কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে এক বন্দির হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ভারতে পালিয়ে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার ।
মঙ্গলবার (১৬ মে) পি কে হালদারের আইনজীবী বিশ্বজিৎ মান্না আদালতের সামনে বিষয়টি উত্থাপন করেন।
তিনি জানান, জেলে দুই দফায় পি কে হালদারের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে মারধর করা হয়েছে। বাংলাদেশে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে পি কে হালদারসহ ৬ জনকে ৪৯ দিনের জেল হেফাজত শেষে আদালতে তোলা হলে আইনজীবী এ তথ্য তুলে ধরেন।
আইনজীবী জানান, অভিযুক্তের নাম হাফিজুল মোল্লা। তিনি বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের বসিরহাটের বাসিন্দা। গেলো জুলাই মাসে তার বিরুদ্ধে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে আত্মগোপন করে থাকার অভিযোগ ওঠে। রাতভর মমতার বাড়িতে লুকিয়ে থাকার পর নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর কালীঘাট থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে ওই ঘটনার তদন্তের জন্য স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করা হয়।
আইনজীবী আরও জানান, প্রেসিডেন্সি কারাগারে বন্দি পি কে হালদারের ওপর প্রথমবার হামলা চালিয়ে মারধর করা হয় গেলো ১৮ এপ্রিল। পি কে হালদার এবং হাফিজুল মোল্লা কারাগারের একই সেলে ছিলেন। সে সময় কার্যত হাতাহাতি বেধে যায়। এ সময় ওয়ার্ডরক্ষী এসে তাদেরকে থামান। পরে কারাগারের অন্য একটি সেলে স্থানান্তরিত করা হয় পি কে হালদারকে।
তিনি আরও জানান, এরপরেও গেলো ২২ এপ্রিল সেলের বাইরে গোসল করতে যাওয়ার আগে পি কে হালদার যখন পত্রিকা পড়ছিলেন, তখনই আচমকা তার ওপর আবারও চড়াও হন হাফিজুল। এ ঘটনার পরই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পরে। দুটি ঘটনাতেই আহত হন পি কে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে আঘাত গুরুতর ছিল না।
মঙ্গলবার পি কে হালদারের অর্থ আত্মসাৎ মামলা ওঠে আদালতের স্পেশাল সিবিআই কোর্ট-৩-এর বিচারক শুভেন্দু সাহার এজলাসে। সেখান বিচারক পি কে হালদারকে জিজ্ঞেস করেন, কারাগারের নতুন যে ওয়ার্ডে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে সেখানে তিনি সন্তুষ্ট কি না? হালদার তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে তদন্তকারী সংস্থা ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)’ আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্ত্তী জানান, কারাগারের ভিতরে পি কে হালদারের ওপর হামলা হয়, তাকে মারধর করা হয়। ওই ঘটনায় তিনি আহত হয়েছিলেন। পরে ঘটনার গুরুত্ব বুঝে পি কে হালদারকে কারাগারের অন্য একটি ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়।
পি কে হালদারের ওপর হামলার প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। এ ব্যাপারে আসামিপক্ষের আইনজীবী জানান, কারাগার কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে। তারা হামলার মোটিভ সম্পর্কে বলতে পারবে। অভিযুক্তদের কাছ থেকে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে এদিন পি কে হালদারসহ অভিযুক্ত ছয়জনকে আগামী ৭ জুন ফের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার নগর দায়রা আদালত।
উল্লেখ্য, কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২০২২ সালের ১৪ মে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারসহ বাকি অভিযুক্তদের।
গেলো বছর ১১ জুলাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ইডি। অর্থপাচার ও দুর্নীতি দমন আইনের মামলায় ওই ছয় অভিযুক্তের নামে চার্জ গঠন করা হয়।
বর্তমানে অভিযুক্ত পি কে হালদারসহ পাঁচ পুরুষ অভিযুক্ত রয়েছেন প্রেসিডেন্সি কারাগারে। অন্যদিকে, একমাত্র নারী অভিযুক্ত রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে।