আর্কাইভ থেকে আমদানি-রপ্তানি

পোশাক রপ্তানি এপ্রিলে কমেছে ১৫ শতাংশ

পোশাক রপ্তানি এপ্রিলে কমেছে ১৫ শতাংশ
দেশ থেকে পোশাক রপ্তানি কমের দিকে ধাবিত হচ্ছে। গেলো কয়েক মাস থেকেই আমাদের পোশাক রপ্তানিতে একটি মন্দাভাব শুরু হতে যাচ্ছে। বললেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। বৃহস্পতিবার (১১ মে) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ২০২১-২২ সালে আমরা যে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিলাম তা করোনার পর চাহিদা, কাঁচামাল, ফ্রেইড খরচ ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির জন্য হয়েছিল। গেলো ৬ মাসে আমাদের রপ্তানিতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে পরিমাণে রপ্তানি কমেছে, সেই চিত্রটি আমাদের রফতানি পরিসংখ্যানে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে। আর চলতি বছরের সর্বশেষ দুই মাস মার্চ-এপ্রিলে আমাদের পোশাক রপ্তানি মূল্যের দিক থেকেও নেগেটিভে চলে গেছে। মার্চ মাসে আমাদের রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং এপ্রিলে রপ্তানি কমেছে ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি একটি সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একদিকে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিশিলতা, অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ সারা পৃথিবীতে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি। এসবের প্রভাবে যেমন উৎপাদন খরচ বেড়েছে তেমনি ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে উন্নত দেশগুলোতে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা ও ব্যয় কমে এসেছে। ফারুক হাসান বলেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পাবে। যা বিগত ৩০ বছরে মধ্যে সর্বনিম্ন। পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের ২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ১ দশমিক ৭ শতাংশ নেমে আসবে বলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছে। এছাড়া আইএমএফ আশঙ্কা করছে- ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির এক তৃতীয়াংশ মন্দার মুখোমুখি হবে, এমনকি যে দেশগুলো মন্দায় নেই, ওই অর্থনীতিগুলোও মন্দার মুখোমুখি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধান বাজারগুলোর পোশাক আমদানির চিত্র যদি দেখি তবে, সেখানে মূল্য এবং ভলিউমে আরও বিস্তারিত বিশ্লেষণ দেখতে পাব। আমরা অটেক্সা এবং ইউরোস্ট্যাটের আমদানি ডাটাগুলো শেয়ার করা হয়েছে। একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই, ইউরোপ ও আমেরিকার আমদানি পরিসংখ্যান ও আমাদের রপ্তানি পরিসংখ্যানে ১ থেকে ২ মাসের একটি টাইম গ্যাপ থাকে। যেমন- অটেক্সার মার্চের তথ্য মূলত আমাদের ইপিবি’র জানুযারির শেষভাগ এবং ফেব্রুয়ারির রপ্তানি তথ্যের প্রতিফলন। অর্থাৎ আমরা ১ থেকে দেড় মাস আগে যা রপ্তানি করেছি, সেটি এখন ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রবেশ করছে। রপ্তানি-আমদানি তথ্যগুলো সেইভাবে রেকর্ড হয়। ফারুক হাসান বলেন, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন- গেলো বছরের নভেম্বর মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি হ্রাস পেয়েছে। শুধুমাত্র নভেম্বর ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি কমেছে। আর পরিমাণে নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে আমদানি কমে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে কমে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হয়। আর এই ৫ মাস ভলিউমে আমদানি প্রবৃদ্ধি একটানা কমেছে। ফলে নভেম্বর-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি যেখানে ভ্যালুতে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ কমেছে, সেখানে ভলিউমে কমেছে ২৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইউরোস্ট্যাটের আমদানি তথ্য পর্যালোচনা করলে প্রায় একই রকম বিশ্লেষণ দেখা যায়। নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি সময়ে ইউরোপ বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি ভ্যালুতে বেড়েছে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ভলিউমে কমেছে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। অবশ্যই পণ্যের রপ্তানি মূল্য বেড়েছে বলে এমনটি ঘটেছে। যা আমরা প্রায় ৬-৭ মাস আগে থেকেই আপনাদের জানিয়ে আসছিলাম। ইউনিট প্রাইস কেন বেড়েছে, তা আমি একটু আগে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। ইউনিট প্রাইস বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা উচ্চমূল্য সংযোজিত পণ্য রপ্তানি করতে শুরু করেছি।  

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন পোশাক | রপ্তানি | এপ্রিলে | কমেছে | ১৫ | শতাংশ