আর্কাইভ থেকে আন্তর্জাতিক

পাওয়া যাচ্ছে আঘাতের শব্দ, আরোহীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা

পাওয়া যাচ্ছে আঘাতের শব্দ, আরোহীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা
আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে নিখোঁজ সাবমেরিনের সন্ধানে চালানো তল্লাশির এলাকা থেকে একধরনের তীব্র আঘাতের শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রতি ৩০ মিনিট পর পর এমন শব্দ শুনতে পাচ্ছেন অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা। আটলান্টিকের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আগ্রহী এক কিশোরসহ পাঁচ পর্যটক নিয়ে গেলো রোববার (১৮ জুন) নিখোঁজ যানটির সন্ধানে ‘ঘড়ির কাটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে’ অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমন শব্দ শুনতে পাওয়াকে যানের ভেতরে আরোহীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন উদ্ধারকর্মীরা। তারা একে ‘আশার আওয়াজ’ বলছেন। পানির নিচে ৯৬ ঘণ্টা থাকার সক্ষমতা রয়েছে টাইটান নামের এই সাবমারসিবল যানটির। বুধবার (২১ জুন) এমন আওয়াজ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে সাবমারিনটির ভেতর থেকে সেটিকে কেউ শক্ত ধাতব কিছু দিয়ে সজোরে আঘাত করছেন। প্রতি ৩০ মিনিট পরপর এমন শব্দ শোনা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগে পাঠানো গোপন মেমোর উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আটলান্টিকের ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যে বিশাল এলাকায় এই তল্লাশি চলছে তা যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাট অঙ্গরাজ্যের সমান। ছোট যানটির খোঁজে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার নৌবাহিনী এবং গভীর সাগরে কাজ করে এমন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কীভাবে এই উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে তা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাউগের। তিনি বলেন, একটি সাবমেরিন এবং সনার যন্ত্র নিয়ে যানটিকে খোঁজা হচ্ছে। পানির নিচে ও ওপরে দুইভাবে খোঁজা হচ্ছে। যানটি হয়তো কোথাও ভেসে উঠতে পারে, কিন্তু তাদের যোগাযোগ যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। সেজন্য বিমান দিয়ে সাগরের ওপরে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে সনার যন্ত্র ব্যবহার করে পানির নিচেও তল্লাশি করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, রোববার সাগরে ডুব দেয়ার এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পরে ছোট আকারের ওই সাবমেরিনটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পানির নিচে যাওয়ার সময় সাবমেরিনটিতে সাধারণত চারদিন চলার মতো জরুরি অক্সিজেন থাকে। মধ্য আটলান্টিক মহাসাগরের সাড়ে ১২ হাজার ফুট গভীরে টাইটানিকের জাহাজের  ধ্বংসাবশেষ দেখতে ৮ দিনের এই ভ্রমণের জন্য আড়াই লাখ ডলার (প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার টাকা) খরচ করতে হয়। নিখোঁজ সাবমেরিন আরোহীর পরিচয় প্রকাশ পাকিস্তানের অন্যতম ধনী ব্যক্তি এবং তার কিশোর ছেলে নিখোঁজ সাবমেরিনের পাঁচজনের মধ্যে রয়েছেন। শাহজাদা দাউদ, ৪৮, যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক প্রিন্স ট্রাস্ট দাতব্য সংস্থার বোর্ড মেম্বার এবং তার ছেলে সুলাইমান দাউদ, ১৯, ছোট্ট ওই আন্ডারওয়াটার ক্রাফটের আরোহী ছিলেন। ব্রিটিশ বিলিয়নিয়ার হামিস হার্ডিং, বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি পর্যটক পল-হেনরি নারজিওলট এবং সাবমেরিনটির মালিক প্রতিষ্ঠান ওশানগেট-এর প্রধান নিবার্হী (সিইও) স্টকটন র‍্যাশ এই যানের পঞ্চম আরোহী ছিলেন। তারা সমুদ্রের গভীর অন্ধকারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সাড়ে ১২ হাজার ফুট পানির নিচে সেই ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ দেখার জন্য গিয়েছিলেন তারা। শাহজাদার স্ত্রী ক্রিস্টিনা দাউদ এবং মেয়ে আলিনাসহ অন্যান্যরা এখন তাদের সবশেষ অবস্থা জানতে যন্ত্রণাদায়ক অপেক্ষা সহ্য করছেন। এ বিবৃতিতে এমনটি জানিয়েছে দাউদ পরিবার। দাউদ পরিবার পাকিস্তানের সবচেয়ে ধনী পরিবারের মধ্যে একটি এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এই পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আটলান্টিক সাগরে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে রোববার এই পর্যটকবাহী সাবমেরিন সমুদ্রের তলদেশে নিখোঁজ হয়। এটিকে খুঁজে পাওয়ার জন্য ব্যাপক তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড জানায়, সাবমেরিন সাগরের তলদেশে যাওয়ার এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর এটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। টুরিস্ট ফার্ম ওশেনগেট জানিয়েছে সাবমেরিনটিতে ৫ জন পর্যটক রয়েছে। তাদের উদ্ধারে সমস্ত পদ্ধতি কাজে লাগানো হচ্ছে। ১২ হাজার ৫০০ ফুট সমুদ্রের তলদেশে যাওয়ার জন্য একজন পর্যটককে খরচ করতে হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আটদিন ব্যাপী এ ট্রিপের আয়োজন করা হয়। ওশেনগেট জানিয়েছে সাবমেরিনটিতে যে অক্সিজেন রয়েছে তা দিয়ে চারদিন চলা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ডের একজন কর্মকর্তা সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন নিখোঁজ সাবমেরিনটি ৭০ ঘণ্টা কিংবা ৯৬ ঘণ্টা অতিক্রম হলে কোথাও না কোথাও পাওয়া যাবে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবমেরিনটি নিখোঁজ হওয়ার ৭০ ঘণ্টা পার হয়েছে। এর মধ্যে সব অক্সিজেন শেষে হয়ে গেছে। ফলে সাবমেরিনটিতে থাকা পর্যটকদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে। ১৯১২ সালে তৎকালীন বিশ্বের বৃহত্তম যাত্রীবাহী এই জাহাজ সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে প্রথম সমুদ্রযাত্রায় বিশাল বরফখণ্ডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। জাহাজটিতে ২ হাজার ২০০ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তাদের মধ্যে এক হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মারা যান। ১৯৮৫ সালে ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়ার পর থেকে টাইটানিক নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে। প্রায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটক বিখ্যাত এই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আটলান্টিকের তলদেশে ভ্রমণে যান। কেএস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন যাচ্ছে | আঘাতের | শব্দ | আরোহীদের | বেঁচে | থাকার | সম্ভাবনা