মালিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে আশার আলো দেখছেন চা-শ্রমিকরা

৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ১৮তম দিনে কর্মবিরতি পালন করছেন চা-শ্রমিকরা। দীর্ঘ সময় কাজে না থাকায় শ্রমিকদের ঘরে অভাব দেখা দিয়েছে। খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন কেউ কেউ। এই সংকটের মধ্যেও শ্রমিকদের আশার আলো জাগিয়েছে চা-বাগান মালিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের ঘোষণা।   

আজ শুক্রবার (২৬ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।  চলমান সংকট নিরসনে আগামীকাল (শনিবার) বিকেলে ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা-বাগান মালিকদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। 

দেওরাছড়া চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সুবোদ কুর্মি জানান, শুক্রবার জেলার ৯২টি বাগানের নিজ নিজ নাচঘরে পঞ্চায়েত কমিটি বৈঠকে বসবে। ওই বৈঠকে মজুরি ও পরবর্তী শ্রমিক আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা হবে। 

সাতগাঁও চা বাগানের শ্রমিক সুধাং বাউরি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে মজুরি পাচ্ছি না। ঘরে খাবার নেই কাঁচা চা পাতা এখন ভরসা। এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। ঋণের বোঝা বাড়ছে। 

সিত কুমার বলেন, আজ আমরা আশার আলো দেখছি। আমাদের মা প্রধানমন্ত্রী মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। আমরা এখন তার দিকে তাকিয়ে আছি। আমরা ন্যায্য মজুরি নিয়ে কাজে নামতে চাই। 

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বিপ্লব মাদ্রাজি পাশী বলেন, চা-শ্রমিক তাদের যৌক্তিক দাবিতে একযোগে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সংগ্রামী চা-শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ে বদ্ধপরিকর। শ্রমিকরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন, ফলে তাদের মজুরি এবং রেশন বন্ধ হয়ে আছে। এই রকম পরিস্থিতিতে ঋণ প্রদানকারী সংস্থাকে মানবিক বিবেচনায় কিস্তি উত্তোলন করা থেকে বিরত থাকা এবং কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি না করার আহ্বান জানাচ্ছি। 

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে আনুমানিক প্রতিদিন গড়ে ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এই ভরা মৌসুমেও দীর্ঘ সময় চা বাগান বন্ধ থাকায় বড় ধরনের সংকট দেখা দেবে। এ বছর আমরা চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছি ১০০ মিলিয়ন কেজি। আমরা আশা করছি এ বছর এটি অর্জন করতে পারব। তবে চলমান সংকটের সমাধান না হলে উৎপাদনেও প্রভাব পড়বে। 

উল্লেখ্য, দেশের ১৬৭টি চা-বাগানে শ্রমিকের সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। বর্তমানে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা। গেলো ৯ আগস্ট এ আন্দোলন শুরু হয়। শুরুতে প্রথম কয়েকদিন কেবল চার ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হয়। সে সময় মজুরি বৃদ্ধি ও মজুরি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সাত দিনের আলটিমেটাম দেয়া হয়। কিন্তু মালিকপক্ষ এ সময়ের মধ্যে সমঝোতায় না আসায় ১৩ আগস্ট থেকে লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। দফায় দফায় বৈঠক করেও এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে কোনো সমাধান হয়নি। এ নিয়ে আগামীকাল বিকেলে বাগান মালিকদের সঙ্গে বসবেন প্রধানমন্ত্রী। 

 

বিপ্লব আহসান

Recommended For You