আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

লক্ষ্মীপুরে ১ সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত দুই শতাধিক, মৃত ২

লক্ষ্মীপুরে ১ সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত দুই শতাধিক, মৃত ২

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বৃদ্ধি পেয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। এতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই মারা গেছে দুজন রোগী। নারী-পুরুষ ও শিশুসহ গত ৭ দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে দুই শতাধিকেরও অধিক রোগী। এ ছাড়া অনেক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চাঁদপুরের মতলব ডায়রিয়া হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

আক্রান্ত রোগীর অর্ধেকেরও বেশি রায়পুর পৌরসভার বাসিন্দা। একের পর এক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালেও পর্যাপ্ত শয্যাসহ দেখা দিয়েছে স্যালাইন ও ওষুধ সংকট। তবে পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি পান করে এ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের। অবশ্য পৌরসভার মেয়র এ দাবি অস্বীকার করে এটাকে নিছক অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

রায়পুর পৌরসভার (৩নং ওয়ার্ড) দেনায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা (ইভান বেডিংয়ের মালিক) ব্যবসায়ী জাফর আহাম্মদ (৬৫)। গত সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) হঠাৎ স্ত্রী ও সন্তানসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রতিবেশীরা তাকে ঢাকায় ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে একদিন পর মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ব্যবসায়ী জাফর।


মৃত জাফরের ছেলে তানভির আহাম্মদ ইভান জানান, পৌরসভার সাপ্লাইকৃত পানি পান করার পর তার পিতার ডায়রিয়া হয়। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার জানান,  শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যাওয়ায় কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়ায় মারা যান বাবা। বর্তমানে আমার মা ও ছোট ভাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।


বৃহস্পতিবার রাতে পৌরসভার ধানহাটা এলাকার ভাড়াটিয়া সোলায়মান মিয়ার স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬৪) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। পরে  স্বজনরা তার বাড়িতেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পরে ভোরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সরেজমিনে রোববার (১৯ ডিসেম্বর) রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, চার ঘণ্টায় ২২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসেন। যাদের বেশির ভাগই ভর্তি হয়েছে। গত ৭ দিনে ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে উপচেপড়া রোগী ও স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে। এতে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ বেডের পাশাপাশি বারান্দার মেঝেতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

চিকিৎসাধীন পৌর ৬নং ওয়ার্ডর বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, গত ১০ দিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি আরও বেশি অসুস্থ বেড়ে যাওয়ায় আজ সোমবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। পৌরসভার সাপ্লাইর লাইনের পানি ব্যবহার ও পান করায় তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি তার। একই কথা বললেন পৌর শহরের দেনায়েতপুর গ্রাম থেকে এসে ভর্তি হওয়া রোগী নাসিমা বেগম (৩৫)। তিনি বলেন, পৌরসভার সাপ্লাইর পানি বিষাক্ত থাকায় আমি পান করে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। একই কথা বললেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ভর্তিকৃত পৌরসভার সোনাপুর, কাঞ্চনপুর, কেরোয়া এলাকা থেকে আসা ভর্তি রোগীরা।

এদিকে পৌরসভার দেনায়েতপুর গ্রামের নদীর পাড়, সোনাপুর ও কেরোয়াসহ বিভিন্ন এলাকাঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়িতেই ২ থেকে ৩ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ করে পৌরসভায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীর সংখ্যা ও চাপ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। 

রায়পুরের ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত সোমবার থেকে ভর্তি ও চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা প্রায় ২ শতাধিকেরও বেশি। অন্তঃসত্ত্বা ও শিশুর জন্য ১০ শয্যা এবং পুরুষ ও নারীদের শয্যা সংখ্যা ২০টি। কিন্তু যেভাবে প্রতিদিন রোগী ভর্তি হচ্ছে এতে একদিকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সরা। অপরদিকে শয্যাসহ স্যালাইন ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন জানান, ডায়রিয়া একটি পানিবাহিত রোগ। সঠিক সময়ে রোগীকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসাসেবা দিলে ডায়রিয়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। গত কয়েক দিনে হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছেন দুই শতাধিক রোগী। যার বেশির ভাগই পৌর এলাকার বাসিন্দা। এতে স্যালাইন সংকট দেখা দিতে পারে। তাই বিভিন্ন মাধ্যমে স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও জানান, আশঙ্কা করা হচ্ছে তীব্র ঠাণ্ডা ও পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি পান ও ব্যবহারের কারণে এমন প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এ জন্য রাযপুর পৌরসভার মেয়র সাহেবকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়েছে। 

এদিকে রায়পুর পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি পান করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, পৌরসভার পানি সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। সাপ্লাইয়ের পানি থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিছক মিথ্যা। 

একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারপরও পানি শাখার ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোর পানির লাইন পরীক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি।

মুক্তা মাহমুদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন লক্ষ্মীপুরে | ১ | সপ্তাহে | ডায়রিয়ায় | আক্রান্ত | দুই | শতাধিক | মৃত | ২