আর্কাইভ থেকে লাইফস্টাইল

সঙ্গীর প্রতি শারীরিক আকর্ষণ কাজ না করলে যা জানা উচিত

বর্তমানে কাজ করছে না নাকি আগে থেকেই কাজ করেনি- এরকম হওয়ার কথা কি কখনও মাথায় আসে?

যুগল সম্পর্কের ক্ষেত্রে শারীরিক আকর্ষণের বিষয়টা জরুরি হিসেবে ধরে নেয়া হয়।

তবে মার্কিন ‘ম্যারেজ অ্যান্ড ফ্যামিলি থেরাপিস্ট’ ইয়ান কার্নার নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলেন, “আমার কাছে থেরাপি নিতে আসা বহু পুরুষ আছেন যারা কোনো রকম শারীরিক আকর্ষণ ছাড়াই প্রাথমিক অবস্থায় সঙ্গী বাছাই করেছেন।”

সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও লেখেন, “যখন দুজনের সামনে প্রশ্ন করি- কেনো আকর্ষণ কাজ করছে না, তখন উত্তর দেয়- হতে পারে মানসিক চাপ, টেস্টোস্টেরনের স্বল্পতা বা কোনো বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন আছেন- এই কারণে।”

তবে আলাদা করে সেই পুরুষকেই একই প্রশ্ন করার পর তার উত্তর হয়- যৌন আকর্ষণকে প্রাধান্য না দিয়েই সঙ্গীকে বাছাই করেছিলেন তিনি।

শারীরিক আকর্ষণ ছাড়া সঙ্গী নির্বাচন করা অথবা এই ধরনের সম্পর্ক কি বেশিদিন টিকতে পারে? এরকম প্রশ্ন মনে উদয় হওয়ার পর ‘সো টেল মি অ্যাবা্‌উট দ্য লাস্ট টাইম ইউ হ্যাড সেক্স’ বইয়ের এই লেখক, থেরাপি নিতে আসা পুরুষদের কিছু প্রশ্নপত্র পূরণ করতে বলেন। যেখানে জানতে চাওয়া হয় যৌন আকর্ষণ ছাড়াও বর্তমান সঙ্গীকে বেছে নেওয়ার কারণ।

উত্তরগুলোর মধ্যে ছিল- ‘বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে, সে হতে পারে আমার সন্তানের জন্য দারুণ একজন মা’, ‘আমার পরিবার ও বন্ধুরা তাকে সমানভাবে পছন্দ করে’ এবং ‘সে সত্যিই আমাকে ভালোবাসে’। তবে এসব উত্তরের মধ্যে যেটা বাদ পড়েছে তা হল- শারীরিক আকর্ষণের বিষয়টা।

ইয়ান কার্নার মন্তব্য করেন, “আমার ধারণা ছিল যৌনতা হচ্ছে আঠার মতো, যা সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখে, কঠিন সময়েও একসঙ্গে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু এখন দেখছি অবস্থা ভিন্ন।”

এই বিষয়ে ‘আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন’য়ের ‘এপিএ সাইকনেট ডটঅর্গ’য়ে প্রকাশিত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি’র কিনজি ইন্সটিটিউট’য়ের গবেষক ডা. জাস্টিন লেইমিলার বলেন, “রোমান্টিক যুগলদের মধ্যে টান-টান সম্পর্ক বজায় রাখতে শারীরিক আকর্ষণ মুখ্য ভূমিকা পালন করলেও, কিছু পুরুষ বা নারী বিষয়টাকে তালিকার শীর্ষে রাখেন না।”

“এক্ষেত্রে টান-টান সম্পর্কের জন্য অন্যান্য বিষয় যেমন- বুদ্ধিমত্তা, কৌতুকপ্রবণতা, ন্যায়পরায়ণ ও দয়ালু হওয়ার মতো বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়।”

শিকাগো ভিত্তিক ‘সেক্স থেরাপিস্ট’ ডা. এলিজাবেথ পেরি বলেন, “আবার কিছু পুরুষ ‘এটা অথবা ওটা’- এরকম ভিত্তিতে সঙ্গী নির্বাচন করেন। কেউ বেছে নেন- যিনি হবেন দারুণ স্ত্রী বা সন্তানের মা। অন্যদিকে কেউ বাছাই করেন যৌনতা-বিষয়ে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় সঙ্গী।

অভিজ্ঞতার আলোকে পেরি আরও বলেন, “পুরুষদের মধ্যে যারা ‘ডেটিং ওয়ার্ল্ড’য়ে আছেন, তাদের মধ্যে অনেককেই দেখেছি মানসিক ও যৌন বিষয়ে সমানভাবে সাঞ্জস্যপূর্ণ সঙ্গী খোঁজার চাইতে, শারীরিক আকর্ষণ ছাড়াই ‘ভালো স্ত্রী’ হতে পারে এমন নারীকে বেছে নেন।”

সম্পর্কের ক্ষেত্রে শারীরিক আকর্ষণ কতটা জরুরি?

সাধারণভাবে বলতে গেলে, ভালো আনন্দময় শারীরিক সম্পর্ক মানসিক চাপ কমায়, বিষণ্নতা ও উদ্বিগ্নতা দূর করে। যুগলদের গভীরতা বাড়ানোর পাশাপাশি সম্পর্কের তৃপ্তিতে ভূমিকা রাখে।

নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘সেক্স থেরাপিস্ট’ ইভা ডিলন বলেন, “যদি সম্পর্ককে খাবার হিসেবে ধরা হয় তবে যৌনতাকে এক্ষেত্রে অখণ্ড অংশ হিসেবে ধরে নিতে হবে। এটা মোটেই খাবার শেষে একটু মিষ্টান্ন খাওয়ার মতো বিষয় নয়।”

“অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যথেষ্ট প্রচেষ্টার মাধ্যমে সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ তৈরি করা নারীদের পক্ষে সম্ভব হয়। তবে সঙ্গীর প্রতি প্রথম থেকেই যদি পুরুষের আকর্ষণ না থাকে তবে কখনও আর সেটা তৈরি হয় না।”

ওয়াশিংটনের ‘আমেরিকান ইউনিভার্সিটি’র মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইভন ফুলব্রাইট মন্তব্য করেন, তারপরও শারীরিক আকর্ষণ কম থাকলে যুগলদের মধ্যে সবসময় সেটা সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় না।

“শারীরিক আকর্ষণ কম থাকার কারণে কেউ কেউ বিচ্ছেদের দিকে যায়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে বিষয়টা তখনই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন সামাজিক চাপ অনুভব করেন।”

“কার্যকর যৌন সম্পর্ক ধরে রাখার ক্ষেত্রে যুগলদের অনেক চাপ সামলাতে হয়, বিশেষ করে যদি মনে করতে থাকে সামাজিকভাবে নিজেদের ‘অ্যাক্টিভ’ প্রমাণ করতে হবে। তবে আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে যে- সম্পর্কের প্রথম অবস্থাতেই শারীরিক আকর্ষণ কাজ করতে হবে, না হলে সেই সম্পর্কের কোনো ফলাফল আসবে না। বিষয়টা ঠিক না।”

কারও সাথে কথা-বার্তা, চিন্তাভাবনা আদান প্রদান থেকে কাছাকাছি আসা, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করার পর ধীরে ধীরে আকর্ষণ কাজ করতে পারে।

সম্পর্কে স্ফুলিঙ্গ ফিরিয়ে আনতে

সম্পর্কের শীতলভাব থেকে বের হয়ে আসার জন্য যুগলদেরই চেষ্টা করতে হবে। এখানে অন্য কোনো সূত্র নেই।

ফুলব্রাইট বলেন, “যুগলদের নিজেদেরই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাতে হবে। নিজেদের সৎ হতে হবে। আর দীর্ঘদিনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে- সব কিছু সেখান থেকে হারিয়ে যায়নি।”

যদি মনোযোগ দেয়া যায় তবে যুগলদের ক্ষেত্রে যৌন আকাঙ্ক্ষা ফিরে আসে।

ডিলন বলেন, “বিবাহিত যুগলরা নিজেদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক থামিয়ে দেয়ার মানে এই নয়, সেটাকে গুরুত্ব দেয়ার দরকার নেই।”

আর মনে রাখতে হবে, যৌন স্বাস্থ্য হচ্ছে সার্বিক স্বাস্থ্যের মাপকাঠি। যদি মনেই হয় শারীরিক সম্পর্কে আকর্ষণ বোধ হচ্ছে না তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। হতে পারে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন