আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

দায় স্বীকার, আইএসআইএস’র

দায় স্বীকার, আইএসআইএস’র


আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট তথা আইএস। বৃহস্পতিবার রাতে আইএস তাদের নিজস্ব বার্তা সংস্থা আমাকের মাধ্যমে বিষয়টি জানায়। পাশাপাশি তারা ওই আত্মঘাতীর ছবিও প্রকাশ করে।

মূলত আইএসের সহযোগী সংস্থা ইসলামিক স্টেট খোরাশান (আইএসআইএসকে) এই হামলা চালিয়েছে। যারা এর আগে মার্কিন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সিরিয়া ও ইরাকে যুদ্ধ করেছে।

আইএসআইএসকে জানায়, ইসলামিক এই দলটির এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী কাবুল বিমানবন্দরের কাছে ‘ব্যারন ক্যাম্প’- এ মার্কিন সেনাবাহিনী ও তাদের হয়ে কাজ করা আফগান এবং দোভাষীদের ভিড়ে ঢুকে যেতে সক্ষম হয়েছে। এরপরই তাদের মধ্যে বিস্ফোরক বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটায় সে।
 
জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসএর একটি আঞ্চলিক সহযোগী সংগঠন আইএসআইএসকে , যারা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে সক্রিয়।

বিবিসি জানায়,  আফগানিস্তানের জিহাদি গ্রুপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় এবং সহিংস এই আইএসআইএসকে।

আইএস যখন ইরাক ও সিরিয়ার বড় একটি অংশ দখল করে নিয়ে খেলাফত কায়েমের ঘোষণা দিয়েছিল, সেই সময় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে আইএসআইএসকের গোড়াপত্তন হয়।

ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ৯০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১২ জন মার্কিন সেনা রয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। নিহতদের মধ্যে বিদেশি নাগরিক ও শিশু বেশি।

আত্মঘাতী এই হামলায় অন্তত ১৪০ জন আহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, তাদের ১২ সেনাও নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তালেবান সদস্যরাও রয়েছেন। ঘটনাস্থলে বেশ কিছু মরদেহ পড়ে থাকার ছবিও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এদিকে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, মার্কিন কর্মকর্তারা এ ঘটনার জন্য আইএসআইএস-খোরাসান গ্রুপ দায়ী বলে মনে করছেন। মার্কিন সরকারের গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরেক সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনা তদন্ত করে দেখছে। এই হামলার ধরন দেখে এটি আইএসআইএসকের বলে মনে হচ্ছে।

এরই মধ্যে লোকজনকে সরিয়ে নিতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞের মধ্যেই সম্ভাব্য হামলার সতর্কতা জারি করেছিল পশ্চিমা দেশগুলো। বিমানবন্দর এড়িয়ে চলতে নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। এক কর্মকর্তা বলেন, সেখানে আত্মঘাতী হামলার ঝুঁকি রয়েছে।

এদিকে কাবুল বিমানবন্দরে দেশ ত্যাগে আফগানদের হিড়িক বেড়েই চলেছে। এখনো দশ হাজারের বেশি আফগান বিমানবন্দরে দেশত্যাগের অপেক্ষায় রয়েছেন।

৩১ আগস্টের আগে বিদেশি ও আফগান নাগরিকদের কাবুল বিমানবন্দর ত্যাগে তালেবান কোনো বাধা না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এদিকে তালেবানকে রুখতে পাঞ্জশিরে একাট্টা হয়েছে সরকারি বাহিনী ও স্থানীয় সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলো।

কোনোভাবেই থামছে না দেশ ত্যাগে মরিয়া আফগানদের ভিড়। বুধবারও কাবুল বিমানবন্দরে বিদেশি ও সাধারণ আফগানদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব মতে, ১৪ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ৮২ হাজারের বেশি মার্কিন ও আফগান নাগরিক কাবুল ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। এখনো আফগানিস্তান ছাড়ার অপেক্ষায় আছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। যতই দিন গড়াচ্ছে ততই আফগানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। উত্তাল আফগানিস্তান থেকে নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়া অব্যাহত রেখেছে মেক্সিকো, লিথুয়ানিয়াসহ বিভিন্ন দেশ।

কাবুল বিমানবন্দরে মানবেতর পরিস্থিতি তৈরি হলেও তালেবানের হাতেই নিজেদের সপে দিতে শুরু করেছেন অনেক আফগান নাগরিক। তালেবানের হাতে আফগানিস্তান চলে যাওয়ার দুই সপ্তাহ হতে চলেছে। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। তবে ১০ দিন ধরে ব্যাংক বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছেছে।

মুক্তা মাহমুদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন দায় | স্বীকার | আইএসআইএসর