আর্কাইভ থেকে আইন-বিচার

ফ্রি ফায়ার-পাবজি গেমস দেখে দুইজনকে হত্যা করে রায়হান

ফ্রি ফায়ার-পাবজি গেমস দেখে দুইজনকে হত্যা করে রায়হান
পটুয়াখালীর বাউফলে আলোচিত ১০ম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি রায়হান ও তার অন্যতম সহযোগী হৃদয়কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। আজ মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান। র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার রায়হান নিয়মিত ফ্রি-ফায়ার ও পাবজি গেমসে আশক্ত ছিল। এসব গেমসে মারামারি দেখে এ ধরনের নৃশংস কাজে উৎসাহী হয় সে। তিনি বলেন, গেলো ২২ মার্চ পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মারুফ হোসেন বাপ্পী ও মো. নাফিজ মোস্তফা আনছারী একই স্কুলের কয়েকজন উশৃঙ্খল শিক্ষার্থীর হাতে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হয়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার বাদী হয়ে বাউফল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলে র‌্যাব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২৭ মার্চ) রাতে র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল নরসিংদীর রায়পুরা ও রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মো. রায়হান কাজী ওরফে রিমন (১৫) ও মো. হাসিবুল ইসলাম ওরফে হৃদয়কে (১৫) গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে। ফ্রি ফায়ার-পাবজি গেমস দেখে দুইজনকে হত্যা করে রায়হান ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২২ মার্চ ক্লাসের বিরতির সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈকত ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফের মধ্যে কাটাকাটি হয়। এরই মধ্যে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান এগিয়ে এসে সৈকতের পক্ষ নিয়ে মারুফ ও তার সহপাঠী নাফিজ, সিয়ামসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আশপাশের আরও কিছু শিক্ষার্থী এগিয়ে এলে ওই স্থানে নবম এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু তৎক্ষণাৎ ক্লাস শুরু হওয়ার সময় হয়ে যাওয়ায় তারা যার যার ক্লাসে চলে যায়। দুপুরে টিফিনের বিরতিতে পুনরায় তাদের দেখা হলে রায়হান দশম শ্রেণির মারুফসহ অন্যান্যদের পরে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়। গত ১৯ মার্চ সকালে মারুফের বন্ধু সিয়াম এবং রায়হানের মধ্যে তর্কবিতর্কের ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে পূর্ব শত্রুতা থাকায় একটি রেষারেষির পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল। পূর্বের ঘটনার জের ধরে রায়হান ও তার সহপাঠীদের মধ্যে প্রতিশোধ প্রবণতা ও উত্তেজনা দেখা দেয়। ফলে ওই দিনের অমিমাংসিত ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ঘটনার দিন স্কুল ছুটির পরপর রায়হান তার দলবল নিয়ে মারুফসহ অন্যান্যদের পিছু নিতে থাকে। র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, রায়হানসহ আরও বেশ কয়েকজন বিদ্যালয় সংলগ্ন পাংগাশিয়া ব্রিজের কাছাকাছি গিয়ে মারুফ, নাফিজ, সিয়ামসহ অন্যান্যদের ব্রিজের ওপর গতিরোধ করে। এসময় রায়হানের নেতৃত্বে ব্রিজের ওপর আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাইদুর ওরফে সৈকত, হাসিব ওরফে হৃদয়, নাঈম হোসেন, সিফাত এবং মশিউর মিলে মারুফ, নাফিজসহ অন্যান্যদের মারধর শুরু করে। এরপর রায়হান এলোপাতাড়ি সিয়াম, মারুফ ও নাফিজকে ছুরিকাঘাত করতে থাকে। রায়হানের ছুরিকাঘাতের ফলে তারা মারাত্মকভাবে আহত হয়। ঘটনাস্থলে তিন শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে হত্যাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে সিয়াম, নাফিজ ও মারুফকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মারুফ ও নাফিজকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মারুফ এবং নাফিজকে মৃত ঘোষণা করেন। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, ঘটনার কয়েকদিন আগে ইন্দ্রকুল বটতলা চৌরাস্তা বাজারে মারুফের বন্ধু সিয়ামের সঙ্গে গ্রেফতার রায়হানের তর্কবিতর্ক হয়। এর একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এছাড়াও তাদের মধ্যে পূর্ব থেকে বেশ কিছু বিরোধ চলে আসছিল। এসব ঘটনার জের ধরে স্কুল ছুটির পর রায়হানের নেতৃত্বে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। গ্রেফতার রায়হান নিয়মিত ফ্রি-ফায়ার ও পাবজি গেমসে আশক্ত ছিল। এসব গেমসে মারামারি দেখে এ ধরনের নৃশংস কাজে উৎসাহী হয়েছে বলে সে জানায়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ফ্রি | ফায়ারপাবজি | গেমস | দেখে | দুইজনকে | হত্যা | করে | রায়হান