আন্তর্জাতিক

আস্থা ভোটে হেরে জার্মানির ওলাফ শলৎজ সরকারের পতন

জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ছবি: সংগৃহীত

পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হেরে গেলেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। স্থানীয় সময় সোমবার (১৬ ডিসেম্বর)  ওই আস্থা ভোটের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। এতে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং স্থিতিশীলতার স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের উপর অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন দেশটির বেশিরভাগ সংসদ সদস্য। এর ফলে জার্মানিতে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকারের পতন হয়েছে। পাশাপাশি আগামী বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি আগাম নির্বাচনের পথ তৈরি হলো জার্মানিতে। তবে দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনিভূত হল বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওলাফ শলৎজের  ক্ষমতায় থাকা না থাকার প্রশ্নে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) জার্মান পার্লামেন্টে আস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোটাভুটিতে পরাজিত হয়েছেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। এর ফলে নতুন সরকার গঠন করতে এখন আগাম নির্বাচন আয়োজন করতে করতে হবে।

চলমান পরিস্থিতিতে  জার্মানির পার্লামেন্ট বুন্দেসট্যাগ ভেঙে দিতে পারবেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে জার্মানির প্রেসিডেন্টকে।  আর এই সিদ্ধান্ত নিতে ২১ দিন সময় পাবেন তিনি। তবে আসছে ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাবনায় তিনি সম্মতির ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

আগে থেকেই ৬৬ বছর বয়সী শলৎজের আশঙ্কা ছিল আস্থা ভোটে তিনি পরাজিত হতে চলেছেন। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদন জানায়, পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে অংশ নেন ৭১৭ জন আইনপ্রণেতা। এর মধ্যে চ্যান্সেলরের বিপক্ষে ভোট পড়ে ৩৯৪টি। অন্যদিকে, ওলাফ শলৎসের পক্ষে ভোট দেন ২০৭ জন সংসদ সদস্য।  ভোটদানে বিরত ছিলেন ১১৬ জন আইন প্রণেতা।

জার্মানি সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের নেতা ওলাফ শোলজের নেতৃত্বে ২০২১ সালে জোট সরকার গঠন করেছিল ব্যবসাবান্ধব দল এফডিপি ও পরিবেশবান্ধব দল গ্রিন পার্টি। শলৎজের নেতৃত্বাধীন এই জোট সরকার তিন বছরের বেশি সময় দেশ শাসন করেছে। তবে অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে গেলো কয়েক মাস ধরে এই তিন দলের নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য চলছে। সে কারণে জুলাইয়ে একবার জোট সরকার ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

গেলো  ৬ নভেম্বর  জোট সরকার আবারও  ভাঙনের মুখে পড়ে।  ওইসময় তিন দলের সভার পর জোটভুক্ত উদারপন্থী ফ্রি ডেমোক্র্যাটস দলের সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনারকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, সরকার ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়।  কিন্তু এবার শেষ পর্যন্ত  শলৎজের জোট সরকার ভেঙেই গেল।

বর্তমানে ন্যাটো ও রাজনীতি ইস্যুতে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিন পার করছে জার্মানি। জ্বালানির উচ্চ মূল্য দেশটির অর্থনীতিতে বড় আঘাত হেনেছে। চীনের সঙ্গেও তীব্র অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে জার্মানির। এরই মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর বিরুদ্ধে গিয়ে ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বার্লিন। এ ছাড়া ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার মধ্য দিয়ে সামরিক জোট ন্যাটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জার্মানির ওপর এই হুমকিগুলো নিয়েই সোমবারের(১৬ ডিসেম্বর)  আস্থা ভোটের আগে পার্লামেন্টে শলৎজ, কট্টরপন্থী বিরোধী দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ) নেতা ফ্রেডরিখ মের্জ ও অন্যান্য দলের নেতাদের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়।

এসময় জার্মানির সংকট মোকাবিলায় নিরাপত্তা, ব্যবসা–বাণিজ্য ও সমাজের কল্যাণে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন শলৎজ। এ সময় বিরোধী দলের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, এই পদক্ষেপগুলো কেন আগে নেওয়া হয়নি? জবাবে  শলৎজ বলেন, আগের সিডিইউ সরকার সামরিক বাহিনীকে শোচনীয় অবস্থায় রেখে যাওয়ায় তাঁর সরকারকে সামরিক ব্যয় বাড়াতে হয়েছিল।

 

ওলাফ শলৎজ  আরও বলেন, জার্মানিতে শক্তিশালী ও পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ করার সময় এসেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার তৎপরতা সম্পর্কে সতর্ক করে তিনি বলেন, পারমাণবিক সক্ষমতা আছে এমন একটি দেশ বিপুল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইউরোপে যুদ্ধ করছে। ওই দেশটিতে জার্মানি থেকে উড়োজাহাজে করে যেতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে।

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন