মিয়ানমারে জান্তার গুলিতে নিহত বাবার কোলে থাকা শিশু

এবার মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে বাবার কোলে থাকা সাত বছরের এক শিশু। মঙ্গলবার দেশটির দ্বিতীয় প্রধান শহর মান্দালয়ের শান মিয়া থাজি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, নিহত মেয়েশিশুটির নাম খিন মিও শিট। সে মান্দালয় শহরে থাকত এবং নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে।

মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম মিয়ানমার নাউয়ের উদ্বৃতি দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে সাত বছর বয়সী খিন মিয়ো চিট। শিশুটির বাবাকে গুলি করেছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেসময় শিশুটি ঘরের ভেতরে বাবার কোলে বসে ছিল। গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে খিন মিও শিটের শরীরে লাগে। গুলি লাগার পর তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে প্রতিবেশী এবং দাতব্য সংস্থার সেবাদানকারী কর্মীরা। দ্রুত শিশুটিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

খিন মিয়ো চিটের পরিবার জানিয়েছে, মিয়ানমারে সামরিক সরকারবিরোধী আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে খিনের ১৯ বছর বয়সি বড় ভাইকে ধরে নিয়ে গেছে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে এ ঘটনায় সামরিকবাহিনী পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

এক বিবৃতিতে সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, মিয়ানমারে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ পরিস্থিতিতে প্রতিদিনই শিশুরা নিহত হচ্ছে। এমনকি বাড়ি, যেখানে শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হওয়ার কথা সেখানেও শঙ্কামুক্ত নয় তারা। এই ঘটনাগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে মানুষের জীবনের কোনো দাম নেই।

২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে গেল এক ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। বন্দি করা হয় দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি এবং তার দল লীগ ফর ডেমোক্রেসির কয়েকজন সদস্যকে। এদের মধ্যে সু চির মন্ত্রিসভার কয়েকজন মন্ত্রী, প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্য রয়েছে।

সেনা অভুত্থানের পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে মিয়ানমারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। টানা বিক্ষোভ সমাবেশ-মিছিল ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় রাজধানী নেইপিদো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ সারা দেশে।

প্রাথমিক পর্যায়ে বিক্ষোভ দমনে রাবার বুলেট, জলকামান ও লাঠিচার্জ ব্যবহার করলেও ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয় জান্তা সরকার।

বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে ২৬১ জন। শিশু অধিকার ও নিরাপত্তাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক বা শিশু রয়েছে।

 

এসএন

Recommended For You