সাদুল্লাপুর বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন দ্বন্দ্ব

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কান্তনগর বিনয় ভূষণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে গোপনে ম্যানেজি কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু হোসেন মন্ডলের নিজ স্বার্থের জন্য গোপনে কমিটি গঠন করেন। এর পর থেকে এলাকাবাসী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। সৃষ্ট এই দ্বন্দ্বের কারনে বিদ্যালয়ে পাঠদানের বিঘ্ন ঘটছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

কান্তনগর বিনয় ভূষণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নানা ক্ষুব্ধতা। গোপনে ভূয়া কমিটি গঠন বিরোধ তুঙ্গে ওঠায় পড়াশুনার মান নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রবিধানমালার বিধি-বিধান তোয়াক্কা না করে ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু হোসেন মন্ডল সম্পন্ন গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে  বোর্ডের অনুমোদন নেয়। এ কমিটিতে তার পছন্দের ব্যক্তি রুবেল ইসলামকে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। এরই মধ্যে গোপন কমিটি গঠনের বিষয়টি ফাঁস হলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এলাকাবাসীসহ অবিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এই কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি নিয়ে চলে নানা আন্দোলন। এমতাবস্থায় অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনিয়মিত পাঠদান ও পাঠগ্রহণ করতে থাকে। এছাড়াও বেশ কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছেন।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের আজীবন দাতা সদস্য রওশন আলম ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের জন্য দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক উমর ফারুক গেলো বছরের ১০ আগস্ট সরেজমিনে তদন্ত করেন। এসময় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক-কর্মচারী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তী ওই পরিদর্শন দ্বারা গত বছরের ৩ অক্টোবর  ওই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কমিটির সভাপতি রুবেল ইসলাম সরকার বাদী হয়ে মহামান্য হাইকোর্টে পিটিশন মামলা দায়ের করেন। এ মামলাটি পেন্ডিং থাকাবস্থা তা গোপন করে রুবেলে ইসলাম সরকারের ভাই আব্দুর রহিম সরকার একই বিষয়ে উপরোক্ত তারিখের আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন মামলা দায়ের করেন এবং গেলো বছরের ২০ ডিসেম্বর আদালতের দ্বৈত বেঞ্চ হতে ভেঙে দেওয়া কমিটি স্থগিতাদেশ দেয়।

এদিকে এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে রওশন আলম সরকার বাদী হয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলা দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজে এই মামলাটি ২৯ জানুয়ারি উভয় পক্ষের উপস্থিতি শুনানী অন্তে মামলার বিষয় বস্তুর উপর স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ প্রদান করেন। অর্থাৎ ম্যানেজিং কমিটি ভেঙে দেওয়ার বিগত ৩ অক্টোবরের আদেশের কার্যকারীতায় স্থিতিবস্থা বজায় থাকবে।

এ বিষয়ে অবিভাবক আসাদুজ্জামান খন্দকার  তুহিন ও শিক্ষার্থী নয়ন কুমার বকসী বলেন, প্রধান শিক্ষকের কারসাজির এই দ্বন্দ্বে লেখাপড়া ভেস্তে যেতে বসেছে। এটি নিরসন করতে গোপনে গঠন করা কমিটি ভেঙে দিয়ে বিধি-বিধান মোতাবেক কমিটি নতুন গঠন করা হোক।

বিদ্যালয়ের আজীবন দাতা সদস্য রওশন আলম জানান, প্রধান শিক্ষক কর্তৃক গোপনে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি সম্পন্ন অনিয়মতান্ত্রিক।বর্তমানে বিদ্যালয়টির নতুন কমিটি গঠন করাসহ শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি করছে অভিভাক ও এলাকাবাসী।

বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবু হোসেন মন্ডল শিক্ষক বলেন, বিধি-বিধান অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোথাও গোপন রাখা হয়নি।

কমিটি গঠনের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার ও সাদুল্লাপুর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর এএকেএম আজিজুল বারী বলেন, গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষক কর্তৃক একটি চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রাপ্ত হয়ে পদ্ধতিগত ধাপ অনুসরণ করে নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

Recommended For You

About the Author: মেঘ হাসান

As a journalist, I am entitled to find out the truth behind every incident.

Leave a Reply