ফারাওয়ের অভিশাপে নিজে থেকেই ঘুরে যায় যে মূর্তি

ফারাওয়ের অভিশাপ বা মমির অভিশাপ! এ কথাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে শরীর যেন কিছুটা শিউরে উঠে, মনে পরে যায় একাধিক বিস্ময়কর ঘটনা। এ এমন এক অভিশাপ, যা নাকি ফারাওয়ের মমির পিরামিডে ঢুকলেই গ্রাস করে নেয়। মূল্যবান সম্পদ লুটের আশায় পিরামিডে ঢোকা সাধারণ চোর বা ইতিহাস সন্ধানের তাড়নায় প্রবেশ করা প্রত্নতাত্ত্বিক— এ অভিশাপের হাত থেকে রেহাই পান না কেউই।

দাবি করা হয়, এ পিরামিডগুলিতে ঢুকলেই কোনও না কোন কারণে প্রবেশকারীর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলেই বেরিয়ে আসে এরকম একাধিক ঘটনার বিবরণ ।

মিশরের মূর্তির এমনই রহস্য এখনও রয়েছে। ম্যানচেস্টার জাদুঘরের এক মিশরীয় মূর্তি, যা দীর্ঘদিন ধরে পর্যটকদের টানছে। হাজার চেষ্টা করেও ৮০ বছর ধরে জাদুঘরে-থাকা এ মূর্তির রহস্য সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

১৮০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের এ মূর্তি একটি মমির সমাধির ধ্বংসাবশেষে পাওয়া গিয়েছিল। পরে এ মূর্তির জায়গা হয় ম্যানচেস্টারের জাদুঘরে। কালো পাথর কেটে তৈরি এ মূর্তির নাম নেব-সেনু।

২০১৩ সালে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ হঠাৎই এক দিন লক্ষ করেন, চার হাজার বছর পুরনো এ মূর্তি প্রতিদিনই ১৮০ ডিগ্রি করে ঘুরে যাচ্ছে। পর পর কিছুদিন একই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন জাদুঘরের কর্মীরা। দেখেন, প্রতিদিন নিজে থেকেই পিছন দিকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে রহস্যময় মূর্তিটি।

তবে রাতে নয়, দিনের বেলাতেই দিক পরিবর্তন করে কারসাজি করতে দেখা যাচ্ছিল নেব-সেনু মূর্তিকে। এর পরই আতঙ্ক ছড়ায় জাদুঘর কর্মীদের মধ্যে। আতঙ্কে মূর্তির ধারেকাছে ঘেষতে চান না কেউ।

প্রাথমিক ভাবে এ ঘটনাকে ফারাওয়ের অভিশাপ বলেই বর্ণনা করতে শুরু করেন অনেকে।

ওই জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক ক্যাম্পবেল প্রাইসের জানান, এক মাত্র তার কাছেই জাদুঘরের চাবি থাকে। তাই অন্য কোন ব্যক্তির জাদুঘরে ঢুকে মূর্তি পিছনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মূর্তির সামনে ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরের দিন ক্যামেরাতে যা ধরা পড়ে, তা দেখে চমকে উঠেন অনেকেই।

ভিডিওতে দেখা যায়, খুব ধীরে ধীরে নিজে থেকেই ঘুরে যাচ্ছে ইঞ্চি দশেকের ওই রহস্যময় মূর্তি।

প্রাইসের দাবি, অতীতে মূর্তির পায়ে বিভিন্ন রকমের নৈবেদ্য রাখা হত। মূর্তির পিছনে হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে ‘রুটি, মদ এবং গবাদি পশুর মাংস’-এর কথা লেখা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রাইস আরও দাবি করেন, মূর্তিটির নিজে থেকেই ঘুরে যাওয়ার পিছনে কোনও আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে।

প্রাচীনকালে মিশরের ব্যক্তিরা বিশ্বাস করতেন, কোনও মমি ধ্বংস হয়ে গেলে তার আত্মাটি ধরে রাখার জন্য এ রকম ছোট ছোট বিকল্প মূর্তি রাখা হত। নেব-সেনু সেরকমই কোনও মূর্তি বলে মনে করেন প্রাইস।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞ এ ঘটনার অন্যরকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, পর্যটকেরা এ মূর্তির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মৃদু কম্পনের সৃষ্টি হয়। সেই কম্পনেই একটু একটু করে এ মূর্তি মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রায়ান কক্সও এ যুক্তিই দিয়েছেন। ব্রায়ান মনে করেন, কম্পনের ফলে মূর্তির মসৃণ পাথর এবং কাচের মেঝেয় ঘর্ষণ তৈরি হয়। মুখ ঘুরে যায় এ মূর্তির।

তবে এ তত্ত্বের বিরোধিতা করে প্রাইসের পাল্টা প্রশ্ন, যদি কম্পনের কারণেই মূর্তি ঘোরে, তা হলে হঠাৎ করে ২০১৩ সাল থেকে এ ঘটনা ঘটতে শুরু হবে কেন? পাশাপাশি তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, কোনও ভাবে না বেঁকে কী করে অর্ধবৃত্তাকারে এ মূর্তিটি ঘুরে যায়?

কেউই প্রাইসের কোনও প্রশ্নকেই যুক্তি দিয়ে খন্ডন করতে পারেননি। এখনও নেব-সেনুর এ রহস্য রহস্যই রয়ে গিয়েছে!

অনন্যা চৈতী

Recommended For You