আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ভিসি পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল শাবিপ্রবি

ভিসি পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল শাবিপ্রবি

ভাইস-চ্যান্সেলরের (ভিসি) পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)।পুলিশের লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনায় শিক্ষকসহ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী আহত হওয়ার প্রতিবাদে এ আন্দোলন করছেন তারা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।  অধ্যাপক ডা. রাশেদ তালুকদারকে এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে।

আজ সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা হল ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দেন।

এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, এক দফা এক দাবি যেই ভিসি তাদের উপর হামলা চালাতে পারে সেই উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে চায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত উপাচার্য পদত্যাগ না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনায় শাবিপ্রবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য হল বন্ধের ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান  করে আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার ঘোষণা আসে গতকাল রাতে। 

ওই সময় আন্দোলনকারী একাধিক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত মানেন না। এছাড়া বাইরে থেকে পুলিশ এনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করানোয় তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছেন। তারা কোনোভাবেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করবেন না। ভিসির নির্দেশেই পুলিশ হামলা ও গুলি চালিয়েছে।

এর আগে গতকাল রোববার বিকেলে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড মেরে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হন। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে। আজ দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন জানান, যার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিলেন সেই প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা পদত্যাগ করেছেন। তার পরিবর্তে বেগম সিরাজুন্নেসা হলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরীকে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক সব কার্যক্রম চলবে বলে জানান উপাচার্য।

প্রাধ্যক্ষ জাফরিনের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীরা বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে তারা সরে যান। দাবি পূরণ না হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যায় ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন।

মধ্যরাতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সরে গেলেও রোববার সকাল থেকে ফের শুরু হয় তাদের বিক্ষোভ। তাতে যোগ দেয় সহপাঠীরাও।
বেলা ৩টার দিকে নিজ কার্যালয় থেকে বের হয়ে বাসভবনের দিকে যাওয়ার পথে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান আন্দোলনকারী ছাত্রীরা। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উপাচার্যকে ঘেরাও করে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আইআইসিটি ভবনে গিয়ে অবস্থান নেন উপাচার্য ফরিদ।

বিকেল ৪টার দিকে সেখানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম ও অন্য শিক্ষকরা গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেন।

উত্তেজনা বাড়তে থাকলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এরপর শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কয়েকটি রাবার বুলেট ছোড়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ গুলিবিদ্ধ হন।

এর মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের আইআইসিটি ভবন থেকে হটিয়ে উপাচার্যকে বের করে তার বাসভবনে নিয়ে যায় পুলিশ।

মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, পুলিশের গুলিতে অধ্যাপক জহির গুলিবিদ্ধ হননি। ওই গুলি কারা ছুড়েছে তা তিনি জানেন না। তাকে মাউন্ড এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক নারী কনস্টেবলও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ইটের আঘাতে তিনিও আহত হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবীর জানান, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় শিক্ষক, পুলিশ ও শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়েছে। তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রক্টর আরও জানান, গুলিবিদ্ধ অধ্যাপক জহিরকে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি শঙ্কামুক্ত।

তাসনিয়া রহমান

 

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ভিসি | পদত্যাগের | দাবিতে | উত্তাল | শাবিপ্রবি