আর্কাইভ থেকে করোনা ভাইরাস

চীনে ডেলটার প্রভাবে কমছে ভোগব্যয়, ঝুঁকিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি

সাধারণত গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে পর্যটন ও ভোগব্যয় বেড়ে যায় চীনে। এর ফলে আরও গতিশীল হয় দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকায়। তবে ২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে ছুটির এ সময়টায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন ও অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি ভোগব্যয়।

মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের উদ্বৃতি দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, অতি সম্প্রতি করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেলটার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে চীনের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কারণে এই ভোক্তা ব্যয় আরও কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।

২০১৯ সালের শেষের দিকে ভয়াবহ রকমভাবে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে চীনে। ভাইরাসটির কারণে গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর্যটনের ভরা মৌসুমে দেশটির পর্যটন ও ভোগব্যয়ে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটেছে। অর্থনৈতিক ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখছে বিশ্লেষকরা।

মাত্র দুই সপ্তাহে চীনের ৩২টি প্রদেশের প্রায় অর্ধেকের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে ডেলটা। এ কারণে তড়িঘড়ি করে সব পর্যটন কেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বাতিল করেছে সব ধরনের ফ্লাইটও। অন্তত ৪৬টি শহরের বাসিন্দাকে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া সম্প্রতি বন্যা হয়েছে চীনের কিছু অঞ্চলে। এসব কারণে সৃষ্ট ক্ষতি এবং ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নেওয়া সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর কারণে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে খুচরা খাতে ব্যয় ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস নামিয়ে নিয়েছে চীনের অনেক প্রতিষ্ঠান।

তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে এনেছে জাপানের ফিন্যান্সিয়াল হোল্ডিং কোম্পানি নমুরা হোল্ডিংস লিমিটেড। বছরের সবশেষ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি আরও কমে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে ধারণা করছে সংস্থাটি। আর, পুরো বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৮ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে নমুরা।

চীনে নিযুক্ত নমুরার প্রধান অর্থনীতিবিদ লু টিং বলেন, সরকারের গৃহীত কঠোর পদক্ষেপের কারণে ২০২০ সালের বসন্ত থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও লকডাউন চলছে চীনে। তার ওপর সাম্প্রতিক ঝড়বৃষ্টি ও বন্যার প্রভাবেও তৃতীয় প্রান্তিকের জন্য আমাদের দেওয়া জিডিপি প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমবে।

যদিও গেল বছরগুলোতে অনেকবার সংক্রামক ভাইরাসের সম্মুখীন হয়েছে চীন। কিন্তু সেসব সংক্রমণ তুলনামূলক অনেক কম পরিসরে ছিল এবং তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। বর্তমান সংক্রমণের কারণে চীনের ঝ্যাংজিয়াজি অঞ্চলসহ হুনান, জিয়াংসু ও শানজি প্রদেশের বিভিন্ন শহরের পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে। ফ্লাইটে আসন সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো।

করোনার বর্তমান সংক্রমণ প্রভাব ফেলেছে চীনের খুচরা খাতের বিক্রি এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। এছাড়া রপ্তানিতে ধীরগতি এবং অবকাঠামো খাতেও বিনিয়োগ কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চায়না রেঁনেসা সিকিউরিটিজ হংকংয়ের ম্যাক্রো ও স্ট্র্যাটেজি রিসার্চের প্রধান ব্রুস প্যাং বলেন, এরই মধ্যে কমতে শুরু করেছে বাসিন্দাদের আয়ের প্রবৃদ্ধি। এর ওপর তারা যদি সংক্রমণের কারণে নিজেদের অর্থ খরচ করতে না পারে তা অবশ্যই দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভোগব্যয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে।

ব্লুমবার্গের অর্থনীতিবিদদের হিসেব অনুযায়ী, জুলাই ও আগস্টে খুচরা বিক্রি মাস হিসেবে প্রায় দশমিক ২ শতাংশ কমে যাওয়ার ধারণা করা হচ্ছে। পুরো বছর মিলিয়ে আগের প্রাক্কলন অনুযায়ী, খুচরা বিক্রিতে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে না বলে জানিয়েছে তারা।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন