Connect with us

বাংলাদেশ

ঊনসত্তরের শপথ দিবস

Published

on

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান নিয়ে স্মৃতিচারণ করে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধটি নীচে প্রকাশ করা হল-

মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি-বিজড়িত মাস ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ আমার স্ত্রী আনোয়ারা আহমেদের চিকিৎসার কারণে বেশ কয়েকদিন যাবত ভারতের রাজধানী দিল্লীর ম্যাডেন্টা হাসপাতালে রয়েছি। তবু মন আমার পড়ে আছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে। যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদাশালী ও উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে, যখন দেশের মানুষ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন, ঠিক তখনই দেশবিরোধী-গণবিরোধী কায়েমীস্বার্থবাদী গোষ্ঠী আল-জাজিরা প্রচারমাধ্যমের সাহায্যে মেতে উঠেছে এক নতুন চক্রান্তে। বাংলার মানুষ অতীতের মতো এবারও চক্রান্তের দাঁতভাঙা জবাব দেবে। এসব মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্ববহ। ’৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলনে বাংলার সংগ্রামী ছাত্রসমাজ রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে। আর ’৬৯-এর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সংগ্রামী ছাত্র-জনতা দেশব্যাপী তুমুল গণআন্দোলন সংঘটিত করে দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ‘ভোটাধিকার’ অর্জন এবং সকল রাজবন্দীসহ প্রিয়নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারামুক্ত করে। সত্যিকার অর্থেই ’৫২-এর রক্তধারা ’৬৯-এর রক্তস্রোতে মিশে ’৭১-এ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের উন্মেষ ঘটায়। বাঙালীর জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এ-এক ঐতিহাসিক পরম্পরা।

’৬৯-এর ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডাকসু’ কার্যালয়ে চার ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে আমার সভাপতিত্বে সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। আমি ডাকসু’র ভিপি হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করি। দশজন ছাত্রনেতার উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে ৬ দফা দাবী আদায়ে এবং বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করতে ৬ দফাকে দাড়ি, কমা, সেমিকোলনসমেত ১১ দফার ৩ নম্বর দফায় অন্তর্ভূক্ত করে ঐতিহাসিক ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করি। বাস্তবত, ১১ দফা ছিল ৬ দফারই সম্প্রসারিত রূপ। যাতে ছিল বাংলার মানুষের জাতীয় মুক্তির আকাক্সক্ষা।

ঊনসত্তরের ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা ১১ দফার প্রতি ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীসহ বাংলার সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন আদায় করতে পেরেছিলাম। এরই প্রতিফলন দেখতে পাই আমাদের ঘোষণার স্বতঃস্ফূর্ত বাস্তবায়নে। আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম গুলিস্তানে এখন যেখানে মহানগর নাট্যমঞ্চ তার পাশের পার্কটির নাম হবে শহীদ মতিউরের নামে, ‘মতিউর পার্ক’; যেটি ছিল আইয়ুব গেট, সেটির নামকরণ করেছি শহীদ আসাদের নামে, ‘আসাদ গেট’; আর দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে ঘোষিত আইয়ুব নগরের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, বাংলার কৃষক দরদী নেতা শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজুলল হকের নামে, ‘শেরেবাংলা নগর’। মুক্তিকামী বিক্ষুব্ধ জনতা স্বতস্ফূর্তভাবে নামগুলো পাল্টে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে। পরম শ্রদ্ধাভরে উক্ত স্থানগুলোতে শহীদদের নামে নামাঙ্কিত ফলক স্থাপন করা হয়। দেশের সর্বত্র গণবিক্ষোভ এমন ছিল যে, স্বৈরশাসক ভীত হয়ে ২৫, ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি সান্ধ্য আইন বলবৎ রাখে। ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে দেশের সর্বত্র গণবিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। ১ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান বেতার ভাষণে রাজনৈতিক সমাঝোতার কথা বলেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে কারাগারে রেখে এবং ১১ দফা দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হবে না পরিষ্কার জানিয়ে দিয়ে আমরা আইয়ুব খানের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করি। ৬ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন এবং এক সংবাদ সম্মেলনে দেশরক্ষা আইন ও অর্ডিন্যান্সের প্রয়োগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। আমাদের ১১ দফা দাবীর ২ নম্বর দফাটি ছিল, ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। বাক্ স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিতে হইবে। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার উপর হইতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করিতে হইবে।’ এই দাবীর একাংশ মেনে নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাক-এর ছাপাখানা নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেসের উপর থেকে স্বৈরশাসক আরোপিত বাজেয়াপ্ত আদেশ এবং দৈনিক ইত্তেফাকের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। ’৬৯-এর ২৫ মার্চ আইয়ুব খান পদত্যাগ করলে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করে এলএফও (লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার) জারী করে এবং ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকার’ প্রদান ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। ’৬৯-এর গণআন্দোলনে শহীদ আসাদ-মতিউর-মকবুল-রুস্তম-আলমগীর-সার্জেন্ট জহুরুল হক-ডঃ শামসুজ্জোহাসহ সকল শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে বলেছিলাম, ‘এই রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেবো না।’ শহীদের আত্মদান বৃথা যায়নি। পরবর্তী ইতিহাস তা প্রমাণ করেছে। তাদের আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় আন্দোলন আরো বেগবান হয়।

Advertisement

৯ ফেব্রুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন এবং এদিনেই গণআন্দোলন ১ দফায় রূপান্তরিত হয়। এদিন পল্টনে আমার জীবনের প্রথম জনসভা। পল্টন ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ‘শপথ দিবস’ পালিত হয়। এদিনেই সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের দশজন ছাত্রনতা লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে ‘জীবনের বিনিময়ে ১১ দফা দাবী আদায়ের শপথ গ্রহণ’ করে। জনসভা তো নয় যেন বিশাল এক গণমহাসমুদ্র! চারদিক কানায় কানায় পরিপূর্ণ। তিলধারণের ঠাঁই নেই। সেদিনের সুবিশাল ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান সংগ্রামী জনতাকে ধারণ করতে পারেনি। কাজ বন্ধ রেখে দাবী আদায়ে-কারখানার শ্রমিক, মেহনতী কৃষক, নৌকার মাঝি, জেলে, কামার-কুমার-তাঁতী, ছাত্র, অফিসের কেরানী, মধ্যবিত্ত, বুদ্ধিজীবী-সকলেই জনসভায় ছুটে এসেছে প্রাণের টানে। মানুষ ঠাঁই নিয়েছে স্টেডিয়ামের দোতলা-তিনতলার বারান্দায়, কার্নিশে। যে যেখানে পেরেছে স্থান করে নিয়েছে। গণতরঙ্গে উত্তাল বিশাল সেই জনসভায় আগত জনসাধারণ ছিল শৃঙ্খলাবদ্ধ। তাদের মুখে ছিল স্বাধিকারের দৃপ্ত স্লোগান, আর চোখ ছিল দুর্জয় সঙ্কল্পে অটল। সেই অভূতপূর্ব দৃশ্যপট এখনো আমার স্মৃতিতে অম্লান। দেশের বিভিন্নমুখী সমস্যার উল্লেখ করে, ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবী ব্যাখ্যা করে, ছাত্রদের রাজনীতি করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে, আইয়ুব খান প্রস্তাবিত গোল টেবিল বৈঠক প্রশ্নে ছাত্রসমাজের অভিমত ব্যাখ্যা করে দশজন ছাত্রনেতার প্রত্যেকের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল, ‘অবিলম্বে আইয়ুব খানের পদত্যাগ, বর্তমান শাসনতন্ত্র বাতিল, রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ১১ দফা দাবীর ভিত্তিতে দেশের জন্য একটি সম্পূর্ণ নূতন শাসনতন্ত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ ভোটে গণপরিষদ গঠন।’ সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক এবং সভার সভাপতি হিসেবে পিন-পতন নীরবতার মধ্যে একটানা ৪৫ মিনিট বক্তৃতা করি। সেদিনের বক্তৃতায় যা বলেছিলাম পরদিন ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের পাতা থেকে তার কিয়দংশ আজ পাঠকদের জন্য তুলে দিচ্ছি, “প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত আলোচনা বৈঠকের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য ছাত্র-জনতার কতিপয় দাবী আদায়ে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের আহ্বান জানাই। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের পত্রিকা ‘ইত্তেফাক’কে আমরা ছিনিয়ে এনেছি। দেশরক্ষা আইনের প্রয়োগ বন্ধ করেছি। মোজাফ্ফর, আলতাফ প্রমুখ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে কারাগার হতে মুক্ত করেছি। অপরাপর রাজবন্দীদেরকেও আমরা মুক্ত করবো। এ দেশের যে প্রিয় নেতা জন্মের পর হতে বাংলার মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছেন, সেই জনাব শেখ মুজিবুর রহমানকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। ছাত্র-জনতার দাবী-দাওয়া যদি পূরণ না করা হয়, শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর যদি মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে বাংলার ঘরে ঘরে প্রচ- বিস্ফোরণ ঘটবে। সমগ্র পাকিস্তানে জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ জন বাঙালী। অতএব, আমাদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। স্বৈরশাসক আইয়ুব খান রচিত ‘ফ্রেন্ডস নট মাস্টার’ গ্রন্থটি বাংলার কোনো ঘরে যেন না থাকে। রাজনীতির অর্থ যদি হয় শ্রমিক-কৃষকের অধিকার নস্যাৎ করা, জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করা, ছাত্রসমাজ সেই রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। কিন্তু রাজনীতির অর্থ যদি হয়, দেশের ছাত্র-কৃষক-শ্রমিকের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নূতন সমাজ গঠন করা-ছাত্রসমাজ সেই রাজনীতি অবশ্যই করবে। ছাত্রদের ১১ দফা এই দৃষ্টিতেই প্রণীত হয়েছে এবং এই ১১ দফা কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষের মুক্তি সনদ। আমরা শিল্পপতি-জমিদারের ছেলে নই, আমরা কৃষক-মজুর-মধ্যবিত্তের সন্তান। আমাদের মাতাপিতার যদি অধিক ট্যাক্স দিতে হয়, তারা যদি পাটের ন্যায্য মূল্য না পান তাহলে আমাদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছাত্রদের পড়াশোনার সাথে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা বিচ্ছিন্ন নয়। পূর্ব বাংলার মানুষ বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। জনকল্যাণের রাজনীতিই তাদের ধর্র্ম। ভবিষ্যৎ বংশধরদের মনে বিষ ছড়াবার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়ানো হচ্ছে। মিল মালিকদের হুঁশিয়ার করে বলছি, নিজেদের ভাগ্য গড়ার সঙ্গে সঙ্গে অচিরেই তারা যেন শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক দানের ব্যবস্থা করেন। যাতে ভবিষ্যতে তারা আর নিজেদের ফরিয়াদ জানাতে ছাত্রদের কাছে ধর্ণা দিতে বাধ্য না হয়। অন্যথায় দেশের ছাত্রসমাজ তাদের ক্ষমা করবে না।” বক্তৃতার শেষে সমবেত জনতার তুমুল গর্জনের সাথে বজ্রকণ্ঠে স্লোগান তুলি-‘শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করবো; শপথ নিলাম শপথ নিলাম মাগো তোমায় মুক্ত করবো।’

ভাবতে আজ কতো ভালো লাগে ঐতিহাসিক শপথ দিবসের এই স্লোগানের দু’টি লক্ষ্যই সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছি। সোনার বাংলার ৩৯ জন সোনার সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্ত করে, ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে ৬ দফা ও ১১ দফার পক্ষে গণরায় নিয়ে, ’৭১-এর মহত্তর মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষাধিক মানুষের সুমহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদার মুক্ত করে সেদিনের সেই শপথবাক্য আমরা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করেছি। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ডাক’-এর (ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন কমিটি) আহ্বানে অর্ধদিবস হরতাল পালন ও পল্টনের জনসভায় জনতার দাবীর মুখে প্রিয় নেতার ছবি বুকে ঝুলিয়ে বক্তৃতা করি। সেদিনের জনসভায় সংগ্রামী জনতাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘আপনারা কী প্রিয় নেতা শেখ মুজিব ছাড়া গোলটেবিল বৈঠক চান? আপনারা কী প্রিয় নেতা শেখ মুজিবের প্যারোলে মুক্তি চান?’ জনতা সমস্বরে বলেছিল, ‘না, চাই না।’ তখন বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তির কথা প্রচার করা হয়েছিল। এ-ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন।

’৬৯-এর ২৪ জানুয়ারি সর্বব্যাপী গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণআন্দোলন সমগ্র জাতিকে উজ্জীবিত করে ৯ ফেব্রুয়ারি এক মোহনায় শামিল করেছিল। সেদিন পল্টনের জনসভা শেষে সংগ্রামী ছাত্র-জনতার বিক্ষুব্ধ মিছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং রাজবন্দিদের মুক্তির দাবীতে স্লোগান দিতে থাকে। পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় আমরা তৎক্ষণাৎ সেখানে যাই এবং বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতাকে শান্ত করে ইকবাল হলে (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ফিরিয়ে আনি। স্বৈরশাসকের শত উস্কানী সত্ত্বেও আমরা নৈরাজ্যের পথে যাইনি। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই আন্দোলন করেছি। নিজেদের মধ্যে মত ও পথের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আমরা সেদিন ১১ দফা দাবী আদায়ের প্রশ্নে ছিলাম ঐক্যবদ্ধ। দলীয় আদর্শ নিয়ে পরস্পরের মধ্যে মতদ্বৈততা থাকলেও আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্ক ছিল চমৎকার। এক টেবিলে বসেই আহার করতাম। বিপদে-আপদে একে অপরের খবর নিতাম এবং হৃদ্যতাপূর্ণ এই সম্পর্কই ছিল আমাদের আন্দোলনের ভিত্তি। ’৬৯-এর গণআন্দোলনে আমাদের সংগ্রামী ভূমিকা, কর্মসূচি পালনে নিষ্ঠা, সততা ও জনদরদী আবেদন মানুষের হৃদয়ে এতোটাই সাড়া জাগিয়েছিল যে, বাংলার মানুষ আমাদের মাথায় তুলে নিয়েছিল। আজ যখন ইতিহাসের সেই গৌরবোজ্জ্বল ৯ ফেব্রুয়ারি ‘শপথ দিবস’-এর সোনালী দিনের দিকে ফিরে তাকাই, তখন ফেলে আসা সংগ্রামী দিনগুলোর জ্যোতির্ময় বৈপ্লবিক বহিঃপ্রকাশ,অনন্য-সাধারণ মনে হয়!

আজ সেই সোনালী অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত করলে মনে হয় কী করে এটা সম্ভব হলো? তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিচার চলছে। ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য’ অর্থাৎ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বলে যে মামলাকে অভিহিত করা হয়েছিল সেই মামলার বিচার চলছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন ফাঁসির মঞ্চে। আমরা জাগ্রত ছাত্রসমাজ শুধু ঐক্যবদ্ধ হইনি, গোটা জাতিকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমরা যখন পল্টনে মিটিং করি, তখন সচিবালয়ের সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারি অফিস বন্ধ করে এই পল্টনের জনসভায় ছুটে আসতো। সেদিনের জনসভাগুলো শুধু পল্টন ময়দানেই সীমাবদ্ধ থাকতো না, আশপাশের এলাকাসহ সমগ্র মতিঝিল, শাপলা চত্বর থাকতো কানায় কানায় পরিপূর্ণ। সেই দিনগুলোতে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা সর্বব্যাপী গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করেছিলাম; শপথ দিবসের সেই জনসমুদ্রে লক্ষ লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে মরণপণ শপথ নিয়েছিলাম; ১৪ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে রাজনৈতিক দলসমূহের জোট ‘ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন কমিটি’ তথা ‘ডাক’-এর মানুষ নুরুল আমিনকে প্রত্যাখ্যান করে মঞ্চে আমাদেরকে তুলে নিলে যে বক্তৃতা আমরা করেছিলাম, যে ম্যান্ডেট আমরা নিয়েছিলাম, সেই ম্যান্ডেট আমরা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করেছি। সেদিন ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাত্রিবেলা সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করে আবার কারফিউ জারি করা হয়, ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহাকে-যিনি নিজের বুক পেতে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার ছাত্রদের গুলি করার আগে আমার বুকে গুলি চালাতে হবে’, তখনই তাঁর বুকে প্রথমে গুলি পরে বেয়নেট চালিয়ে তাঁকে-নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। যার প্রতিবাদে সমগ্র দেশ গণজাগরণ-গণবিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এবং অমর একুশে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক দিনে পল্টন ময়দানে লক্ষ লক্ষ লোকের সামনে যখন প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তিদানের আলটিমেটাম দিয়েছিলাম, যার পরিপ্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি প্রিয় নেতাকে মুক্তি দিতে স্বৈরশাসক বাধ্য হয়েছিল। তেইশে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতিতে গণসংবর্ধনায় কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে প্রিয় নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। নয়ই ফেব্রুয়ারির পর আমাদের জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, যুব নেতা শেখ ফজলুল হক মণি, আবদুর রাজ্জাক, রাশেদ খান মেনন, ছাত্র নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীসহ যারা কারাগারে বন্দী ছিলেন, তারা সকলেই এবং পরবর্তীকালে পর্যায়ক্রমে মণি সিংহ, মতিয়া চৌধুরীসহ সকল রাজবন্দী মুক্তিলাভ করেন। আগরতলা মামলায় ৩৫ জন আসামী ছিলেন। তন্মধ্যে সার্জেন্ট জহুরুল হক শহীদ হন। আর বাকী ৩৪ জনকে নিঃশর্ত মুক্তিদানে স্বৈরশাসক বাধ্য হয়। তখন কারাগার রাজবন্দী শূন্য। নয়ই ফেব্রুয়ারি আন্দোলন আর ১১ দফার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সেদিন আন্দোলন এক দফায় চলে যায়। প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্ত করেই আমরা ঘরে ফিরেছি।

প্রতি বছর এই দিনগুলো জাতীয় জীবনে ফিরে আসে। আনন্দের বিষয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রতিটি মিটিংয়ে-আমি তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে যেতাম-যখন বক্তৃতা করতেন, সেই ’৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলন, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের কথাগুলো বলতেন। ঐতিহাসিক সাতই মার্চের বক্তৃতায়ও তিনি ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করেছেন। আমার লাইব্রেরি রুমে বসে যখন ’৬৯-এর সেই দিনগুলোর ছবি ও পত্রিকার পাতা জুড়ে প্রতিবেদনগুলো দেখি, তখন আনন্দে বুক ভরে যায় এই ভেবে যে, একদিন আমরা গৌরবোজ্জ্বল এই দিনগুলো সৃষ্টি করেছিলাম।

Advertisement

লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় সংসদ।

Advertisement

জাতীয়

খালেদা জিয়াকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে

Avatar of author

Published

on

ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আবারও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার (১ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন  বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তির পর অপেক্ষমান সাংবাদিকদের অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘কিছু জরুরি পরীক্ষার জন্য ম্যাডামকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তবে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে উনাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে।’

খালেদা জিয়ার এই ব্যক্তিগত চিকিৎসক আরও বলেন, ‘উনার কিছু জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। রাতেই মেডিকেল বোর্ড বসে চিকিৎসার পরবর্তি বিষয়গুলো ঠিক করবে।’

এর আগে, রাজধানীর গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে আনা হয়।  হাসপাতালে নেওয়ার পরই তার বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ড তাকে দেখার পর হাসপাতালে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে।

এর আগে, গত ৩০ মার্চ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে আসেন। ওই সময় চিকিৎসকরা তাকে সিসিইউতে রেখে দুইদিন চিকিৎসা দেন।

Advertisement

প্রসঙ্গত, ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া এবং দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তার এই সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বিভিন্ন ধাপে বাড়ানো হচ্ছে।

পুরো পরতিবেদনটি পড়ুন

অপরাধ

‘মিল্টন সমাদ্দারকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’

Avatar of author

Published

on

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি বেসরকারি  প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ রয়েছে।এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা  প্রধান  অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।

বুধবার (১ মে) রাতে রাজধানীতে  ডিবির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ডিএমপির ডিবি প্রধান একথা বলেন।

মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, মিল্টন সমাদ্দারকে আজই(বুধবার) আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ রয়েছে। যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে মরদেহ নিয়ে অসঙ্গতি এবং জাল মৃত্যু সনদের অভিযোগটি গুরুতর মনে হয়েছে। ডিবি কার্যালয়ে বেশ কয়েকজন অভিযোগকারী অবস্থান করছেন বলেও জানান তিনি।

হারুন বলেন, রাতে কেনো লাশ দাফন করতেন এর উত্তরে মিল্টন জানান, মানুষ তাকে প্রশ্ন করে তাই রাতে তিনি লাশ দাফন করতেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী ৯০০ দাফন করলেও ৮৩৫টি লাশের দাফনের কাগজপত্র দেখাতে পারেনি তিনি।

ডিবিপ্রধান বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দার তার বাবাকে পেটালে এলাকাবাসী তাকে এলাকা ছাড়া করে। সেখান থেকেই মূলত তার উত্থান হয়। পরে শাহবাগে এসে একটা ফার্মেসিতে চাকরি করে। সেখান থেকে ওষুধ চুরি করার কারণে বের করে দেয়। পরে মিতু হালদার নামে এক নার্সকে সে বিয়ে করে।’

Advertisement

ডিএমপির ডিবি প্রধান আরও বলেন, ‘ বিয়ে করার পর মিল্টন সমাদ্দারের স্বপ্ন এলো সে একটা ওল্ড অ্যান্ড কেয়ার স্থাপন করবে। তারপর সে তার স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা  প্রধান  অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ আরও বলেন, ‘এরপর সে রাস্তা থেকে শিশু এবং বৃদ্ধদের নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেয়। আপনার দেখেছেন সে ওই সব ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করত। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও তাকে নিয়ে নিউজ করা হয়। সে বলেছে তার অপারেশন থিয়েটার ছিল কিন্তু তার কোনো অনুমোদন ছিল না।’

 

পুরো পরতিবেদনটি পড়ুন

অপরাধ

শিশুকে ধর্ষণ-হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত র‍্যাব কর্মকর্তা

Avatar of author

Published

on

কুমিল্লায় ৯ বছর বয়সী তৃতীয় শ্রেনি পড়ুয়া এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়লেন  র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা। গেলো ২৯ এপ্রিল বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে ওই শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। অভিযুক্ত মফিজুল ইসলাম মফুকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব ১১।

বুধবার (১ মে) দুপুরে কুমিল্লা নগরীর শাকতলায় র‍্যাব-১১ এর সিপিসি-২ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন লেঃ কর্নেল পাশা।

তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে মফু জানায় প্রতিবেশি হওয়ার সুবাদে শিশুকে সে চিনত এবং স্কুল থেকে ফেরার সময় জানত । এই সুযোগে ঘটনার দিন সকালে ঘটনাস্থলের পাশের রাস্তায় ওত পেতে থাকে। শিশুটি ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এলে মফু তাকে রাস্তার পাশের ধানি জমিতে নিয়ে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে মেয়েটি চিৎকার করার চেষ্টা করলে তার মুখ ও গলা চেপে ধরে। এতে সে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। কোনো নড়াচড়া দেখতে না পেয়ে মেয়েটির কানে থাকা দুল ছিঁড়ে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে মফু।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন মেয়েটি স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়। কিন্তু বেলা ১১টা পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় স্কুলে যান তার মা। সেখানে মেয়ের কোনো হদিস না পেয়ে ফেরার পথে মেয়ের সহপাঠীর কাছে জানতে পারেন সে স্কুল শেষে বাড়ি চলে গেছে। বিকেলে বাড়ির অদূরে ধানক্ষেতে একটি মরদেহ পড়ে আছে বলে তিনি জানতে পারেন। সেখানে গিয়ে তিনি তার মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন।

এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন জানান, মফিজুল ইসলাম মফুকে ঘটনাস্থলের পাশে থাকা বাঁশঝাড়ের ভেতর থেকে দ্রুত রাস্তায় উঠে আসতে দেখা গেছে। ঘটনার পর র‍্যাবের ছায়া তদন্ত শুরু হয়। পরে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানাধীন ফেরুয়া বাজার এলাকা থেকে মফিজুল ইসলাম মফুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

Advertisement

প্রসঙ্গত, এ ঘটনায় শিশুর মা  বাদী হয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আই/এ

পুরো পরতিবেদনটি পড়ুন

জাতীয়

জাতীয়9 hours ago

খালেদা জিয়াকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আবারও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার (১ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিএনপির ভাইস...

অপরাধ12 hours ago

‘মিল্টন সমাদ্দারকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি বেসরকারি  প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ রয়েছে।এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে রিমান্ডে...

অপরাধ12 hours ago

শিশুকে ধর্ষণ-হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত র‍্যাব কর্মকর্তা

কুমিল্লায় ৯ বছর বয়সী তৃতীয় শ্রেনি পড়ুয়া এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়লেন  র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক...

অপরাধ12 hours ago

মিল্টন সমাদ্দারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি বেসরকারি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ...

অপরাধ14 hours ago

ডিবির হাতে আটক মিল্টন সমাদ্দার

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। মিরপুরে দক্ষিণ পাইকপাড়ার আশ্রম থেকে মিল্টন সমাদ্দারকে...

জাতীয়14 hours ago

সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন বৃহস্পতিবার

শুরু হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধান অনুযায়ী গেলো ১৫ এপ্রিল এ অধিবেশনের আহ্বান করেন।...

বাংলাদেশ14 hours ago

বিএনপি কখনো পরাজিত হবে না : ফখরুল

বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে না। বিএনপি হচ্ছে ফিনিক্স পাখির মতো। বিএনপি অতীতেও পরাজিত হয়নি,ভবিষ্যতেও পরাজিত হবে না। আজকে এমন একটি...

জাতীয়16 hours ago

ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ

গাম্বিয়ার রাজধানী বানজুলে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সম্মেলনের ১৫তম অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ইউরোপ সফর শেষ করেই...

দুর্ঘটনা17 hours ago

শিশুসহ নারীকে পিষে দিলো বাস

রাজধানীর মিরপুরের পূরবী সিনেমা হলের সামনের রাস্তায় বাসের ধাক্কায় কোলে থাকা শিশুসহ এক নারী নিহত হয়েছেন। নিহতরা সম্পর্কে ফুপু ও...

প্রধানমন্ত্রী-শেখ-হাসিনা প্রধানমন্ত্রী-শেখ-হাসিনা
জাতীয়20 hours ago

প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিলাসিতা কমাতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবার শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছে। বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় কারখানা বা প্রতিষ্ঠান মালিকদের বিলাসিতা...

Advertisement
দক্ষিণ আমেরিকা53 mins ago

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা কলম্বিয়ার

জাতীয়9 hours ago

খালেদা জিয়াকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে

ঢালিউড9 hours ago

‘বিয়ে নিয়ে আগে শাকিব স্টেটমেন্টস দিবে, তারপর আমি বলবো’

আন্তর্জাতিক10 hours ago

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঠেকাতে বাইডেনকে ফোন নেতানিয়াহুর

ফুটবল11 hours ago

যে কৌশলে বোকা হলো বায়ার্ন ডিফেন্ডাররা

ঢালিউড11 hours ago

জায়েদ খানের অভিনয় নিয়ে যে কথা বললেন পূজা চেরী

ফুটবল12 hours ago

রোনালদো ও ডি ব্রুইনাদের পাশে ভিনিসিয়াস

অপরাধ12 hours ago

‘মিল্টন সমাদ্দারকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’

অপরাধ12 hours ago

শিশুকে ধর্ষণ-হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত র‍্যাব কর্মকর্তা

অপরাধ12 hours ago

মিল্টন সমাদ্দারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি

উত্তর আমেরিকা1 week ago

সামনে ‘যুদ্ধবিরোধী’ কুমির, আটকে গেলো মার্কিন বিমান (ভিডিও)

ব্যারিস্টার-সুমন
আইন-বিচার2 weeks ago

বেনজীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যা বললেন ব্যারিস্টার সুমন

প্রধানমন্ত্রী-শেখ-হাসিনা
জাতীয়1 month ago

গায়ের চাদর না পুড়িয়ে বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ান: প্রধানমন্ত্রী

ফুটবল1 month ago

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ব্রাজিল কোচ জানালেন এটা মাত্র শুরু

টুকিটাকি1 month ago

জিলাপির প্যাঁচে লুকিয়ে আছে যে রহস্য!

অর্থনীতি2 months ago

বাজারে লেবুর সরবরাহ বেশি, তবুও দাম চড়া

রেশমা
বাংলাদেশ2 months ago

রাজধানীতে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার কিশোরীর ঠিকানা খুঁজছে পুলিশ

হলিউড2 months ago

নীল দুনিয়ায় অভিনেত্রী সোফিয়ার রহস্যজনক মৃত্যু

ফুটবল2 months ago

জামালকে ঠিকঠাক বেতন দেয়নি আর্জেন্টাইন ক্লাব

টুকিটাকি2 months ago

রণবীরের ‘অ্যানিম্যাল’ দেখে শখ, মাইনাস ২৫ ডিগ্রিতে বসলো বিয়ের আসর

সর্বাধিক পঠিত