ইসরাইলের টানা হামলা এবং মানবিক সহায়তার তীব্র ঘাটতির কারণে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা মানবিক বিপর্যয়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর চালানো বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ১০০ ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন ত্রাণ ও সহায়তা সংগ্রহের সময় এমনটাই জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, খাদ্যের অভাবে অনাহারে মারা গেছেন আরও ১০ জন। চলমান সংকটে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১১ জনে, যার অধিকাংশই ঘটেছে বিগত কয়েক সপ্তাহে।
জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানায়, ২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ বছরের নিচে বয়সী অন্তত ২১ শিশু মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের বেশিরভাগই ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে পুষ্টির মারাত্মক ঘাটতির কারণে। সংস্থাটির মতে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্রায় ৮০ দিন ধরে গাজায় কোনও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। যদিও বর্তমানে সীমিত সহায়তা প্রবেশ করছে, তবে তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
এদিকে মানবাধিকার ও ত্রাণসংক্রান্ত ১১১টি আন্তর্জাতিক সংস্থা যার মধ্যে মার্সি কর্পস, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল এবং রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনাল এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় এখন 'গণ-অনাহার'-এর বাস্তব পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্তে থাকা বিপুল পরিমাণ খাদ্য, পানি ও ওষুধের মজুদ থাকা সত্ত্বেও সেগুলো ভেতরে প্রবেশ করাতে না পারায় সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজ্জুম বলেন, “এখন ক্ষুধাও যেন একটি নতুন যুদ্ধাস্ত্রে পরিণত হয়েছে। মানুষ তাদের ন্যূনতম চাহিদার খাবারও চাইতে পারছে না।”
তিনি আরও বলেন, “গাজার মানুষ আজ ধীরে ধীরে, ব্যথাতুর এক মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এ যেন এক পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ, যা ইসরাইলি বাহিনীর নীতিরই ফল।”
উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ইসরাইল গাজার ওপর সকল ধরনের পণ্য সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। এরপর মে মাসে কিছু সীমিত সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও সেগুলো বিতরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ও বিতর্কিত সংস্থা 'গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)' যার কার্যক্রম নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নানাবিধ প্রশ্ন ও সমালোচনা রয়েছে।
এসকে//