আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ড্রামভর্তি কেমিক্যাল ছিল সোয়ারীঘাটের জুতার কারখানায়

ড্রামভর্তি কেমিক্যাল ছিল সোয়ারীঘাটের জুতার কারখানায়

রাজধানীর সোয়ারীঘাটের কামালবাগে রোমানা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামে জুতার কারখানায় আগুনের ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে দগ্ধ হয়েছেন আরও দুজন। হতাহতদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়া জানিয়েছেন, রোমানা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কারখানায় বার্মিজ ও স্পন্সের জুতা তৈরি হতো। এ কারখানাটিতে জুতা তৈরিতে ব্যবহৃত রাবার, প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল ভর্তি অনেক ড্রাম ছিল। এসব দাহ্য পদার্থের কারণেই আগুন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।

কামালবাগে আবাসিক এলাকা থেকে ১০০-১৫০ গজ দূরে কারখানাটিত অবস্থিত। দুতলা বিশিষ্ট ভবনটিতে প্রবেশের সময় নিচতলায় কেমিক্যাল ভর্তি একাধিক ড্রাম পাওয়া গেছে। এছাড়া দুটো তলাতেই জুতা বানানোর কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও রাবার পড়ে ছিল। আগুনের কারণে এসব প্লাস্টিক ও রাবারসহ গোটা গোডাউন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে 

আগুনে কারখানাটির পাশে থাকা মদিনা বাজার নামে একটি কাঁচাবাজারও আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এ বাজারে থাকা সব ধরনের মালামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পুড়ে গেছে।

ভবনটি দুতলা হলেও একতলার ওপর পাটাতন দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে শ্রমিকদের থাকার জন্য খোপ তৈরি করা ছিল। আর সেখান থেকেই নিহত পাঁচ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। পুড়ে যাওয়া জুতার কারখানার আশপাশে একাধিক কেমিক্যালের দোকানের রয়েছে।

ঐ এলাকায় নাইট ডিউটিতে কাজ করছিলেন আমির হোসেন। তিনি বলেন, রাত ১টার দিকে বিকট শব্দ শুনতে পাই। সাথে সাথেই আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি, কারখানাটিতে দাও দাও করে আগুন জ্বলছে। আগুনের তাপ অনেক বেশি হওয়ায় আশপাশে যাওয়া যাচ্ছিল না। 

তিনি বলেন, আমি নিজেও জুতার কারখানায় কাজ করি। বার্মিজ জুতা বানাতে ডিওপি তেল ব্যবহার করা হয়। এখানেও এই কেমিক্যাল ছিল। এছাড়া জুতা বানাতে ব্যবহার করা হয় প্লাস্টিক ও রাবার ছিল। 

এদিকে জুতার কারখানাটির পাশের মদিনা ট্রান্সপোর্ট মার্কেটের সুভারভাইজার মো. রফিক বলেন, ১০-১২ বছর আগে রফিক হাজী জমি লিজ নিয়ে কারখানাটি তৈরি করেন। রফিক হাজীর বাসা চকবাজারের রহমতগঞ্জের হাজী রোডে। রাত ১টার দিকে মার্কেটের নাইট গার্ড ফোন দিয়ে আগুন লাগার কথা জানান। সকালে এসে দেখি কারখানাটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এ সময় আগুনে পুড়ে পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যুর কথাও জানতে পারি।

তিনি আরো বলেন, বার্মিজ জুতা বানাতে প্রচুর পরিমাণে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। সেখানে তা ছিল। তবে এসব কেমিক্যালে আগুন লাগে কি-না তা আমি জানি না।

এদিকে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আলামত সংগ্রহ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইড) ক্রাইম সিন।

সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের প্রধান পরিদর্শক মো. সাইফুর রহমান ভুঁইয়া জানান, ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। কেমিক্যাল সাদৃশ্য কিছু আলামত পেয়েছি। এগুলো সিআইডির রাসায়নিক ল্যাবে পরীক্ষা করলেই কেবল জানা যাবে আসলে এগুলো দাহ্য পদার্থ ছিল কি-না।

তিনি আরো বলেন, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া পাঁচ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু মরদেহগুলো আগুনে মারাত্মকভাবে পুড়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ডিএনএ পরীক্ষার ছাড়া মরদেহগুলো শনাক্ত করা যাবে না।

এ বিষয়ে চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবদুল কাইউম গণমাধ্যমকে জানান, পাঁচ শ্রমিক নিহত হয়েছেন তবে হতাহত হবার কোন খবর তিনি জানেন না। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের সহকারী উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, কী কারণে বা কীভাবে এই আগুনের সূত্রপাত তা প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে প্রচুর পরিমাণে রাবার জাতীয় কাঁচামাল পাওয়া গেছে। রাবার এক ধরনের পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ। এছাড়াও ডিওপি তেল মজুদ ছিল, যা দাহ্য পদার্থ। তবে আগুনের প্রকৃত কারণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।

প্রসঙ্গক্রমে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে সোয়ারীঘাট এলাকার জুতার কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা কাজ করে রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

মুক্তা মাহমুদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ড্রামভর্তি | কেমিক্যাল | ছিল | সোয়ারীঘাটের | জুতার | কারখানায়