২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১ জুন)। এদিন জাতীয় সংসদে তা উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবার বাজেটের সম্ভাব্য আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এতে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার হচ্ছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ থেকে ৬ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
তবে ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে বিভিন্ন ধরনের পণ্যে শুল্ক ও কর আরোপ কিংবা ছাড়ের প্রস্তাবনা আসছে। জনস্বার্থে কিংবা দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। ফলে অনেক পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
সেই তালিকায় রয়েছে প্লাস্টিক পণ্য, অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, টয়লেট টিস্যু, কলম, সিলিন্ডার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও মোবাইল ফোন। বাসমতী চাল, কাজুবাদাম, খেজুরের মতো খাদ্যসামগ্রীর দর বাড়তে পারে। ডলার সাশ্রয়ে এবং শুল্ক ফাঁকি রোধে এ প্রস্তাব করা হতে পারে।
তামাক জাতীয় পণ্য সিগারেট, জর্দা, গুলের মূল্য বাড়তে পারে। সিমেন্ট, বিদেশি টাইলস, চশমা, আঠা, তৈজসপত্র ও সাইকেলের যন্ত্রাংশের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে।
দামি গাড়ি- আগামী অর্থবছরের বাজেটে দামি গাড়ির ওপর নতুন করে আরোপ হতে পারে। ফলে বাজেটে দামি গাড়ি আরও দামি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০০১ সিসি থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানিতে এখন ২০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসে। যেটা বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ এবং ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ৩৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করে ৫০০ শতাংশ করা হতে পারে।
২০০০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতাবিশিষ্ট গাড়ি সাধারণত জিপগাড়ি হয়। এখন দেশে বিপুলসংখ্যক জিপগাড়ি কিংবা এসইউভি মডেলের গাড়ি আসছে। জনপ্রিয় হচ্ছে জিপগাড়ির ব্যবহার। টয়োটা, মিতসুবিশি, নিশান, টাটাসহ নানা খ্যাতনামা কোম্পানির গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে।
নির্মাণ সামগ্রী- গেলো এক বছরে রড, সিমেন্ট, ইট ও অন্যান্য পণ্যের দাম ২০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। এতে অনেক প্রকল্পের কাজ ৫০-৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থেমে আছে। দেশে ক্রমাগত নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়তে থাকার মধ্যেই সিমেন্টের কিছু পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়তে পারে আগামী বাজেটে।
ভূমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন- রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (সিডিএ) এলাকায় জমি নিবন্ধনের ট্যাক্স বিদ্যমান ৩ শতাংশ ও ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে যথাক্রমে ৪ শতাংশ ও ৫ শতাংশ হতে পারে। এছাড়া ফ্ল্যাট বিক্রিতে বিদ্যমান গেইন ট্যাক্স বাড়তে পারে। ফলে আগামী অর্থবছর থেকে উভয় ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ গুণতে হবে।
সিগারেট- বাড়তি বাজেট বরাদ্দ করতে হবে ধূমপায়ীদের। কারণ বাজেটে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়ানো হচ্ছে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (যেমন-হলিউড, ডার্বি) দাম ৯০ টাকা, মধ্যম স্তরের (স্টার, নেভি) ১৩৪, উচ্চস্তরের (গোল্ডলিফ) ২২৬ এবং অতি উচ্চস্তরের (বেনসন, মালবোরো) সিগারেটের দাম ৩০০ টাকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে জর্দা-গুলের দামও। তবে বিড়ির দাম অপরিবর্তিত থাকবে।
বাসমতি চাল- ধনীদের চাল হিসেবে খ্যাতি পাওয়া বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এতে চালের দাম বাড়তে পারে। এতে বিরিয়ানি কিংবা কাচ্চির দামও বাড়তে পারে।
কাজুবাদাম- সুস্বাস্থ্যের জন্য কাজুবাদাম অনেকের কাছেই জনপ্রিয়। দেশে বাদাম চাষকে উৎসাহিত করতে কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা হচ্ছে। তাই আমদানি করা কাজুবাদামের দাম বাড়তে পারে।