আর্কাইভ থেকে জাতীয়

পাহাড়ে বিশেষ অভিযান চালাবে র‌্যাব

পাহাড়ে বিশেষ অভিযান চালাবে র‌্যাব
দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্যে গঠিত এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ (১৯ মার্চ)। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে র‌্যাবের জনবল ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা। বর্তমানে সারা দেশে এ এলিট ফোর্সের ব্যাটালিয়ন সংখ্যা ১৫টি। যেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের বাছাই করা চৌকস কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত এ বাহিনী ২০০৪ সালে স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর দিনটিকে ‘রাইজিং ডে’ হিসেবে পালন করে আসছে বিশেষ এ বাহিনী। বর্তমানে বাহিনীর মহাপরিচালকের (ডিজি) দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন। চাকরিজীবনে ডিএমপিতে বেশ কয়েকটি পদে চাকরি করেছেন এম খুরশীদ হোসেন। চলচ্চিত্র অভিনেতা সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। সেসময় তিনি আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। গেলো বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান খুরশীদ হোসেন। এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পান। র‌্যাবের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে র‌্যাব সদর দপ্তরে বাহিনীর মহাপরিচালকের সঙ্গে ব্যক্তিগত ও র‌্যাব নিয়ে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা হয়। এম খুরশীদ হোসেন বলেন, র‌্যাব এলিট ফোর্স। সমস্ত বাহিনী থেকে চৌকস সদস্যদের নিয়ে র‌্যাব গঠন করা হয়েছে। আমাদের মূলমন্ত্র ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’। আমরা আমাদের মূলতন্ত্র ধারণ করি, লালন করি, পালন করি। আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। এজন্য র‌্যাবের প্রতি মানুষের আস্থা, ভালোবাসা ও মানুষ র‌্যাবকে নিরাপত্তার প্রতীক মনে করে। আমরা অপশক্তি, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে আতঙ্কের প্রতীক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাই। ‘আমি মনে করি র‌্যাব সব দিক থেকে সফল। এখানে আসার পর দেখছি, মানুষ যে কোনো সমস্যায় র‌্যাবের কাছে আসে। প্রতিদিন ২০-২৫ জনের সমস্যা নিয়ে সরাসরি কথা বলি। র‌্যাবের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। আমরা আইনের মধ্যে থেকে মানুষের পাশে থাকি, বেআইনি কোনো কাজ করি না। এজন্যই মনে করি র‌্যাব ভালো কাজ করছে।’ তিনি বলেন, আমেরিকা র‌্যাবের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর দেশটির দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। তিনি র‌্যাবকে নিয়ে প্রশংসা করেছেন। এক সময় র‌্যাবকে নিয়ে কথা উঠতো। কিন্তু এখন সেগুলো নেই। আর প্রতিটি সেক্টরেই ভালো-মন্দ মানুষ থাকবে। এটা আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা প্রতিটি সদস্যকে বলি কোনো ব্যক্তির দায় বিভাগ বা বাহিনী বহন করবে না। তবে মাঝে মধ্যে আমাদের লোক বিপথগামী হয়। হয়তো নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এগুলো করে। তবে আমি কাজে দুটো জিনিস ফলো করি। এক. ডিসিপ্লিনের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স। দুই. ওয়েল ফেরার শতভাগ। ‘সম্প্রতি ময়মনসিংহে র‌্যাবের সুইপারের বাচ্চাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। কারণ তার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল সড়কপথে আনলে বাচ্চাটা মারা যেত। এই উদাহরণ টেনে র‌্যাব ডিজি বলেন, প্রথমে আমার এডিজি অপারেশন ফোন করে জানান- বাচ্চাটার এত খারাপ অবস্থা তাকে দ্রুত সিএমএইচে আনতে হবে। তবে অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সড়কপথ দিয়ে আনা যাবে না। এজন্য হেলিকপ্টার দরকার। এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি হেলিকপ্টার পাঠিয়ে দিয়েছি। আমরা মানবিক কাজগুলো এভাবেই করি। তবে কোনো সদস্য অন্যায় করে পার পাবে না। তার দায় তাকেই বহন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে ট্রেনিং নেয়া প্রায় অর্ধশতাধিক জঙ্গি সদস্যকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এই জঙ্গিরা পাহাড়ে গিয়ে কেএনএফ’র সহায়তায় সেখানে প্রশিক্ষণ নিতো। আমরা সবাইকে ধরতে কাজ করছি। তারা যে এড়িয়ায় ক্যাম্প করেছে, সেটা মিয়ানমার ও মিজোরাম সীমান্ত ঘেঁষা। যে কোনো অপরাধ করে তারা সহজেই সীমান্তে প্রবেশ করছে। সেখানকার ভৌগলিক কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ক্যাম্প সেখানে নেই। আমরা তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করেছি, তারাও তো চেষ্টা করবে আমাদের আক্রমণ করার। আমরা সেখানে নিরাপত্তা ও অভিযান জোরদার করবো। এটা নিয়ে দেশবাসীর হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমরা নতুন করে অন্য প্ল্যানে অভিযান শুরু করবো। মহাপরিচালক বলেন, হঠাৎ করেই ঘরছাড়াদের আমরা যখন খুঁজতে বের হলাম তখন নতুন জঙ্গি সংগঠন সম্পর্কে জানতে পারলাম। পাহাড়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এর আগে তো আমরা জানতাম না কেএনএফ তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। গভর্নমেন্ট মেশিনারিজের সামনে কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ টিকে থাকতে পারে এটা আমি বিশ্বাস করি না। ওদের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে যা যা করার আমরা করবো। খুরশীদ হোসেন বলেন, হরকাতুল জিহাদের নেতাদের ধরেছি, তখন জানতে পেরেছি তাদের টাকা আসে বিদেশ থেকে। পাহাড় থেকে যেসব জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের কাছে নগদ টাকাও পাওয়া গেছে। আমরা জানি বিদেশ থেকে কিছু লোক জঙ্গিদের সাপোর্ট দিচ্ছে। আমরা সব বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ইংল্যান্ড থেকে টাকা আসছে জঙ্গিদের। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কোনো দেশ থেকে টাকা আসার তথ্য মেলেনি, তবে ইউকে থেকে পেয়েছি। এসব বিষয় আমাদের নলেজে আছে, গোয়েন্দারা কাজ করছে। এসব বিষয় নিয়ে আমি বা র‌্যাব চিন্তিত না। আমরা যখন ভালো সাপোর্ট পাবো তখন কেউ টিকতে পারবে না। তিনি বলেন, আমি এই বাহিনীকে আরও স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। আমি চাচ্ছি তার আগেই র‌্যাব ফোর্সেস স্মার্ট বাহিনী হিসেবে কাজ করবে। র‌্যাব প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর জঙ্গি ইস্যুতে আপনাদের প্রশ্নের উত্তরে মনের অজান্তে বলে ফেলেছিলাম- ‘র‌্যাব জঙ্গিদের থেকে অনেক স্মার্ট’। দেশবাসীর সহযোগিতায় আমরা চাই, র‌্যাব ঠিক স্মার্ট ফোর্স হিসেবে যে কোনো নিরাপত্তা, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান, জঙ্গিবিরোধী অভিযান এবং যে কোনো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দুর্যোগে র‌্যাব সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাবে। ‘র‌্যাব বিগত ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের যে কোনো দুর্যোগে, নিরাপত্তা-আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং মানবিক সহায়তায় র‌্যাব কাজ করছে। ভবিষ্যতে এই কাজগুলো পেশাদারিত্বের সঙ্গে এবং মানবাধিকার সম্মুন্নত রেখে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। বর্তমানে যে গণতান্ত্রিক ধারা, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সে দায়িত্ব যেন পালন করতে পারি সেজন্য সবার সহযোগিতা দরকার।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন পাহাড়ে | বিশেষ | অভিযান | চালাবে | র‌্যাব