রাজধানীর পল্টন থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব। এসময় জব্দ করা হয়েছে ভুয়া সিল, পাসপোর্ট, জাল ভিসা ও টিকেট তৈরির জন্য ব্যবহৃত কম্পিউটার।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) র্যাব জানায়, বেশ কয়েকজন ভূক্তভোগীর অভিযোগে র্যাব-৩ জানতে পারে যে, মতিঝিল এলাকায় একটি মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানির প্রলোভন দেখিয়ে ভূয়া ভিসা ও টিকেট সরবরাহ করে। চক্রটি বেকার যুবক যুবতীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় মানবপাচার চক্রের মূলহোতাসহ মোঃ জাবেদ হোসেন রকি (৩৩), মোঃ আবির শুভ (২৭) কে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের কাছ থেকে একটি সিপিইউি একটি, পাসপোর্ট পাঁচটি, খালি স্ট্যাম্প ২০ টি, ট্রেনিং সার্টিফিকেট ১০ টি, ভূয়া ওমান কনস্যুলেটর ও দূতাবাসের সীল দুটি টি, মোবাইল ফোন একটি ভিজিটিং কার্ড এক বক্স, ভূয়া ভিসার ফটোকপি, প্রায় একশ কোভিড-১৯ এর ভূয়া রিপোর্ট, ৫০ টি চেকের পাতা উদ্ধার করা হয়।
আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব জানতে পারে তারা সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্র। জাবেদ এই চক্রের মূলহোতা। আবির তার সহযোগী। তাদের মা সেলিনা বেগম রোকেয়া এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। জাবেদ ২০০৪ সাল থেকে ওমানে থাকে। সে ওমানের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মী হিসেবে কাজ করে। তার মা ২০১৮ সাল থেকে ওমানে থেকে এই চক্রকে সহযোগিতা করে। তাদের জনশক্তি রপ্তানির কোন লাইসেন্স নেই। তারপরও তারা দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠাচ্ছে।
গ্রেফতারকৃতরা মধ্যপ্রাচ্যে উচ্চ বেতনে চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে বেকার যুবক যুবতিদের কাছ থেকে তিন থেকে চার লাখ টাকা নেয়। তারপর ভূয়া ভিসা এবং ভূয়া টিকেট দেয়। ওই ভিসা এবং টিকেট নিয়ে বিদেশের বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ভিসা এবং টিকেট জাল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়। এভাবে ২০১৮ সাল থেকে এই চক্র অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠায়। তারা বিদেশ গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
গ্রেফতার জাবেদ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। ২০১১ সালে সে বিয়ে করে। সে দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক। জাবেদের বাবা দীর্ঘদিন বাবুর্চি হিসেবে দুবাই কাজ করেছেন। বর্তমানে তার মতিঝিল এলাকায় একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর রয়েছে। ২০১২ সালে জাবেদ হোটেলের ওয়েটার ভিসায় দুবাই গিয়ে সেখানে চার বছর থাকে। দেশে ফেরার পর ২০১৮ সাল থেকে সে প্রতারণা এবং মানবপাচার শুরু করে।
গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রথমে সে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে নারী কর্মীদের মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠায়। পরে সে পুরুষ কর্মীদের বিদেশ পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট ও টাকা নেয়।
তারপর সে তার কম্পিউটার ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের ভূয়া ভিসা তৈরী করে।
সেসব ভিসা এবং টিকেট নিয়ে বিদেশের বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসার পর সে ভিকটিমদের নতুন ভিসা ইস্যু করার জন্য সময় নেয়।
তার কথায় আশ্বস্থ হয়ে ভিকটিমদের কেউ কেউ নতুন ভিসা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। অন্যদিকে ভিকটিমদের মধ্যে কেউ টাকা ফেরত চাইলে সে ভিকটিমদের চেক দেয়। কিন্তু উক্ত চেক উঠাতে গেলে ভিকটিমরা জানতে পারেন তার একাউন্টে টাকা নেই।