মাত্র ৮০ রানেই প্যাকেট
পাড়া মহল্লায় প্রতিপক্ষকে অল্প রানে গুটিয়ে ফেলার পর নিজেদের শক্তির জায়গা বুঝানোর ক্ষেত্রে প্যাকেট শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এই শব্দটি এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্ষেত্রেও বেশ মানানসই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মাত্র ৮০ রানে গুটিয়ে গেলো মুমিনুল হকের দল। তাও চতুর্থ দিনে মাত্র একঘন্টা ব্যাট করতে পেরেছে তারা।
৪১৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৩৩২ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। ডারবান টেস্টে হেরেছিলো ২২০ রানে।
৩ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে সফরকারীরা। পরাজয় নিশ্চিত। তাই লক্ষ্য ব্যবধান কমানো। কিন্তু নিজেদের ইজ্জত বিলিয়ে দিলো রাসেল ডোমিঙ্গোর শিষ্যরা।
করোনা পজিটিভ হয়ে প্রধান কোচ যখন আইসোলেশনে তখন জাতীয় দলের এই ব্যর্থতাকে কোমায় চলে যাওয়ার মতো বললে কোনো ভুল হবে না। মাত্র ৫৩ রানে নেই সাত উইকেট, ভাবা যায়!
ডারবানে প্রথম ম্যাচে টস জিতে আগে বোলিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে যতোটা না সমালোচিত হয়েছে, তার জবাব ব্যাট হাতে একাই দিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। সেখান থেকে অনেক আশার সঞ্চার হয়েছিলো এই টেস্টকে ঘিরে।
টস হারলেও ম্যাচে তাইজুলের স্পিনে ভালো কিছু করার আশা দেথায় দল। কিন্তু ২২ গজের ক্রিজে থিতুই-তো হতে পারেনি ব্যাটাররা। ম্যাচ বাঁচাতে শেষ দুই দিনে খেলতে হতো ছয় সেশন। কিন্তু নিদারুণ ব্যর্থতায় চতুর্থ দিন স্রেফ এক ঘণ্টাতেই গুঁড়িয়ে গেলো চতুর্থ ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ জিতলো ২-০ ব্যবধানে। সহজ করে বললো হোয়াইট ওয়াশ!
চতুর্থ দিনের সকালটা শুরু হলো দুঃস্বপ্নের মতো। মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হকের পর দ্রুত ফিরে গেলেন ইয়াসির আলি চৌধুরিও। তাইজুল ইসলামকে এলবিডব্লিউ করে বাংলাদেশকে ৮০ রানেই গুটিয়ে দেন সাইমন হার্মার। রিভিউ নিয়েছিলেন তাইজুল কিন্তু কাজ হয়নি।
মেহেদী হাসান মিরাজকে কট বিহাইন্ড করার পর সৈয়দ খালেদ আহমেদকে ফিরিয়ে দিলেন কেশভ মহারাজ। টানা দুই টেস্টে ইনিংসে নিলেন ৭ উইকেট। ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে টানা দুই টেস্টে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ৭ উইকেট পেলেন মহারাজ।
উইকেটে প্রবল টার্ন ও বাউন্স মিলছে তবুও বেরিয়ে এসে খেলার ঝুঁকি নিয়েছিলেন লিটন দাস। শেষ পর্যন্ত দিতে হলো এর মাশুল। কেশভ মহারাজের মহরাজের বল বেরিয়ে এসে ছক্কায় ওড়াতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়া বলের নাগাল পাননি। বাকিটা অনায়াসে সারেন কিপার কাইল ভেরেইনা।
৩৩ বলে ৭ চারে ২৭ রান করা লিটন বাঁহাতি স্পিনার মহারাজের পঞ্চম শিকার। ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারাল বাংলাদেশ।
ব্যাট হাতে দুঃস্বপ্নের মতোই কাটল বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। টানা চার ইনিংসে দুই অঙ্কে যেতে ব্যর্থ হলেন তিনি। ব্যর্থ হলেন লড়াইয়ের মানসিকতা দেখাতেও। বাজে এক শটেই বিলিয়ে এলেন উইকেট। ঝুলিয়ে দেওয়া বলে অনেক দূর থেকে সুইপ করার চেষ্টায় খুব একটা সফল হননি, ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় আকাশে। ২৫ বলে মুমিনুল করেন পাঁচ রান।
উইকেটের জন্য খুব একটা অপেক্ষা করতে হলো না স্বাগতিকদের। মুশফিকুর রহিমকে বিদায় করেন কেশভ মহারাজ। ৮ বলে ১ রান করেন মুশি।
প্রথম টেস্টের পর মুমিনুল হক বলেছিলেন, দেশের বাইরে খেলতে এসে স্পিনারদের উইকেট দেওয়া ক্রাইম। তাহলে একই ক্রাইমের জন্য এবার কোনো সাজা পাবে কি দল?
হাসিব মোহাম্মদ