শিশুর সকালটা হয়ে উঠুক আশীর্বাদের মতো

ভোরের আলো ফোটার আগেই তিন্নির দিন শুরু হতো একরাশ বকুনি দিয়ে, এই বয়সে ঘুমোলে হবে। অভিমান জমতে জমতে একদিন সে সত্যিই ভোরে উঠতে শিখে গেল। কিন্তু চোখের নিচে কালি, সারাদিন ঘুমঘুম ভাব, পড়ায় মন নেই এই তাড়াহুড়োতে শৃঙ্খলা এল কি না কে জানে, তবে ছেলেবেলার মিষ্টি ঘুমটা হারিয়ে গেল ঠিকই।
তিন্নির মতো হাজারো শিশুর শৈশব আজ নিয়মের কড়া জোড়ায় বাঁধা। বাবা-মারাও তো চান না এমনটা হোক, তারা শুধু চান সন্তান যেনো মানুষ হয়। সুসংস্কৃত, শৃঙ্খলাপূর্ণ, দায়িত্ববান। কিন্তু সেই চাওয়ার পথে যদি পড়ে যায় অতিরিক্ত চাপের ছায়া, তাহলে শিশুর কোমল মন খাঁচার পাখির মতোই ভয়ে কুঁকড়ে যায়।
মনোবিদ ও মনোরোগ চিকিৎসকরা জানান, সন্তানকে নিয়ম শেখাতে হবে ঠিকই। তবে সেই শিক্ষা হোক ভালোবাসার, কথার মধ্যে না থাকুক কঠোরতম।
ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই যদি কানে আসে-ফোন ধরবি না , পড়তে বস এখনই। আর কত ঘুমাবি? তাহলে শিশুর সকালটাই মলিন হয়ে যায়। তার বদলে যদি কানে আসে মায়ের নরম গলা, এক কাপ চা বানানোর মতো ধৈর্য, আর একটু গল্পের মতো কথা। তাহলেই তো সকালটা হয়ে উঠবে আশীর্বাদের মতো।
ভোর ৫টায় জোর করে না তুলে রুটিন তৈরি করে ধীরে ধীরে পরিবর্তন করা জরুরি। প্রতিটি শিশুর শরীরের ছন্দ আলাদা। ঘুম ভেঙেই পড়ার চাপ নয়। বরং, ১০ মিনিট মায়ের সঙ্গে বসে চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিতে শেখানো, তাতেই মন স্থির হয়।
ফোন না দিলে যেনো রাগ না করে বরং, বাচ্চাকে ফোনের গুরুত্ব বোঝানো। যেমন- ফ্রিজ বা টিভির সঙ্গে কেউ খেলে না ঠিক তেমনি ফোনের সাথেও কেউ খেলে না। সকালটা যেনো স্নেহের ছোঁয়ায় হয়। কাজের ব্যস্ততার মাঝেও সন্তানের পাশে বসে একটু গল্প করাটা তার আত্মবিশ্বাসের ভিত গড়ে। শিশুর মনও তো একখানা বাগান। যেমন- বাগানে নিয়মিত জল, আলো আর মায়া চাই, তেমনই শিশুর মনে প্রয়োজন প্রশংসা, সম্মান।
পরীক্ষায় খারাপ করলে তুলনা না করে বরং বলুন, এই বিষয়টায় তুমি কষ্ট পাচ্ছো, চলো একসঙ্গে দেখি কী করলে ভালো হবে। সকালে জামা না পরলে চিৎকার নয়, বরং মজা করে বলুন, তুমি তোমার জামাটা না পরলে আজ সূর্য হাসবে না তো।
শিশুরা অবশ্যই শিখবে। যদি আমরা সময় দিই, পাশে থাকি, আর বুঝিয়ে বলি। বকাবকিতে ভয়ের জাল বোনা যায় ঠিকই। কিন্তু ভালোবাসায় গড়ে ওঠে সেই সম্পর্ক, যেটা শিশুকে শেখায়। জগৎটা আসলে তার আপন।
শৈশবটা না হয় ওর মতোই থাক। মাটি মেখে, গান গেয়ে, ভুল করে, আবার উঠে দাঁড়িয়ে। আর আপনি হোন সেই নরম বটগাছের ছায়া। বাচ্চার পাশে থাকতে শুধু শাসন নয়,ওর হাত ধরে ওকে বড় করতে হবে ভালোবাসা দিয়ে।
এসকে//