খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় সভাপতি কর্মবিরতি প্রত্যাহারের নির্দেশনা দিলেও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেনি খুলনা বিএমএ। ডা. নিশাতের ওপর হামলাকারী গ্রেপ্তার ও তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এছাড়া আগামী শনিবার (৪ মার্চ) দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী বিএমএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি রোগীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া বিএমএ’র কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন খুলনা বিএমএ নেতাদেরকে ফোন করে একই নির্দেশনা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল চত্বরে যে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কর্মসূচি ছিল তা বাতিল করা হয়।
বেলা ১১টায় খুলনা বিএমএ কার্যালয়ে জরুরি সভা করেন চিকিৎসকরা। প্রায় তিন ঘণ্টার সভায় কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
জরুরি সভা শেষে বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম জানান, ডা. নিশাত আবদুল্লাহর ওপর হামলাকারী পুলিশের এএসআই নাঈমকে গ্রেপ্তার এবং ডা. নিশাতসহ ২ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। আগামী শনিবার দুপুর ১২টায় আবু নাসের হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে। এ ছাড়া ওই দিন সন্ধ্যায় বিএমএ কার্যালয়ে সাধারণ সভা করা হবে। ওই সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছে। চিকিৎসকের ওপর হামলাকারী পুলিশ সদস্য হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। যদি তাদের দাবি পূরণ না হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ এবং প্রয়োজনে গণপদত্যাগ করার হুঁশিয়ারি দেন।
সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার জানান, এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখকে বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।
নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মমতাজুল হক বলেন, হামলার অভিযোগে ডা. নিশাত আবদুল্লাহ গেল মঙ্গলবার মামলা করেন। আর শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও মেয়ের অঙ্গহানির অভিযোগে বুধবার মামলা করেন এএসআই নাঈমের স্ত্রী নুসরাত আরা ময়না। তারা ইতোমধ্যে দুটি মামলার তদন্ত শুরু করেছেন। হামলার ঘটনাস্থল হক নার্সিং হোম থেকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি মামলার বিভিন্ন আলামত ও কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নাঈমের স্ত্রী নুসরাত আরা ময়না। তিনি শ্লীলতাহানি ও স্বামীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির জন্য ডা. নিশাত আব্দুল্লাহর কঠোর বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে তাদের অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি অনুরোধ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার স্বামীকে হয়রানি ও আমার মেয়েকে চিকিৎসা বঞ্চিত করা হচ্ছে, তার ফলে আমার মেয়ের হাতের অবস্থার যে অবনতি হচ্ছে এই দায়ভার কে নেবে?
চিকিৎসকদের অভিযোগ, গেল ২৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর একটি ক্লিনিকে ডা. নিশাত আবদুল্লাহকে মারধর করেন পুলিশের এএসআই নাঈম ও তার সঙ্গীরা। তার মেয়েকে ভুল চিকিৎসার কথা বলে এই হামলা চালানো হয়।