পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ফকিরপাড়া বিএল উচ্চবিদ্যালয়ে অবৈধভাবে দুই মৌলভি শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমপিও কাঠামো অনুযায়ী একজন মৌলভি শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও, বিদ্যালয়টিতে আট বছর ধরে দুইজন মৌলভি শিক্ষক আছেন। আট বছর ধরে তারা বেতন উত্তোলন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা কর্মকর্তারা।
স্থানীয়দের দাবি, প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজশে আইবুল হক এবং জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এই দুই শিক্ষক আট বছর ধরে প্রায় ৪২ লাখ টাকা বেতন উত্তোলন করছেন। তবে শিক্ষা অধিদপ্তরের মুদ্রণ ত্রুটির কারণে পরিস্থিতির শিকার বলে দাবি করছেন প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক।
বিদ্যালয় এবং স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৭ সালে আইবুল হককে সহকারী শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৪ সালে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বও পালন করেছিল আইবুল হক। পরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে তিনি ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিল। তৎকালীন সামাজিক বিজ্ঞানে তিনজন শিক্ষক থাকায় আইবুল হককে কোন বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল বিদ্যালয়ে।
এদিকে ২০০৯ সালে সহকারী শিক্ষক (ধর্মীয়) হিসেবে জাহাঙ্গীর হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়। পরে ২০১৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যালয়টির শিক্ষকের তালিকা চাওয়া হলে প্রধান শিক্ষক আইবুল হককে মৌলভি শিক্ষক হিসেবে তালিকা দেন। পরে ২০১৫ সাল থেকে দুইজনই মৌলভি শিক্ষক (এমআরটি) হিসেবে বেতন তুলছেন। এরমধ্যে টাইম স্কেলের জন্য আইবুল হক আবেদন করলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাকে প্রত্যাখ্যান করে। মন্ত্রণালয় থেকে আইবুল হককে মৌলভি শিক্ষক পদ পরিবর্তন করার নির্দেশনা দেন। তবে তিনি পদ পরিবর্তন না করেই বেতন তুলছেন।
চলতি বছরের এমপিও সিট অনুযায়ী বিদ্যালয়ের আইবুল হক ২৬ হাজার ৭৯০ টাকা এবং জাহাঙ্গীর হোসেন ২৩ হাজার ৩৩৪ টাকা করে প্রতি মাসে বেতন তুলছেন।
সহকারী শিক্ষক (মৌলভী) জাহাঙ্গীর হোসেন জানায়, পূর্ণাঙ্গ নিয়োগের মাধ্যমে ২০০৯ সালে আমাকে মৌলভি শিক্ষক এমআরটি হিসেবে নিয়োগ পেয়ে শিক্ষকতা করে আসছি। আমি আইবুল হককে বলেছিলাম আপনার পদ সংশোধন করে নেন। কিন্তু তিনি আমাকে বলেছিল এটা প্রধান শিক্ষকের ব্যাপার। প্রধান শিক্ষক আমার পদটি সংশোধন করবেন।
অভিযুক্ত মৌলভি শিক্ষক আইবুল হক জানান, আমি মৌলভি শিক্ষক না, আমি ইংরেজি বিষয়ে বিদ্যালয়ে পাঠদান করি। আমি আমার পদ সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। তবে আট বছর কেন সংশোধন করেননি, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।
ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ইয়াসিনুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন আইবুল হক আসলে অতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে ছিল। অবৈধভাবে স্কুলে কর্মরত রয়েছেন। এই স্কুলের কমিটিও অবৈধ। আমরা এলাকাবাসী চাই একজন মৌলভি শিক্ষকের পদে একজনই থাকবে।
স্থানীয় শিক্ষক দানিয়েল হোসেন জানান, বৈধ শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। আমি মনে করি ফকিরপাড়া বিএল উচ্চবিদ্যালয়ে যেহেতু একজন মৌলভি শিক্ষকের পদ। এজন্য একজন মৌলভি শিক্ষকের বেতন হওয়া উচিত।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক এ বিষয়ে জানান, আসলে আমাদের ভুল হয়েছে। আট বছর ধরে শিক্ষক আইবুল হক তার পদ সংশোধনের জন্য তেমন কোনো চেস্টা করেনি, তবে এ বছর আমরা সংশোধনের জন্য আবেদন করেছি। আমরা সংশোধনের চেষ্টা করছি।
এদিকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিন আকতার এ বিষয়ে প্রথমে জেলা প্রশাসকের কাছে মন্তব্য নেয়ার কথা জানায়। পরে তিনি বলেন, নথিপত্র না দেখে এবং তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না।