বাংলাদেশ

আমরা আবার একটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি: মির্জা ফখরুল

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঐক্যের যে যুদ্ধ, সকলে মিলে একসঙ্গে দেশ গঠন বা নির্মান- একটা পথরেখা দেখানো, সেখানে ব্যর্থতা রয়েছে। তবে সবাই আবার একটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। এমনটি মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সুবর্ণ জয়ন্তী ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হলেও ঐক্যের যুদ্ধে আমাদের ব্যর্থতা রয়েছে। সকলকে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে একটি সত্য, সুন্দর, সুখী, সমৃদ্ধ ও প্রেমময় বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে। আমরা গণতন্ত্রের কথা বললেও গণতন্ত্রকে চর্চা করি না। এখানে গণতন্ত্রকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হয়েছি। কিন্তু সহনশীলতার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে চর্চা করে যদি এগিয়ে যেতে পারি তাহলে আমরা গণতন্ত্রকে লাভ করতে পারব, অধিকারকে অর্জন করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, আমরা আবার একটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। সেই স্বপ্নটি হচ্ছে, সত্যিকার অর্থেই আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন- একটি সুখী, সুন্দর, সমৃদ্ধ, প্রেমময় গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ; সেই বাংলাদেশকে নির্মাণ করার আমরা চেষ্টা করেছি। আমরা ৭১ সালে যুদ্ধে ছিলাম, এরপর গণতান্ত্রিক যুদ্ধেও ছিলাম। আজকে সেই গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা ঐক্যের যে যুদ্ধ, সকলে মিলে একসঙ্গে দেশটাকে যে গঠন করব, নির্মাণ করব, একটা পথরেখা দেখাবো; আজকে এই বয়সে এসে আমার কাছে মনে হয়, এই জায়গায় আমাদের ব্যর্থতা আছে।

বিএনপি মহাসচিব যোগ করেন, সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আমাদের ছেলেরা জীবন দিয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরা জীবন দিয়েছে, আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরা দীর্ঘদিন অস্বাভাবিক, অমানবিক নির্যাতন সহ্য করেছে। ৭০০ থেকে ৮০০ রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৬০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বিনাবিচারে হত্যা করা হয়েছে। এই একটা অবস্থা আমরা পার হয়েছি। নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু কেন জানি না আমরা সংকীর্ণতায় ঊর্ধ্বে উঠতে পারছি না। আমি আশা করবো সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে, এই আবেদন জানাবো যে আমরা উঠে দাঁড়াই। আমরা আমাদের এই সংকীর্ণতায় ঊর্ধ্বে দাঁড়াই। দাঁড়িয়ে একটা সুষ্পষ্ট, সত্য, সুন্দর একটা পথ নির্ধারণ করি। যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়িত করি।

বাংলাদেশকে প্রেমময় ও ভালোবাসার দেশ হিসেবে দেখে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চান মির্জা ফখরুল। সে কথা বলতে গিয়ে বলেন, খুব আনন্দের সঙ্গে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পারতাম যদি দেখতাম যে, বাংলাদেশটা সত্যিকার অর্থেই একটা প্রেমময় ভালোবাসার দেশ হয়েছে। কি করুণ সময় গেছে, আমরা ভোট দিতে পারিনি। ১৫ বছর গেছে আমরা ভোট দিতে পারিনি। এ কেমন গণতন্ত্রের কথা, এ কেমন স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের কথা যেখানে মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ হারিয়েছে। গত ১৫ বছরে আমাদের দেশের সমস্ত সম্পদকে লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার করে ১৫ বছরে ২৮০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। ফ্যাসিবাদ (আমলে) একটি নির্বাচন হয়, নির্বাচনে জয়লাভ করে, তারপরে সমস্ত ক্ষমতা দখল করে, রাষ্ট্রকে দখল করে নিয়ে তার ক্ষমতাকে নিরুঙ্কুশ করতে চায়। একটি ভয়ভীতি সৃষ্টি করে যেন কেউ কোনো কথা বলতে না পারে। আমরা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছি। একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করব।

এম এইচ// 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন