা ছিলো মুখে মুখেই পদ রচনা করা। তার মনে নতুন গান উদয় হলে শিষ্যদের ডেকে বলতেন, ‘পোনা মাছের ঝাঁক এসেছে’। লালন গেয়ে শোনাতেন, ফকির মানিক শাহ ও মনিরুদ্দিন শাহ সেই গান লিখে নিতেন। বাংলাদেশসহ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে লালনের গান বেশ জনপ্রিয়। শ্রোতার পছন্দ অনুসারে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির করা সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় লালনের “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়” গানটিও রয়েছে।
বাউলদের বিশ্বাস অনুযায়ি, সাধন স্তরের পাঁচটি পর্যায়ের নাম হচ্ছে- আউল, বাউল, দরবেশ, সাঁই এবং ফকির। সাধারণ মানুষকে আউল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাউল হচ্ছে দীক্ষাপ্রাপ্ত মুরিদ। একজন আত্মসংযমী আদর্শ মানব হচ্ছেন দরবেশ। আধ্যাত্মজ্ঞানে শিক্ষিত ব্যক্তি সাঁই নামে পরিচিত। আর আত্মতত্ত্বে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো ব্যক্তি হলেন ফকির। ফকির লালন সাঁইয়ের ভাষায়- এলমে লাদুন্নী হয় যার/ সর্বভেদ মালুম হয় তার।
হিন্দু না মুসলমান- কি ছিলেন লালন? তিনি কোন ধর্ম পালন করতেন? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। নির্ভরযোগ্য উত্তর এখনও খুঁজে বেড়াচ্ছেন গবেষকরা। তবে লালনের ধর্ম, জাত-পাত নিয়ে নানা ধরণের বিতর্ক ও সমালোচনা থাকলেও লালন যে জাত-পাতের ধার ধারতেন না- এবিষয়ে সবাই একমত।
লালনের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে ভারতের প্রয়াত ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, লালন ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু কোনো বিশেষ ধর্মের রীতিনীতি পালনে আগ্রহী ছিলেন না। সব ধর্মের বন্ধন ছিন্ন করে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন জীবনে। লালন মূলত অসাম্প্রদায়িক ও মানবধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (২০০৮)। মনের মানুষ, আনন্দ পাবলিশার্স, কোলকাতা। পৃষ্ঠা-১৯৭)।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি ও লেখক কাঙাল হরিনাথ ও উনবিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ট মুসলিম সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন লালনকে চিনতেন ও জানতেন। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক রায় বাহাদুর জলধর সেন এবং প্রখ্যাত বাঙালি ইতিহাসবেত্তা ও সমাজকর্মী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় বেশ কয়েকবার লালনকে সামনাসামনি দেখেছেন, কথা বলেছেন, গান শুনেছেন। তবে তার ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারেননি। এমনকি আমরা লালনের যে ছবিটিকে সচরাচর দেখিতে পাই, ১৮৮৯ সালে আঁকা সেই ছবির চিত্রকর রবীন্দ্র ঠাকুরের ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরও ব্যর্থ হয়েছেন তার প্রকৃত পরিচয় জানতে। তাইতো লালন গেয়েছেন, সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে/ লালন কয় জাতের কি রূপ/ দেখলাম না এই নজরে।
লালনের অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আজও সাম্প্রদায়িক ধর্মবাদী ও উগ্রপন্থীরা সমালোচনা করেন। তার ধর্মবিশ্বাস আজও অনেকের কাছে একটি বিতর্কিত বিষয়। জাত-পাতের বিরোধিতা, লিঙ্গ বৈষম্যের বিরোধিতাসহ নানা কারণে লালন সাঁই জীবদ্দশায় হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের উগ্রপন্থীদের ঘৃণা, বঞ্চনার এবং আক্রমণের শিকার হয়েছেন। লালনের দর্শন এবং ঈশ্বর, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ে তার উত্থাপিত নানান প্রশ্নের কারণে তাকে নাস্তিক হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন বা দিয়ে থাকেন অনেকে।
লালন সাঁই ছিলেন জন্মান্তরবাদী। তার মতাদর্শে সন্তান উৎপাদন নিষিদ্ধ। লালনের যুক্তি আত্মা থেকে যেহেতু সন্তান উৎপন্ন হয়, ফলে আত্মা খণ্ডিত হয়। লালনের এই মতবাদের ভাবার্থ হচ্ছে, খণ্ডিত আত্মা নিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় না। পুনর্জন্মের ফাঁদে পড়ে দুনিয়াতেই অবস্থান করতে হয়। লালন তাই গেয়েছেন, পিতার বীজে পুত্রের সৃজন/ তাইতে পিতার পুনর্জনম।
ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো খুব পছন্দ করতেন লালন। মাঝে মাঝে চাঁদের আলোয় ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। তবে শিষ্যরা জানতেন না তিনি কোথায় যাচ্ছেন। শিষ্যদের অনুমান, দোল পূর্ণিমার তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে লালন জীবদ্দশায় ফাল্গুন মাসের রাতে খোলা মাঠে শিষ্যদের নিয়ে সারারাত গান বাজনা করতেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, লালনের জীবদ্দশায় তাঁকে কোন ধরনের ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন করতেও দেখা যায়নি। নিজের সাধনা দিয়ে তিনি হিন্দুধর্ম এবং ইসলামধর্ম উভয় শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। তাঁর রচিত গানে এর প্রচুর নিদর্শন রয়েছে।
লালন সামন্ত শোষণের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। লালন গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “শিলাইদহের ঠাকুর জমিদাররা যখন প্রজাপীড়ন আরম্ভ করলেন তখন কুমারখালির কাঙাল হরিনাথ তার ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকায় ঠাকুর জমিদারদের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করেন। এতে ঠাকুর জমিদাররা কাঙাল হরিনাথকে শায়েস্তা করার জন্য গুণ্ডা নিয়োগ করেন। লালন ফকির তখন তাঁর এই বন্ধুকে রক্ষা করার জন্য তাঁর শিষ্যদের নিয়ে জমিদারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।”
লালন সাঁই জীবিত ছিলেন ১১৬ বছর বয়স পর্যন্ত। মৃত্যুর এক মাস আগে তাঁর পেটের পীড়া হয়। তখন পানি জমে হাত-পা ফুলে যায় তাঁর। সে সময় দুধ ছাড়া তিনি অন্য কোনো খাবার খেতেন না। তবে খাবারের পাতে মাঝেমধ্যে মাছ চাইতেন। অসুস্থাবস্থায়ও শিষ্য-ভক্তদের নিয়ে গানের আসর বসাতেন। মৃত্যুর আগের দিন ভোররাত পর্যন্ত গান শুনেছেন। এরপর ভোর পাঁচটার দিকে শিষ্যদের ডেকে বলেছেন, ‘আমি চলিলাম।’ এর কিছুক্ষণ পরই মারা যান লালন।
আসলেই কি লালন শাহ মারা গেছেন? অবশ্যই না। তাঁর দেহের প্রস্থান ঘটেছে শুধু। তিনি বেঁচে আছেন মানবতাবাদী, সুরপ্রেমী মানুষেরই মাঝে। অগনিত ভক্তের মণিকোঠায় অমর হয়ে।
শিল্প-সাহিত্য
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ
আজ পঁচিশে বৈশাখ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বকবি। বাবা ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদাসুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তার বাবা-মায়ের চতুর্দশ সন্তান।
তিনি ছিলেন অগ্রণী বাঙ্গালী কবি, ঔপন্যাসিক, সঙ্গীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, কন্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ্য সাহিত্যিক মনে করা হয়। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য তাঁকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। ইউরোপের বাহিরের প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসাবে তিনি বিশ্বে ব্যপক খ্যাতি লাভ করেন।
রবীন্দ্রনাথের অন্তর্নিহিত জীবনবোধ ছিল স্থির এবং বহু পরিবর্তনকে স্বীকার করে নিয়েও আপন আদর্শে প্রতিষ্ঠিত; অন্যদিকে তার সৃজনশীল রূপটি ছিল চলিষ্ণু ও পরিবর্তনশীল। রবীন্দ্রনাথ কেবল তার কালের কবি নন, তিনি কালজয়ী। বাংলা কাব্যসাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর আবির্ভাব ছিল এক যুগান্তর।
বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর কবিগুরু সেখানেই বসবাস করেন। ১৯০৫ সালে জড়িয়ে পড়েন বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘শ্রীনিকেতন’ নামে সংস্থা। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বিশ্বভারতী’।
১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে রচনা করেন অসংখ্য কবিতা ও গান। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান।
রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার পতিসরে, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ী, সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান মালা উদ্বোধন করবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ছায়ানটের রবীন্দ্র-উৎসব ২৫ ও ২৬ বৈশাখ (৮ ও ৯ মে) ছায়ানট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে।
টিআর/
শিল্প-সাহিত্য
বইমেলায়ে এসেছে মোশতাক আহমেদ এর ‘রূপার সিন্দুক’
এবারের অমর একুশে বইমেলায় এসেছে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মোশতাক আহমেদের লেখা শিশিলিন সিরিজের নতুন কিশোর গোয়েন্দা উপন্যাস ‘রূপার সিন্দুক’।
এছাড়াও রয়েছে – প্যারাসাইকোলজি উপন্যাস- হারানো জোছনার সুর; সায়েন্স ফিকশন- দ্য ওল্ড ওয়ার্ল্ড এবং ভৌতিক- মৃত্যুবাড়ি।
উল্লেখ্য, মোশতাক আহমেদ পেশায় একজন পুলিশ অফিসার। ২০১৮ সালে বাংলা একেডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার এবং চ্যানেল আই সিটি আনন্দ সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হন।
শিল্প-সাহিত্য
আজ বইমেলা শুরু বেলা ১২টায়
পবিত্র শবে বরাতের ছুটির দিনে অমর একুশে বইমেলা শুরু হবে বেলা ১২টায়। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবে না।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
আরো জানানো হয়েছে, অমর একুশে বইমেলার ২৬তম দিনে বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : আবুবকর সিদ্দিক এবং স্মরণ : আজিজুর রহমান আজিজ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফরিদ আহমদ দুলাল এবং কামরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মামুন মুস্তাফা, তৌহিদুল ইসলাম, মো. মনজুরুর রহমান এবং আনিস মুহম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি আসাদ মান্নান। এছাড়া বিকেলে ‘লেখক বলছি’ এবং বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজনও অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের এক তারিখ থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায় চলছে অমর একুশে বইমেলা। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৭টি (একাডেমি প্রাঙ্গণে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি) প্যাভিলিয়ন বই বিক্রি করছে।
- ঢালিউড7 days ago
‘আমার আচরণে শাকিবের পরিবার এমন সিদ্ধান্ত নেবে, বিশ্বাস করি না’
- ঢালিউড7 days ago
শাকিবের বিয়ে: পরিবারের সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ খুললেন অপু বিশ্বাস
- তথ্য-প্রযুক্তি6 days ago
গ্রাহকদের দাবির মুখে সিদ্ধান্ত বদলালো জিপি
- পরামর্শ7 days ago
পুনরায় গরম করলে যে ৭ খাবার হয় ‘বিষাক্ত’
- জাতীয়3 days ago
১০০ টাকায় সয়াবিন তেল বিক্রি করবে টিসিবি
- বাংলাদেশ5 days ago
স্কুলে দেরিতে আসায় শিক্ষিকাকে ঘুষি মারলেন অধ্যক্ষ
- ঢাকা3 days ago
হেলে পড়েছে ৬ তলা ভবন, দুর্ঘটনার আশঙ্কা
- বলিউড4 days ago
সিনেমায় চুমু প্রতি স্ত্রীকে দিতে হতো একটি ব্যাগ: ইমরান হাশমি