আন্তর্জাতিক

ইহুদিদের ‘বিশেষ দিনেই’ ইরানে হামলা চালাবে ইসরাইল!

ইসরাইলের যুদ্ধবিমান ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস আর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। অন্যদিকে, ইয়েমেনের ইরানপন্থী হুথি বিদ্রোহী আর ইরাক-লিবিয়ার মিলিশিয়া বাহিনী।  গাজা ইস্যুতে সবাই লড়ছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে। সবশেষ যোগ দিয়েছে এসব ‘প্রক্সি সংগঠনগুলোর বস’ হিসেবে পরিচিত ইরান। ফলাফল সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এখন গোটা উসাগরীয় অঞ্চল ও মধ্যপ্রাচ্য।

গেল বছরের ৭ অক্টোবর পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের ‘অজেয় শক্তি’ বলে দাবি করা  ইসরাইলে হামলা চালায়  হামাস যোদ্ধারা। এর জবাবে একই দিন গাজায় কয়েক শ বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী।  পাশাপাশি শুরু করে স্থল অভিযান।  গাজায় নেতানিয়াহু বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ এখনও চলছে।

ইসরাইলি বাহিনীর এই ‘দানবীয়’ তাণ্ডবের জবাব দিতে লেবাননের হিজবুল্লাহ আর ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরাইলে মিসাইল হামলা চালায়।  এর প্রতিশোধ নিতে লেবাননে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান শুরু করে ইসরাইল।  তাদের হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসারুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। 

মূলতঃ লেবাননে হামলা ও অন্যতম মিত্র হিজবুল্লাহপ্রধানের হত্যার বদলা নিতেই গত ১ অক্টোবর ইসরাইলে প্রায় দুশো ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়ে ইরান।  তেহরানের এই হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় তেলআবিবের।  আর এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ঘোষণা দেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

এনিয়ে ফোনালাপে মার্কিন প্রেসিডেন্টে জো বাডেনের কাছ থেকে তিনি সবুজ সংকেতও পেয়েছেন। তবে হামলার দিন-ক্ষণ এ্খনও ঠিক করতে পারেননি।  গত ১০ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু নিয়ে আলোচনা করা হলেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসির এক প্রতিবেদন বোলছে, ইহুদিদের বিশেষ উৎসব ‘ইয়োম কিপুর’র ছুটির মধ্যেই তেহরানে সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। ‘ইয়োম কিপুর’ দিনটিতে ইহুদিরা ব্যক্তিগত ও সামাজিক প্রার্থণা ও উপবাস পালন করে থাকেন।  ইহুদিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই দিনেই ইরানে হামলার ছক কষছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।

এদিকে, হামলা চালানো হলে উপযুক্ত জবাব দেয়ার ঘোষণা দেয় ইরান। শুধু তাই নয়, হামলার জন্য মার্কিন মিত্র হিসেবে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ তাদের ভূমি বা আকাশ, তেল আবিবকে ব্যবহার করতে দিলে, তাদের বিরুদ্ধেও হামলার হুঁশিয়ারি দেয় তেহরান। তবে এ ঘোষণার পরপরই সৌদি আরব ও ইরাক জানিয়েছে, তাদের ভূমি ও আকাশ যুদ্ধের জন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।

মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন মিত্রদেশগুলোর এমন ঘোষণায় বেশ বেকায়দায় পড়েছে ইসরাইল। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে সেনাসহ ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ব্যবস্থা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইরান থেকে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এ ঘোষণা দেয় বাইডেন প্রশাসন।

রোববার (১৩ অক্টোবর) ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন বোলছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী ব্যবস্থাসহ দেশটিতে তারা মার্কিন সেনা পাঠাবে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো উত্তেজনা কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে।  জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও দ্রুত সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর পক্ষ থেকে সব পক্ষকে ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ।  বিশ্লেষকরা বোলছেন, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে।  একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই শান্ত করতে পারে ইসরাইলকে। 

এমআর//  

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন