আন্তর্জাতিক

ইরানের নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে ইসরাইলি জনগণ

ইসরাইলের আকাশে ছোড়া ইরানের অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট করার দাবি দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর ছবি: সংগৃহীত

বেশ কয়েকদিন ধরে পাল্টাপাল্টি হুমকির মধ্যেই ইসরাইলে নজিরবিহীন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। লেবাননে বিমান হামলায় ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসারুল্লাহ নিহতের বদলা নিতে তেলআবিবে হামলা চালানোর হুমকি আগেই দিয়ে রেখেছিলো। শুধু দিনক্ষণই বলা বাকী রেখেছিল তেহরান। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ইরানের ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র গর্জে ওঠে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি স্বীকার করেছে। দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমটাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে যে যেখানে পারছেন ছুটছেন দেশটির নাগরিকেরা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,ইরানের নিক্ষেপ করা বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রই প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। হতাহতের কোনো খবর এখনো পাওয়া যায়নি। হামলা এখনো চলছে। এ ঘটনায় পুরো ইসরাইলজুড়ে সাইরেন বেজে উঠে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বাজছে এবং দেশটির নাগরিকেরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার চলাকালে রিপোর্টারদের মাটিতে শুয়ে পড়তে দেখা গেছে।

ইরানের এই নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হতাহতের তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইল জুড়ে মাত্র দুজন আহত হওয়ার খবর দিয়েছে দেশটির জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম-এমডিএ।

ইসরাইলের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা বলেছে, তারা রাজধানী তেল আবিবে শার্পনেলের আঘাতে সামান্য আহত হওয়া মাত্র দুজনকে চিকিৎসা দিয়েছে। তবে এমডিএ জানায়, নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দৌড়ানোর সময় পড়ে যাওয়া এবং তীব্র উদ্বেগের কারণে আরও কয়েকজন সামান্য আঘাত পেয়েছেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা  রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের সাংবাদিকেরা ইরান ও ইসরায়েলের প্রতিবেশী দেশ জর্ডানের আকাশসীমায় ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে দেখেছেন।

অপরদিকে, ইসরাইলের নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে স্থানীয় সেনা কমান্ডের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এক বার্তায় আইডিএফ জানায়,‘সাইরেন শোনামাত্রই আপনাকে বিলম্ব না করে অবশ্যই একটি সুরক্ষিত এলাকায় যেতে হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে।

এর আগে, ইসরাইলি সেনারা  ‘সীমিত’ আকারে  স্থল অভিযানের জন্য দক্ষিণ লেবাননে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছিল আইডিএফ। তবে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ ইসরাইলি বাহিনীর ওই অঞ্চলে প্রবেশের তথ্য অস্বীকার করেছে।

প্রসঙ্গত, লেবাননে ইসরাইলের বোমা হামলায় ইরান–সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসারুল্লাহ নিহত হলে এর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ইরান।মঙ্গলবার লেবাননে সীমিত পরিসরে স্থল অভিযান শুরুর পরই তেল আবিব লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রায় এক বছর আগে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েল। তাদের নির্বিচার বোমা হামলায় গাজায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ওই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আজও থামেনি। গাজায় যুদ্ধ চলমান রেখেই লেবাননে ইসরাইল শুরু করে স্থল অভিযান। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নতুন মাত্রা নিয়েছে।

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন