যুদ্ধবিরতি শুরু: মুক্তি পাচ্ছে ১৩ ইসরায়েলি,৩৯ ফিলিস্তিনি
দুই পক্ষের বন্দী বিনিময়ের জন্য অবশেষে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মধ্যে চারদিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর)স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে (বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায়)এই যুদ্ধবিরতি শুরু হয় বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরা।
এর আগে,কাতারের মধ্যস্ততায় ইসরায়েল ও হামাস কর্তৃপক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড.মাজেদ বিন মোহাম্মদ আল আনসারী যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে বলেন,‘আমরা অনুভব করেছি যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে তারা খুবই শ্রতিশ্রুতিবদ্ধ।আমাদের লক্ষ্য ছিলো আপাতত এই চুক্তিকে পৌঁছানো ও পরে এই সময়সীমা আরও বাড়ানো।
জিম্মিদশা থেকে যেভাবে মুক্তি দেওয়া হবে: শর্ত মোতাবেক যুদ্ধবিরতি চলাকালে শুক্রবার থেকে গাজায় চার দিন ইসরায়েলি হামলা বন্ধ থাকবে। এসময়ের মধ্যে অন্তত ১৫০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে ইসরায়েলকে। এর বিনিময়ে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ইসরায়েলি নাগরিকদের মধ্যে ৫০ জন মুক্তি পাবে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডক্টর মাজেদ বিন মোহাম্মদ আল আনসারী বৃহস্পতিবার দোহায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যেসব জিম্মি একই পরিবারের, তাদের একসঙ্গে রাখা হবে। জিম্মিদশা থেকে মুক্তি দিতে প্রতিদিন বেশ কিছু বেসামরিক নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। চার দিনের মধ্যে ৫০ জন ইসরাইলিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ মুখপাত্র আরও বলেন, বুধবার থেকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যেভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছিল, বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত মিশর ও দোহায় উপস্থিত পক্ষগুলোর সঙ্গে সেভাবেই সমন্বয় করা হয়েছে।
কোন পথে বন্দীদের নেওয়া হবে? গাজা থেকে বন্দিদের কোন পথে নিয়ে যাওয়া হবে-সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ‘নিরাপত্তার কারণে’ এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান মাজেদ আল-আনসারি। তিনি বলেন,এখানে আমাদের মূল লক্ষ্য জিম্মিদের নিরাপত্তা। আমাদের অপারেশন কক্ষের মাধ্যমে তারা যাতে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করার দিকে আমরা মনোযোগ দেব।
শুক্রবার কতজন ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি মুক্তি পাচ্ছে? সংবাদ সম্মেলনে মাজেদ আনসারী শুক্রবার কতজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে তার জবাব দিতে অস্বীকার করেন। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘চুক্তিটি পারস্পরিক হওয়ায় আমরা ইসরায়েলি পক্ষ থেকেও মুক্তির আশা করছি। দুই পক্ষের তালিকা নিশ্চিত করা হলেই আমরা জিম্মিদের বের করে আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবো।এনিয়ে দুই পক্ষের দলগুলোসহ আমাদের টিমও দিনরাত কাজ করছে।
তবে শুক্রবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়,যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে (শুক্রবার) হামাসের হাতে বন্দিদের মধ্যে ১৩ জন ইসরায়েলি নারী ও শিশুকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে।অন্যদিকে, ৩৯ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে পারে ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতি ভাঙলে কী হবে: যুদ্ধবিরতি মেনে না চললে বা ভাঙলে কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আল-আনসারী বলেন, চুক্তিটি চারদিনের মধ্যে শত্রুতা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার বিষয়ে। সুতরাং স্পষ্টতই যে কোনো ধরনের শত্রুতা পুনরায় শুরু করার অর্থ চুক্তি লঙ্ঘন করা।
যারা ইসরাইলি নন, সেসব বন্দিকে মুক্তির বিষয়ে এক উত্তরে তিনি বলেন, জিম্মিদের অগ্রাধিকার দেওয়ার মানদণ্ডটি সম্পূর্ণরূপে মানবিক। আমাদের ফোকাস ছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নারী ও শিশুদের ক্ষতির পথ থেকে সরিয়ে আনা।
গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাচ্ছে:গাজায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর ব্যাপারে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন,গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা এই চুক্তির ‘একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ’। আমরা রাফাহ ক্রসিং থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাহায্য পাঠানোর আশা করছি। এটি গাজার প্রয়োজনের একটি ভগ্নাংশ মাত্র, তবে সেখানে প্রচুর সহায়তা দরকার।
প্রসঙ্গত, আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ি আল আকসা মসজিদের অপবিত্রতা এবং কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি নৃশংসতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে তারা নজিরবিহীন রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গাজায় অবরোধ দিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। শুধু তাই নয়, গত বছর থেকে ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরের শহরগুলোতে সামরিক অভিযান দেশটির সেনাবাহিনী। পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের ভূখন্ডে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে রকেট হামলা চালায় হামাস। আর এর জবাবে বিমান হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েল।
হামাসের হামলায় দেশটির ১ হাজার ২০০ জন বেসমারিক নিহত হন। সেদিন ইসরায়েলের ২৪০ জনকে জিম্মিও করে হামাস। হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় সেদিনই গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে অব্যাহত হামলায় গাজার ১৪ হাজারের বেশি বাসিন্দা নিহত হয়েছেন। নিহেতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।