আর্কাইভ থেকে আইন-বিচার

'ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার' স্থাপনের বিষয়ে হাইকোর্টের রায়

'ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার' স্থাপনের বিষয়ে হাইকোর্টের রায়
কর্মস্থল, এয়ারপোর্ট, বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশন, শপিংমলের মতো জনসমাগমস্থলে এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত, পরিচালিত ও ব্যবস্থাপনায় বিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রোববার (২ এপ্রিল) এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট তানজিলা রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান। রায়ের পর আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, মা ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিলের পরিপ্রেক্ষিতে রুল, নির্দেশনাগুলো এবং চূড়ান্ত শুনানির পর আজ হাইকোর্ট এ যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করলেন। আমাদের সংবিধানের ৩২নং অনুচ্ছেদে স্বীকৃত অন্যতম মৌলিক অধিকার জীবনের অধিকার বিষয়ে এ রায় নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক রায়। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ব্রেস্টফিডিং রুম ইতোমধ্যেই স্থাপিত হয়েছে। এই যুগান্তকারী রায়ের পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে কর্মজীবী নারীরা শিশুদের কর্মক্ষেত্রে রেখেই স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবেন। আমি মনে করি, কর্মস্থল, বিমানবন্দর, রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, শপিংমলসহ সব জনবহুল স্থানে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর নিরাপদ পরিবেশ সম্বলিত ব্রেস্ট ফিডিং রুম ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপন সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের জন্য একটা উদাহরণ সৃষ্টি করবে, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য অনুসরণীয় হবে। এর আগে, ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর কর্মস্থল, এয়ারপোর্ট, বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশন, শপিংমলের মতো জনসমাগমস্থলে এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত, পরিচালিত ও ব্যবস্থাপনায় বিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্ট ফিডিং ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন। জনস্বার্থে ৯ মাস বয়সী শিশু উমাইর বিন সাদী ও তার মা অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে এ রুল জারি করেন আদালত। ইশরাত হাসান বলেন, বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে ৯ মাস বয়সী কোনো শিশু এই প্রথম পিটিশনার হয়েছে। ছোট্ট শিশুর রিট পিটিশনার হতে আদালতের অনুমতিও নিতে হয়েছিল ওই সময়ে। পরে ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রাহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ সারা দেশের কলকারখানা ও মিলগুলোতে দুই মাসের মধ্যে ব্রেস্ট ফিডিং রুম স্থাপনের নির্দেশ দেন। ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর কর্মক্ষেত্র, শপিংমল, এয়ারপোর্ট, বাসস্টপ, রেলওয়ে স্টেশনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়। রিটে মন্ত্রী পরিষদ সচিব, নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, বিমান ও পর্যটন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। রিটে বলা হয়, এমন পরিবেশে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করতে হবে যেখানে কোনো মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে কোনো অস্বস্তি বোধ করবে না বা যৌন হয়রানির শিকার হবে না। সেটা নিশ্চিত করতে হবে। শিশু উমাইরের মা ওই সময় বলেছিলেন, অনেক কর্মস্থলে বা বাস, ট্রেন স্টেশনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার না থাকায় মায়েদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নিরাপদ পরিবেশের অভাবে ও যৌন হয়রানির ভয়ে মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ পান করাতে পারেন না। অথচ একজন শিশুর মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মায়ের বুকের দুধ। আমার মতো হাজার হাজার মা এ সমস্যার সম্মুখীন হন। রিট আবেদনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়। উল্লেখ্য, উমাইর মা-বাবার সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল কক্সবাজারে। সমুদ্র সৈকতে বেড়ানো শেষে ঢাকায় ফেরার পথে কক্সবাজার বিমানবন্দরে উপস্থিত হন। সেখানে অনিবার্য কারণে ফ্লাইটে কয়েক ঘণ্টার বিলম্ব হয়। কিন্তু সেখানেই বিপদে পড়ে সে। প্রচুর ক্ষুধায় কান্নাজুড়ে দেয়। শিশুটির কান্না থামাতে মা বুকের দুধ খাওয়ানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু তার মা শিশুটিকে দুধ খাওয়ানোর কোনো পরিবেশই পাচ্ছিলেন না। পরে ঢাকায় এসে শিশু উমাইরকে নিয়ে তার মা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ব্রেস্ট | ফিডিং | কর্নার | স্থাপনের | বিষয়ে | হাইকোর্টের | রায়