আন্তর্জাতিক
কেনিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, নিহত ৩৯
সরকারের করনীতির প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায়। রাজধানী নাইরোবিতে গেলো এক সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৬১ জন।
এছাড়া এখনও নিখোঁজ আছেন কমপক্ষে ৩২ জন এবং গেলো মঙ্গলবার থেকে এ পর্যন্ত আন্দোলন ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬২৭ জনকে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) কেনিয়ার মানবাধিকার সংস্থা দ্য কেনিয়া ন্যাশনাল কমিশন অন হিউম্যান রাইটস (কেএনসিএইচআর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে এ তথ্য নিশ্চত করে বলেছে, দেশটির তরুণ প্রজন্ম আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
গেলো মঙ্গলবার প্রায় সব ধরনের পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধিসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস হয় কেনিয়ার পার্লামেন্টে। প্রস্তাবটি পাসের সঙ্গে সঙ্গেই পার্লামেন্ট চত্বরসহ পুরো নাইরোবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ। আন্দোলনকারীরা পার্লামেন্ট চত্বরের একটি পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন, বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি শুরু করে পুলিশ।
আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর পদত্যাগ, যিনি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছেন। সেই নির্বাচনের পর থেকেই কেনিয়ায় দিন দিন রাজনৈতিক বিভক্তি তীব্র হয়ে উঠেছে।
রোববার (৩০ জুন) কেনিয়ার সরকারি টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে উইলিয়াম রুটো বলেছেন, আন্দোলনে এ পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। তবে তাদের মৃত্যুর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়ী নয়, নিজেদের মধ্যে সংঘাত ও বিশৃঙ্খলার কারণে নিহত হয়েছেন তারা।
ভাষণে রুটো আরও বলেছেন, আপাতত নিকট ভবিষ্যতে পদত্যাগ করার কোনো প্রকার ইচ্ছা বা পরিকল্পনা তার নেই।
কেএনসিএইচআর জানিয়েছে, রোববারের ভাষণ সম্প্রচারের পর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা এখন ভাঙচুরের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগও শুরু করেছেন।
সেই সঙ্গে দেশজুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার ডাকও দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। কেনিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ভরে উঠেছে ‘সব জায়গা দখল করো’, ‘রুটোর বিদায় চাই’, ‘বাজেট দুর্নীতিবাজদের বাতিল করো’ প্রভৃতি হ্যাশট্যাগে।
আফ্রিকা মহাদেশের হাতে গোণা যে কয়েকটি দেশ রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল, সেসবের মধ্যে কেনিয়া ছিল অগ্রসারিতে; কিন্তু সরকারবিরোধী আন্দোলন ও তার তীব্রতা সেই স্থিতিশীলতাকে অনেকখানি নড়বড়ে করে দিয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
কেএস/
আন্তর্জাতিক
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘পেজেশকিয়ান ম্যাজিক’, সংস্কারের পথে ইরান?
যুদ্ধবিরোধী মনোভাব পরিহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার প্রতিশ্রতি দিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ে নামেন তিনি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ইরানে একটি বাস্তবসম্মত পররাষ্ট্রনীতি, রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার। তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন ইরানের সংস্কারপন্থীরা। তাইতো জনগণের সমর্থন পেয়েই নির্বাচনে শেষ হাসি হাসলেন মাসুদ পেজেকশিয়ান।
মাসুদ পেজেশকিয়ান বরাবরই সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে গত দুই বছর ধরে হিজাবসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে তার আওয়াজ জোরালো হতে শুরু করে। কট্টরপন্থীদের ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণার মাঝে নারীর অধিকার, অধিক সামাজিক স্বাধীনতা, পশ্চিমের সঙ্গে বৈরিতায় সতর্কতা ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন মধ্যপন্থী এই নেতা।
শুক্রবারের নির্বাচনে কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলির চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন ইরানের বিশিষ্ট এই হার্ট সার্জন। পেজেশকিয়ান পেয়েছেন ১ কোটি ৬৩ লাখ ভোট পেয়েছেন। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী জালিলির বাক্সে পড়েছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ভোট। গেলো ২৮ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চার প্রার্থীর কেউ এককভাবে ৫০ ভাগের বেশি ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন রান অফে গড়ায়। নির্বাচনে সাবেক দুই সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি ও হাসান রুহানিরও সমর্থন পেয়েছেন তিনি।
বছর কয়েক আগেও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুগত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে পেজেশকিয়ান তাঁর কড়া সমালোচক বনে যান। পেজেশকিয়ান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় সংস্কারপন্থিরা আশার আলো দেখছেন। যুদ্ধ নয় শান্তি, পশ্চিমা অবরোধ আর নয়,সবার সঙ্গে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে-এমন স্বপ্ন দেখছেন দেশটির সংস্কারপন্থিরা।
৬৯ বছর বয়সী এই রাজনীতিক একাধিকবার ইরানের সমাজ ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। সোচ্চার হয়েছেন ইরানের নৈতিকতা পুলিশের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। ইরান থেকে হিজাব আইন প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি ছিলো তার নির্বাচনী প্রচারণায়। এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকের আশ্বাসও দিয়েছিলেন দেশটির সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তাই সংস্কারপন্থীদের আশা অনেক। তাদের এই আশা পূরণ করতে পারবেন তো মাসুদ পেজেশকিয়ান? কী ভাবছেন বিশ্লেষকেরা।? বিশ্লেষকদের অনেকেই ধারণা করছেন, ইরানের অর্থনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে এবং পশ্চিমের সাথে উত্তেজনা কমানোর জন্য পুনরায় পরমাণু চুক্তি পুনর্বিবেচনা করবেন নতুন এই নেতা।
বিশ্লেষকদের অনেকেই আবার মনে করছেন,ইরানে সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আসলেও ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে উল্লেখযোগ্য সংস্কার বা পরিবর্তন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাদের মতে,মাসুদ পেজেশকিয়ান নির্বাচনে জিতেছেন ঠিকই, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি দেশের দিক পরিবর্তন করার ক্ষমতা পাবেন।
বিশ্লেষকদের এমন ধারণার পেছনে শক্তিশালী যুক্তিও রয়েছে। কারণ ১৯৮৯ সাল থেকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ইরানের যেকোন বিষয়ে মূলত সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এছাড়া তিনিই দেশটির সামরিক বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ। দেশটির সরকারি পুলিশ ও নীতি পুলিশের কর্তৃত্বও খামেনির হাতে।
শুধু তাই নয়, ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে থাকা ইসলামিক রেভল্যুশন গার্ড কর্পস-আইআরজিসি’র নিয়ন্ত্রণও আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির হাতে। এছাড়া, সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিনে ইরানের প্রক্সিগ্রুপগুলোও নিয়ন্ত্রণ করেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। এমনকি, পার্লামেন্টে কোনো আইন পাশ হলে সেই আইন অনুমোদন বা বাতিল ঘোষণার ক্ষমতাও রাখেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার ঘোষণাও তার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট দেশটির শীর্ষ নির্বাচিত কর্মকর্তা। সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার পরই তার অবস্থান। সরকারের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব তার ওপর। ইরানের অভ্যন্তরীণ নীতি ও পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকলেও তার ক্ষমতা বিশেষ করে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে অনেক সীমিত। তারা মনে করছেন, সংস্কার আনতে হলে ইরানের পার্লামেন্টে আধিপত্য বিস্তারকারী অতি-রক্ষণশীল শক্তির মুখোমুখি হতে হবে মাসুদ পেজেশকিয়ানকে।
এমআর//
আন্তর্জাতিক
দারুন সুযোগ, বিদেশিদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব
আবারও সংস্কার আনলেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এবার সৌদি আরবে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন তিনি।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার(৪ জুলাই) বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, গবেষক, উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের এক প্রতিবেদন এই তথ্য জানিয়েছে ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নাগরিকত্ব প্রদান সৌদির রাজকীয় আদেশের অংশ হিসাবে ডিক্রি জারি করা হয়েছিল। নাগরিকত্ব পাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, গবেষক, উদ্ভাবক, উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন পেশার বেশ কয়েকজন। তবে, ঠিক কতজনকে এই নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সৃজনশীল ব্যক্তিদের সৌদি আরবে আকৃষ্ট করতে তিনি এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও সিঙ্গাপুর থেকে আসা নানা শ্রেনির মানষকে সৌদি আরবের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি সৌদির নাগরিকত্ব পেয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি। ২০২১ সালে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান প্রথমবার বিদেশিদের এমন নাগরিকত্ব অনুমোদন দেওয়ার তিন বছর পর তার বাস্তবায়ন শুরু হলো।
সৌদি যুবরাজের এই পদক্ষেপের ফলে ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে আরও একধাপ এগিয়ে গেল সৌদি আরব। ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম প্রতিভাবান ও দক্ষ লোকদের সন্ধান করছে সৌদি সরকার।
পেট্রো ডলার থেকে নির্ভরতা কমিয়ে সৌদি যুবরাজ এখন সৌদি অরবকে ভিন্ন ভাবে ফুলে ফেঁপে উঠাতে চাইছেন। ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে চাইছেন সৌদির অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও খেলাধুলা ক্ষেত্রেও। তাইতো একের পর এক কার্যকরি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।ৎ
প্রসঙ্গত, বেশ কয়েক বছর ধরে বদলে যাওয়া এক সৌদি আরব দেখছে বিশ্ববাসী। পেট্রো ডলার থেকে নির্ভরতা কমিয়ে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নতুন আয়ের উৎস খুঁজে বের করার জন্য বর্তমান প্রশাসন হন্যে হয়ে বিভিন্ন বিষয় চিন্তা করছে। এতে মূল নেতৃত্ব দিচ্ছেন সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পরের বছর থেকেই সৌদি আরবে সংস্কারকাজ শুরু করেন সৌদি যুবরাজ। অর্থনৈতিক বিষয় ছাড়াও অনেক সামাজিক সংস্কারে হাত দেন তিনি। যেমন- নারীদের আরো ‘স্বাধীনতা’ এবং এর আওতায় গাড়ি চালানো, ব্যাংকে চাকরি, স্টেডিয়ামে খেলা ও হলে সিনেমা দেখা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কাজের সুযোগ করে দেয়া প্রভৃতি, যুবকদের চাকরির ব্যবস্থা ও নতুন ব্যবসায় উদ্বুদ্ধকরণ; এসব কাজ করায় অনেকেই তাকে একজন সংস্কারক মনে করছেন।
সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার ৭০ ভাগই যুবসমাজ। এর অর্ধেকের কিছু কম হলো নারী। সৌদি যুবরা বর্তমানে আধুনিক জীবনযাপনে উৎসাহী।এই যুবসমাজকে টার্গেট করেই সৌদি যুবরাজ তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এগিয়ে নিচ্ছেন।
এমআর//
আন্তর্জাতিক
হার্ট সার্জন থেকে ইরানের প্রেসিডেন্ট, কে এই মাসুদ পেজেশকিয়ান?
ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ছিলেন সম্মুখ যোদ্ধা। অস্ত্র চালানোর পাশাপাশি নিজেদের আহত সেনাদের চিকিৎসা সেবাও দিয়েছেন। পরবর্তীতে মেডিক্যাল কলেজে ফিজিওলজি বিষয়ে শিক্ষকতা, ইরান ইউনিভার্সিটি থেকে কার্ডিয়াক সার্জারির শিক্ষালাভ এবং পরে হার্ট সার্জারি স্পেশালিস্ট। ছিলেন তাবরিজ ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস এর প্রেসিডেন্টও। সদ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘ভেল্কি’ দেখিয়ে কুপোকাত করেছেন ইরানের কট্টরপন্থীদের। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার ছেড়ে এখন বসছেন ইরানের মসনদে। তিনি আর কেউ নন, সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি ও হাসান রুহানির উত্তরসূরি হিসেবে পরিচিত ডা. মাসুদ পেজেশকিয়ান।
ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মাহাবাদে ১৯৫৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্ম মাসুদের। তার বাবা একজন আজারবাইজানি বা আজেরি এবং মা কুর্দিশ। মাসুদ আজেরি ভাষায় কথা বলেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে ইরানের বিশাল সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর জন্য কাজ করেছেন। ১৯৯৪ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় ডাক্তার স্ত্রী ফাতেমা মাজেদি ও এক কন্যাকে হারান মাসুদ পেজেশকিয়ান। এরপর আর বিয়ের পিঁড়িতে বসা হয়নি। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে মানুষ করেছেন ইরানের এই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।
১৯৯৭ সালে সংস্কারবাদী সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি সরকারের সময় উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত চার বছর সামলিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০০৬ সালে তাবরিজ থেকে আইনপ্রণেতা হিসেবে নির্বাচিত হন মাসুদ। পাঁচবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।ইরানের পার্লামেন্টে প্রথম ডেপুটি স্পিকার হিসেবেও ছিলেন চারবছর। ২০১১ এবং ২০২১ সালেও প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে নাম লিখিয়েছিলেন মাসুদ পেজেশকিয়ান।
‘একগুঁয়ে’ স্বভাবের জন্য পরিচিত মাসুদ পেজেশকিয়ান। বছর কয়েক আগেও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুগত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে হয়ে যান তার কড়া সমালোচক। ইরানের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং দুর্নীতির প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন অনেকবার। সবশেষ ২০২২ সালে পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর বিষয়ে ইরান সরকারের ভূমিকাকে প্রকাশ্যে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
প্রথম দিকে পশ্চিমাদের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। ২০১৯ সালে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার জন্য ইরানি রক্ষীদের ব্যাপক প্রশংসা করেন। ওইসময় ডা. মাসুদ বলেছিলেন, ‘ড্রোন ভূপাতিত করার মাধ্যমে আমেরিকানদের মুখে জোরালো ঘুষি দেওয়া হলো। জানিয়ে দেওয়া হলো ইরান তাদের কাছে কখনও আত্মসমর্পণ করবে না।’
তবে বর্তমানে তার মুখেই আমেরিকার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা শোনা যায়। নির্বাচনের আগে কট্টরপন্থীদের ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণার মাঝে নারীর অধিকার, অধিক সামাজিক স্বাধীনতা, পশ্চিমের সঙ্গে বৈরিতায় সতর্কতা ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন মধ্যপন্থী এই নেতা।
গত ১৯ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি। সেই থেকে এতদিন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ চালাচ্ছিলেন মহম্মদ মোখবর। নির্বাচনে জয়ী হয়ে সেই দায়িত্ব পেতে চলেছেন মাসুদ। তিনি এখন রক্ষণশীলতার বেড়াজাল কাটিয়ে মুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখা লাখো ইরানি নাগরিকের আশা-ভরসা। কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলিকে হারানোয় তাকে নিয়ে বাড়ছে প্রত্যাশাও। মাসুদ সেই স্বপ্নপূরণ করতে পারেন কি না, সেদিকে চোখ রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেরও।
এমআর//
- ঢাকা5 days ago
গোপালগঞ্জে শিক্ষকের মাথায় পচা ডিম ভাঙ্গলো ছাত্ররা!
- অপরাধ7 days ago
‘হত্যার উদ্দেশ্যে মাঠে টিম’, থানায় জিডি ব্যারিস্টার সুমনের
- ঢাকা7 days ago
স্বামীর মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে স্ত্রীর মৃত্যু
- ফুটবল6 days ago
কোয়ার্টার ফাইনালের প্রতিপক্ষ পেলো আর্জেন্টিনা
- দুর্ঘটনা6 days ago
ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
- রংপুর6 days ago
নিজ মেয়েকে ধর্ষণ, বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ড
- ব্যাংক6 days ago
সোমবার বন্ধ থাকবে ব্যাংকের সব ধরনের লেনদেন
- পরামর্শ7 days ago
প্রতিদিন পর্যাপ্ত না ঘুমোলে যে বড় ক্ষতি হতে পারে আপনারও