আর্কাইভ থেকে ঢালিউড

‘পূজা ছাড়া নতুন পোশাক জুটতো না’

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসব ঘিরে অন্যদের মতোই খুশির জোয়ার বইছে ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর পরিবারে। ছোটবেলা থেকে উৎসবের দিনগুলো মা-বাবার সঙ্গে কেটেছে তার। কিন্তু এবারের পূজা অনেকটাই ভিন্ন। কারণ, এবারই প্রথমবারের মতো বাবাকে ছাড়া পূজার দিন কাটছে এই অভিনেতার।

রোববার (২২ অক্টোবর) সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে পূজা নিয়ে ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমাদের গ্রামে এই দুর্গাপূজার আমেজ শুরু হতো এক মাস আগে থেকেই। পাল মশাইয়ের প্রতিমা বানানো থেকে শুরু করে দেবীর বিসর্জন পর্যন্ত কি যে এক আনন্দোৎসব। সারাবছর ধরে অপেক্ষা করতাম কবে আসবে এই উৎসব। শরতের কাশফুলে সাদা হয়ে থাকতো পদ্মার চর। সবচেয়ে বড় লোভ, আনন্দ আর উত্তেজনা কাজ করতো নতুন পোশাক পাবার আশায়। সারাবছর তেমন নতুন পোশাক আমাদের কপালে জুটতো না। কঠিন দারিদ্রতার ভেতরেও পূজার সময় বাবা সাধ্যমত চেষ্টা করতেন সবগুলো ভাই-বোনকে নতুন কাপড় কিনে দেবার।’

 

চঞ্চল-চৌধুরি-ও-তার-মা-বাবা

তিনি লিখেছেন, ‘সারা বছরে একমাত্র এই পূজাতেই আমাদের সৌভাগ্য হতো নতুন পোশাক পরার। ছিট কাপড় কিনে বাবা নিজে সঙ্গে করে শার্টের মাপ দেয়ার জন্য নিতে যেত দর্জির কাছে। প্রতিদিন দর্জির কাছে গিয়ে বসে থাকতাম কাপড় কাটা হলো কিনা, সেলাই হলো কতটুকু, বোতাম লাগানো শেষ হলো কিনা দেখবার জন্য। আহারে… কত কত অপেক্ষা! যেদিন শার্টটা হাতে পেতাম, সে যে কি আনন্দ। নতুন কাপড়ের আনন্দ, পূজার আনন্দ। নতুন কাপড়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে যেতাম। এভাবেই কেটে গেছে অনেকগুলো বছর।’

‘আস্তে আস্তে বোনগুলোর বিয়ে হয়ে গেছে সমর্থ পরিবারে। আমরা ভাইয়েরাও লেখাপড়া শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি যার যার মতো। বাবা-মায়ের নিদারুণ কষ্টের সংসারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা। এখন আমরা নিজেদের সন্তানসহ, আত্মীয়-স্বজন অনেককেই পূজার সময় নতুন পোশাক কিনে দেই সাধ্যমত। এখন আমার ঘরভর্তি কত কত নতুন পোশাক। পোশাকগুলো পরার সময়ও পাই না ঠিকমত।’

পূজায় অন্যদের কাছ থেকে উপহার পাওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। লিখেছেন, ‘প্রতিবছর পূজায় এখন আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব থেকেও অনেক নতুন পোশাক উপহার পাই। কিন্তু সেই পোশাকে কেন জানি সেই আগের নতুন গন্ধ পাই না, যে গন্ধ পেতাম বাবার কিনে দেয়া ছিট কাপড় থেকে বাজারের দর্জির বানানো শার্টে। যে গন্ধে বুদ হয়ে থাকতাম, ছিলাম বহু বছর।’

এদিকে গেলো বছর বাবাকে হারিয়েছেন এই অভিনেতা। জন্মের পর এবারই প্রথম বাবাকে ছাড়া দুর্গাপূজা পালন করছেন তিনি। বাবার অনুপস্থিতিতে তার জন্য কিছু কেনা না হলেও তার কিনে দেয়া আগের পোশাকগুলোর স্মৃতি আবেগপ্রবণ করেছে চঞ্চল চৌধুরীকে।

 

চঞ্চল-চৌধুরী-ও-তার-বাবা

এ ব্যাপারে তিনি লিখেছেন, ‘কিছুটা সামর্থ্য হবার পর থেকেই প্রতিবছর পূজায় সবার আগে বাবা-মায়ের জন্য নতুন পোশাক কেনা আমার জন্য ছিল সবচেয়ে বড় প্রশান্তির, সবচেয়ে বড় আনন্দের অভ্যাস। এবারও নিজে হাতে সবার জন্য নতুন কাপড় কেনার লিস্ট তৈরি করতে গিয়ে প্রথমেই বাবার নামটা লিখে ফেলেছি। হঠাৎ মনে হলো, আরে… বাবা তো নেই…! চুপ করে বসে থাকলাম অনেকক্ষণ। চোখের জল কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারছিলাম না। গত বছর বাবা চলে গেছেন পরলোকে। জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাবা-মাকে ছাড়া কোনো দুর্গাপূজা পালন করিনি। এবারই প্রথম বাবা নেই।’

চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, ‘বাবা বেঁচে থাকলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম, প্রথম যে বছর আমি দুর্গাপূজায় তোমার জন্য পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছিলাম, সেই নতুন পাঞ্জাবির ঘ্রাণটা তোমার কাছে কেমন লেগেছিল বাবা? শুদ্ধ কি পূজায় আমার কিনে দেয়া নতুন শার্ট বা পাঞ্জাবিতে কোনো ঘ্রাণ খুঁজে পায়?

 

চঞ্চল-চৌধুরী

যে ঘ্রাণ এখনো আমার নাকে-মুখে, সারা শরীরে লেপটে আছে। সেই আমার বাবার কিনে দেয়া ছিট কাপড় থেকে একমাস ধরে দর্জির ২০ টাকা মজুরিতে বানানো জামার গন্ধ। বাবা, তুমি ওই রকম একটা গন্ধ হয়ে আমৃত্যু আমার শরীরে মেখে থেক। যেখানেই থাকো, ভালো থেকো বাবা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন