বিএনপির সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা প্রায় প্রস্তুত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর এ পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে জুনেই সমমনাদের নিয়ে একমঞ্চ থেকে সরকার পতনের একদফার ঘোষণা দেবে বিএনপি। ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে আন্দোলন রূপরেখার খসড়া। সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই তা চূড়ান্ত করা হবে। তবে চূড়ান্ত আন্দোলনেও থাকছে না হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে বড় জমায়েতের মধ্য দিয়ে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। একদফা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে তৃণমূলসহ সব পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে একমঞ্চ থেকে সরকার পতনের একদফার ঘোষণার পাশাপাশি রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ ঘোষণাপত্র তুলে ধরার কথা রয়েছে। বিএনপি ও সমমনাদের ঘোষিত দফাগুলো সমন্বয় করা হচ্ছে। রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপির ২৭ দফাকে ৩১ দফায় উন্নীত করে একটি খসড়াও প্রস্তুত করা হয়েছে, যা স্থায়ী কমিটি চূড়ান্ত করবে।
দলটির নেতারা মনে করেন, সম্প্রতি সব সাংগঠনিক জেলা ও মহানগরে জনসমাবেশ ও পদযাত্রার কর্মসূচিতে আন্দোলনের গতি বেড়েছে। মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর নেতাকর্মীরা আন্দোলনের মাঠে নতুনভাবে উদ্দীপনা পেয়েছেন। মাঠের এই আবহ একদফার আন্দোলন সফল করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আর কোনো দশ দফা নয়, এখন একটাই দাবি-শেখ হাসিনার পদত্যাগ। সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন। তবেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।’ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘একদফা আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এ সরকার একটি প্রতারক সরকার। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে নির্বাচন বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা রাখেনি। ফলে তাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। খুব দ্রুতই আমরা একদফা আন্দোলনে নামব। এজন্য দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা কাজ করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একজন নীতিনির্ধারক জানান, স্থায়ী কমিটির গত চারটি বৈঠকে একদফা আন্দোলন প্রশ্নে করণীয় কী কী হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরে বলেন, বিএনপিকে অপ্রস্তুত রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তড়িঘড়ি করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে পারে। যেভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে- একদফা আন্দোলনের দিনক্ষণ এগিয়ে না আনলে শেষ পর্যন্ত আন্দোলন করার মতো নেতাকর্মী মাঠে পাওয়া যাবে না। তাছাড়া সামনে আগস্ট মাস এবং বর্ষাকাল রয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে জুনেই একদফার আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, দলের সাবেক এমপি-মন্ত্রী এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এছাড়া দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক, সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা সমন্বয় বৈঠক করেছেন। সবাইকে দ্রুত একদফার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কর্মসূচি শেষে নতুন কর্মসূচি শুরু হবে। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে তরুণ সমাবেশ করার কথা রয়েছে। একদফায় নামার আগে এ সমাবেশকেও খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বিএনপি।