আর্কাইভ থেকে জাতীয়

সাংবাদিক রোজিনার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে

দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বললেন সাংবাদিক নেতারা।

বুধবার (১৯ মে) বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও দোষী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধনে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) নেতারা এই দাবি জানান। এছাড়াও মানববন্ধন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, বরিশাল ডিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন।

বিএসআরএফের সভাপতি তপন বিশ্বাস বলেন, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদককে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তাকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে- এর বিরুদ্ধে আমরা আজকে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। আমরা তার মুক্তি চাই, তার সঙ্গে যারা অন্যায় করেছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। 

বিএসআরএফের সভাপতি আরো বলেন, রোজিনা ইসলামকে ডেকে নিয়ে কাগজ ধরিয়ে নাটকের মতো করে অভিযোগ দাঁড় করানো হয়েছে। আমার দুটি প্রশ্ন- একটি অভিযোগ দিতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছয়টি ঘণ্টা অপেক্ষা করেছে। ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার কারণটা কী? কী এমন অপরাধ করেছে সে?’

‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাষ্ট্রীয় গোপন নথি সে চুরি করেছে। কী এমন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সেটা? বলা হচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিনের জন্য একটা এগ্রিমেন্ট হয়েছে, সেই এগ্রিমেন্টটি হয়েছে ২২ এপ্রিল। কিন্তু ঘটনাটা ঘটেছে ১৭ মে। এতো গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সচিবের পিএসের টেবিলে পড়ে আছে? এটা আমরা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারি না। এটা রোজিনাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র। রোজিনা ইসলাম নির্দোষ বলে মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছি, চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেব। তাকে আমরা মুক্ত করবোই।’

মানববন্ধনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, ‘বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের আন্দোলনের সঙ্গে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাত্মতা প্রকাশ করছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আগামীকাল সকাল ১০টায় আবারও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করবো।’

মানববন্ধনে বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল ও মহাসচিব আবদুল মজিদ, ডিইউজের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার ছাড়াও অন্যান্য সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য দেন।

বক্তারা সাংবাদিক রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে তাকে আটকে রেখে হেনস্তার নিন্দা জানান। রোজিনার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (১৭ মে) বিকেল ৩টার দিকে রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। স্বাস্থ্য সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষে ফাইল থেকে নথি সরানোর অভিযোগে তাকে ওই রুমে আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। তার ওপর নির্যাতনেরও অভিযোগ তোলেন রোজিনা। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর তাকে শাহবাগ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

রাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় অফিসিয়াল সিক্রেসি আইনে মামলা করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী।

পরের দিন মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে শাহবাগ থানা পুলিশ। আদালত রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (২০ মে) দিন ধার্য করেন আদালত।

এএ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন