আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

১৭ বছর ধরে স্ত্রী-সহ দুই মেয়েকে পৈশাচিক অত্যাচার

পলেস্তার খসে ঘরের দেয়ালের ইটের সারি বের হয়ে গেছে। দুর্গন্ধময় ঘরের একপাশে লোহার খাটে নোংরা বিছানা। ঘরভর্তি কাপড়ে বাধা জামাকাপড়। তার মাঝেই দুই মেয়েকে নিয়ে বন্দিদশায় ১৭ বছর কেটে গিয়েছে ব্রাজিলের এক মহিলার। কোনও অপরাধীর গোপন আস্তানায় নয়, নিজেদের বাড়িতেই স্বামীর হাতে বন্দি ছিলেন ওই মহিলা ও তার দুই কন্যা।

ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোর বাসিন্দা লুইজ আন্তোনিও সান্তোস সিলভা। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে স্ত্রী এবং দুই মেয়ের হাত-পা বেঁধে নিজের ঘরে আটকে রেখেছিলেন তিনি। তিন জনকে খাবার দেয়া তো দূরের কথা, চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাদের উপর চালাতেন নিয়মিত যৌন ও মানসিক নির্যাতন। 

সম্প্রতি রিওর গুয়ারাটিবা এলাকা থেকে ওই তিন জনকেই উদ্ধার করেছে ব্রাজিল পুলিশ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে লুইজের খুপরি ঘরে হানা দিতেই স্তম্ভিত হয়ে যায় পুলিশ কর্মকর্তারা। অপুষ্টিতে ভোগা তিনটি কঙ্কালসার মূর্তি পড়েছিল সেখানে।

এ ঘটনায় লুইজকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর তার স্ত্রী-মেয়েদের পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে । এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে  স্ত্রী-মেয়েদের বন্দি করে রাখার কারণ।

গুয়ারাটিবা এলাকায় ‘ডিজে’ নামে পরিচিত ছিলেন লুইজ। প্রতিবেশীদের দাবি, তার ঘর থেকে সব সময়ই কানফাটানো বাজনার আওয়াজ আসত। সে কারণেই লুইজের নাম হয়ে যায় ‘ডিজে’।

পুলিশের দাবি, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে স্ত্রী এবং দুই মেয়ের চিৎকার চাপ দিতেই কানফাটানো বাজনা চালিয়ে দিতেন লুইজ।

লুইজের ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া দুই মেয়ের এক জনের বয়স ১৯, অন্য জনের ২২। তবে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরে অপুষ্টিতে ভোগার ফলে তাদের দেখে মনে হচ্ছিল যেন এক জনের বয়স ১০, অন্য জনের ১২ বছর।

লুইজের ঘরে যে তিনজন মানুষ বন্দি রয়েছেন, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তার প্রতিবেশীরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী জানান, পুলিশ এসে দুই মেয়ে-সহ লুইজের স্ত্রীকে উদ্ধার করেছে। সে সময় ওদের দেখে মনে হচ্ছিল, আর এক সপ্তাহও তারা বাঁচতেন কিনা সন্দে!

১৭ বছর ধরে বন্দিদশায় থাকা লুইজের স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ওই প্রতিবেশী বলেন, এম্বুলেন্সে তোলার সময় লুইজের স্ত্রীর  সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু দূর্বলতার কারণে কথা বলার চেষ্টা করলেও আওয়াজ বের হয়নি।

এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসামাত্র লুইজের ঘরের ছবিতে তোলপাড় হয়েছে ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমগুলো। 

ব্রাজিলের এক স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে লুইজের স্ত্রী বলেন, দিনের পর দিন খাবার জুটত না তাদের। উল্টো স্বামীর নিয়মিত যৌন অত্যাচার সইতে হত তাকে। এমনকি নিজের মেয়েদের উপরেও একই রকম অত্যাচার চালাতেন লুইজ। ২৩ বছর আগে লুইজের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তার। বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের দু’টি কন্যাসন্তান হয়। তবে চাকরি করা বা ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না তার।

লুইজের স্ত্রী আরও বলেন, মেয়েদের স্কুলে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন তাদের বাবা। বিয়ের কয়েক বছর পরই পাঁচ এবং দু’বছরের দুই মেয়ের সঙ্গে তাকেও হাত-পা বেঁধে ঘরে বন্দি করে রাখেন লুইজ। স্বামীর এমন নির্যাতন থেকে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। পালানোর চেষ্টা করলে ‘একমাত্র মৃত্যুর পরেই এ ঘর ছেড়ে বেরোনো যাবে’ বলে স্ত্রীকে খুনের হুমকি দিতেন লুইজ।

সূত্র: বিবিসি

এসি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন