রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দিচ্ছে জাতিসংঘ
আগামী মাস থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্য সহায়তা বাবদ মাথাপিছু বরাদ্দ ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করা হবে।
তহবিল ঘাটতির কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে জাতিসংঘের সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম-ডব্লিউএফপি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সহায়তা কমিয়ে দেওয়া হলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই শরণার্থী শিবিরে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সঙ্কট এবং পুষ্টিহীনতা আরও বাড়বে।
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার, টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছেন।
ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, এতদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্য সহায়তা বাবদ মাথাপিছু ১২ ডলারের যে বরাদ্দ তারা দিয়ে আসছিল, আগামী মাস থেকে তা ১৭ শতাংশ কমিয়ে ১০ ডলার করা হবে। মহামারী এবং বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির কারণে দাতারা বাজেট কমিয়ে দেওয়ায় তারা এ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠীর কাছে সাড়ে ১২ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল চেয়ে ডব্লিউএফপি বলেছে, ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দাদের এক তৃতীয়াংশই শিশু, পুষ্টির অভাবে যাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, বেশিরভাগেরই ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম। এই অবস্থায় তাদের খাদ্যের জন্য জরুরি তহবিল না পেলে তার প্রভাব হবে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।
বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন এক বিবৃতিতে বলেন, “আন্তর্জাতিক দাতারা যদি ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশু এবং তাদের পরিবারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা এই জনগোষ্ঠীর প্রতি প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ।
জাতিসংঘের দুই বিশেষ দূত মাইকেল ফাখরি ও টম অ্যান্ড্রুজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার তহবিলে ঘাটতি হলে তার ফল হবে বিপর্যয়কর। তাদের ভাষায়, রোজার মাসের আগে এভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানদের রেশন কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
কক্সবাজারে বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলছেন, এই পর্যায়ে এসে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হলে শরণার্থীরা কাজের খোঁজে আরও মরিয়া হয়ে উঠবে। তাতে তাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
আইনগতভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের কাজের সুযোগ নেই। ক্যাম্পের নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই তাদের থাকার কথা।
কিন্তু ক্যাম্প থেকে পালিয়ে অনেকেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে চেপে সাগরপথে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার মত দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাতে অনেকের সলিল সমাধি হচ্ছে।
ক্যাম্পে শিক্ষা ও কাজের সুযোগ না থাকায় এবং মিয়ানমারে মাতৃভূমিতে ফেরা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গারা মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ৬৯ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে একটি নৌকা বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে পৌঁছেছে।
ডব্লিউএফপির এশিয়া ও প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক জনি আইলিয়েফ বলেন, “যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এই জনগোষ্ঠীকে যেতে হয়েছে, যেখানে খুব বেশি সুযোগও তাদের সামনে নেই, সেখানে এভাবে তাদের রেশন কমিয়ে দেওয়া আমার কাছে অচিন্ত্যনীয়।
কক্সবাজারের একটি ক্যাম্পের বাসিন্দা ১৮ বছর বয়সী আরিফ উল্লাহ বলেন, যে রেশন তাদের আগে দেওয়া হত, তাতে তাদে কোনোক্রমে চলত।
“এখন যদি আরও কমিয়ে দেয়, আমরা তাহলে বাঁচব কীভাবে?”