ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়ার প্রায় এক মাস পর ক্লাসে ফিরেছেন ফুলপরী খাতুন। পরী ইসলামী বিশ্বিবদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। সোমবার সকাল ১১টায় তিনি ক্লাসে প্রবেশ করেন। প্রথম ক্লাসের আগে ফুলপরী কিছুটা ইতস্তত বোধ করলেও শিক্ষক ও সহপাঠীদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তার মধ্যে আর ভয় বা শঙ্কা কাজ করছে না এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে বাবা-মায়ের ও নিজের লালিত স্বপ্ন পূরণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। এদিকে ফুলপরীকে ক্লাসে পেয়ে সহপাঠীদের মাঝেও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। এর আগে রবিবার তার বাবা আতাউর রহমান ক্যাম্পাসে এসে তার পছন্দের হল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে রেখে যান।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়। ক্লাস শুরুর আগে ফুলপরী অতিথি হিসেবে দেশরত্ম শেখ হাসিনা হলে ওঠেন। ওই হলে তার এটাচমেন্টও ছিল বলে জানা গেছে। তবে হলে উঠে সিনিয়রদের ও হলের ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাকে না জানানোর কারণে ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি ভয়ে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি চলে যান। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগ দিতে ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। এরপর তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দিতে হল পছন্দ করতে কয়েক দফা ক্যাম্পাসে এলেও ক্লাসে ফেরা হয়নি তার। ফলে প্রায় একমাস শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ায় কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন। তবে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় সভাপতি।
এর আগে উচ্চ আদালত থেকে পছন্দের হল বরাদ্দের নির্দেশের পর গত ৪ মার্চ (শনিবার) ক্যাম্পাসে এসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। পরে ওই হলের একটি কক্ষে তাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। হল বরাদ্দ দেওয়া হলে সেদিন বাড়ি ফিরে যান তিনি। এরপর রবিবার (১২ মার্চ) বঙ্গমাতা হলে উঠেছেন পরী।
ক্লাসে ফেরার অনুভূতি জানিয়ে ফুলপরি বলেন, ‘আজকে প্রথম দিনের ক্লাসের মত অনুভূতি হচ্ছে। যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। সহপাঠী ও শিক্ষকদের আন্তরিকতা আমাকে আরো বেশি মুগ্ধ করেছে। আমি প্রথমে অনেক ভয়ে ছিলাম। তবে এখন সবকিছু স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। আর কোনো ভয় বা সংকোচ নেই। আমাকে হলেও সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমি সেখানেও ভালো আছি।’
ফুলপরীর সহপাঠী ও ওই ব্যাচের শ্রেণি প্রতিনিধি রায়হান বলেন, ‘গত একমাস ক্লাস করেনি। তবে আজকে ক্লাস করেছেন। ফুলপরী খুব বন্ধুসুলভ। তার সাহসিকতা দেখে আমরা সবাই মুগ্ধ। এমন সাহসী ক্লাসমেট পেয়ে আমরা গর্বিত। ফুলপরীর যেন ক্লাস বুঝতে কোনো সমস্যা হলে পাশাপাশি যেসব ক্লাস করতে পারেনি এ ব্যাপারে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’
তার সহপাঠী বান্ধবীরা বলেন, ‘ফুলপরীকে ক্লাসে পেয়ে আমরা আনন্দিত। সে সবার সাথে ভালভাবে মিশে গেছে। আমরা তার যেকোন সহযোগীতায় পাশে থাকব। আমরা একসঙ্গে সুন্দর পড়াশোনা শেষ করতে চাই। আর প্রত্যাশা থাকবে তার সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি যেন অন্য কারও সঙ্গে না হয়। আমরা মনে করি তার মতো সকল মেয়েদর সাহসী হওয়া উচিত।’
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, ‘আজকে ফুলপরী ক্লাস করেছেন। এখন থেকে নিয়মিত ক্লাস করবে। আমরা ওই ছাত্রীর খোঁজ-খবর রাখছি। একাডেমিক কমিটির মিটিংয়েও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। ওই ছাত্রী ক্লাসে এলে যেন কোন ধরণের নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় না পড়ে এবং কোন ধরণের বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়তে না হয় এ নিয়ে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন পর্যন্ত খুব বেশি ক্লাস হয়নি। তবে সে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় আমরা বিষয়টি দেখব।’