ছোট বিষয়কে বড় করে দেখার মেন্টাল ট্র্যাপ 'অতিরিক্ত চিন্তা'
আধুনিক জীবনে একের পর এক সমস্যা, চাপ এবং উদ্বেগের মাঝে বহু মানুষ ছোট ছোট বিষয়কে বড় করে দেখে। যার ফলে তাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত হয়। আপনি কি এমন ব্যক্তি যে কোনও ছোট বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করেন এবং কষ্ট পান? যদি হ্যাঁ হয়ে থাকে তবে আপনি একা নন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা অনেকেরই একটা সাধারণ সমস্যা, যার নাম অতিরিক্ত চিন্তা করা বা ওভারথিঙ্কিং।
প্রভাব-
প্রায়ই আমরা এমন পরিস্থিতিতে পড়ি, যেখানে ছোটখাটো কিছু ঘটনার উপর বেশি সময় ধরে চিন্তা করি, যা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে। এই ধরনের চিন্তা সাধারণত আমাদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে হতাশা এবং উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।
অতিরিক্ত চিন্তা করার ফলে মানুষের মনোভাব নেতিবাচক হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণস্বরূপ- যখন কেউ একটা ছোট ভুল করে, তখন তার মনে হতে পারে সেটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল যা অনেকে ‘প্যারালাইসিস বাই এনালাইসিস’ (অতিচিন্তা থেকে নিষ্ক্রিয়তা) বলে থাকেন। এটি এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে মানুষ সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে নিজেই আরও বেশি বিভ্রান্ত হয়ে যায়।
যেকারনে অতিরিক্ত চিন্তা হয়-
অতিরিক্ত চিন্তা করার জন্য নানা কারণ থাকতে পারে। ব্যক্তিগত জীবনের চাপ, পারিবারিক সমস্যা, কর্মস্থলের উদ্বেগ অথবা অতীতের কোনও অসম্পূর্ণ বা অপ্রাপ্তি অভিজ্ঞতা। এগুলো অনেক সময় আমাদের মনে অতিরিক্ত চিন্তা উঁকি দিয়ে যায়। এসব চিন্তা মানুষের মস্তিষ্কে ‘বয়স বাড়ানো’ বা অ্যাংজাইটি (অস্থিরতা) তৈরি করতে পারে, যার প্রভাব স্নায়ু এবং দেহের অন্যান্য অংশেও পড়তে পারে।
এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া এবং পরিচিতির চাপও অতিরিক্ত চিন্তা করার একটি কারণ হতে পারে। যখন মানুষ অন্যদের জীবনকে পরিপূর্ণ এবং নিখুঁত দেখেন তখন তারা নিজের জীবনকে তার সাথে তুলনা করে এবং উদ্বিগ্ন হতে শুরু করেন।
অতিরিক্ত চিন্তা যেভাবে বন্ধ করবেন-
মনোযোগী থাকা:
ছোট বা বড় সমস্যা যাই হোক, সেগুলোর প্রতি অত্যধিক মনোযোগ না দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতির উপর বেশি মনোযোগ দিন। "মাইন্ডফুলনেস" বা মনোযোগী থাকার চর্চা এটি সহজ করতে সাহায্য করতে পারে।
বিশ্রামের সুযোগ নিন:
একটি ছোট্ট বিরতি নেওয়া মানসিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সময় নিজের সাথে কাটানো বা প্রিয় কিছু কাজ করা অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।
ভালোর দিকে মনোযোগ:
অনেক সময় নিজের ভালো দিকগুলো লক্ষ্য করা এবং সেই অনুযায়ী চিন্তা করা পরিস্থিতিকে সহজ করে তুলতে পারে।
চিন্তার দিনলিপি রাখা:
অনেক সময় আমাদের মাথায় এমন অনেক চিন্তা চলে আসে যেগুলি আমরা বুঝতেই পারি না। প্রতিদিন চিন্তার একটি তালিকা তৈরি করা এবং সেটি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
অতিরিক্ত চিন্তা অনেক সময় ব্যক্তির মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সচেতন হয়ে জীবনের ছোটখাটো বিষয়গুলোকে বড় করে না দেখার অভ্যাস গড়ে তোলা আমাদের মানসিক শান্তি নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে।
যদি আপনি অনুভব করেন যে অতিরিক্ত চিন্তা আপনার জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তবে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
এসকে//