শুভ জন্মদিন কবি নির্মলেন্দু গুণ
কবি নির্মলেন্দু গুণের ৭৮তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৫ সালের ২১শে জুন নেত্রকোণার বারহাট্টার কাশবন জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা সুখেন্দুপ্রকাশ গুণ এবং মা বীণাপাণি। সুখেন্দু ও বিনাপনির তিন মেয়ে এবং দুই ছেলের মধ্যে নির্মলেন্দু ছোট। পুরো নাম নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য ও ভ্রমণ কাহিনীও লিখে থাকেন। চিত্রশিল্পী হিসেবেও অন্য একটি পরিচয় রয়েছে তার।
লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয় তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী চারুবালার কাছে। প্রথমে বারহাট্টার করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইন্সটিটিউটে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। ১৯৬২ সালে দুই বিষয়ে লেটারসহ মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পান। মেট্রিকের পর আই.এস.সি পড়তে চলে আসেন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে। মেট্রিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের সুবাদে পাওয়া রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপসহ পড়তে থাকেন এখানে। ১৯৬৪ সালের আই.এস.সি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ১১৯ জন প্রথম বিভাগ অর্জনকারীর মাঝে তিনি ছিলেন একমাত্র নেত্রকোণা কলেজের।
নির্মলেন্দু গুণের বাবা চাইতেন, ছেলে ডাক্তারি পড়ুক। কিন্তু তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে সুযোগ পেলেও ভর্তি হতে পারেননি।
মেট্রিক পরীক্ষার আগেই নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণের প্রথম কবিতা ‘নতুন কান্ডারী’। তার কবিতায় মূলত নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধিতা, এ বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ গ্রন্থের অন্তর্ভূত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা ‘হুলিয়া’ কবিতাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য।
তাকে ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়।
নির্মলেন্দু গুণের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’, ‘কবিতা, অমীমাংসিত রমণী’, ‘দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘তার আগে চাই সমাজতন্ত্র’, ‘দূর হ দুঃশাসন’, ‘চিরকালের বাঁশি’, ‘দুঃখ করো না, বাঁচো’, ‘আনন্দ উদ্যান’, ‘পঞ্চাশ সহস্র বর্ষ’, ‘প্রিয় নারী হারানো কবিতা’, ‘শিয়রে বাংলাদেশ’, ‘ইয়াহিয়াকাল’, ‘আমি সময়কে জন্মাতে দেখেছি’, ‘বাৎস্যায়ন’, ‘রক্ষা করো ভৈরব’ ইত্যাদি। ‘আপন দলের মানুষ’ শিরোনামে রয়েছে তার একটি গল্পগ্রন্থ। এ ছাড়া লিখেছেন ‘সোনার কুঠার’ নামের একটি ছড়াগ্রন্থ। ‘আমার ছেলেবেলা’, ‘আমার কণ্ঠস্বর’ ও ‘আত্মকথা ৭১’ শিরোনামে রয়েছে তিনটি আত্মজৈবনিক গ্রন্থ। কবি ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি, ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৮০ সালে তিনি নীরা গুণের সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে এ দাম্পত্য জীবন সফল হয়নি। তাদের একমাত্র সন্তানের নাম মৃত্তিকা গুণ।
অনন্যা চৈতী