আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

চুল দিয়ে ঢেঁকি ঘোরানো আলী আহম্মদ

চুল দিয়ে ঢেঁকি ঘোরানো আলী আহম্মদ

দরিদ্র পরিবারে জন্ম হলেও নানা প্রতিভার অধিকারী রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভায় জন্মগ্রহণকারী আলী আহম্মদ। জনপ্রিয় ইত্যাদি অনুষ্ঠানে চুল দিয়ে ঢেঁকি ঘুরিয়ে ইতিহাস তৈরি করেন।

বর্তমান তার শিল পাটায় ধার দেয়া। ছোট থেকেই তিনি ছিলেন দুর্দান্ত সাহসী ও শক্তিশালী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৭১ সালে ছোট বেলাতেই মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে গিয়ে পাক আর্মিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। যুবক বয়সে তিনি চুল দিয়ে ঢেঁকি ঘোরানো, মাইক্রোবাস টানাসহ নানা কসরতের মাধ্যমে খেলা দেখিয়ে মানুষের মাঝে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন। আড়াল হয়নি বাংলাদেশ টেলিভিশন বিটিভিতে অনুষ্ঠিত ইত্যাদির চোখও। জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদিতেও তাকে ডাকা হয়েছিল। ইত্যাদিতে প্রচার হয়েছিল তার চমকপ্রদ কসরত। খেলা দেখিয়ে মানুষের মন জয় করতে পারলেও অর্থাভাব দুর হয়নি তার। যখন শরীরের শক্তি ছিল তখন খেলা দেখিয়ে যে অর্থ উপার্জন করতেন তাতে কোনোরকম সংসার চালাতে পারলেও বর্তমানে খেয়ে না খেয়েই দিন কাটছে আলী আহম্মদের। 

আলী আহম্মদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তাঁর বর্তমান বয়স ৫৮ বছর। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন তিনি আর খেলা দেখাতে পারেন না। মাঝখানে তিনি ১০ বছর নওহাটা পৌরসভায় পরিচ্ছন্ন কর্মীর চাকুরী করেছেন। কিন্ত প্রায় দুই বছর খানেক আগে তাকে ছাটাই করা হয়। কেন তাকে ছাটাই করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। শরীরের শক্তি কমে আসলে তিনি ধীরে ধীরে খেলা দেখানো বন্ধ করে শিল পাটায় ধার দেয়া শুরু করেন। এ পেশায় প্রথম দিকে আয় হলেও এখন আর আয় নেই বললেই চলে। কারণ আধুনিক যুগে এসে সবাই ব্লিন্ডার ব্যবহার করছেন। এ জন্য তিনিসহ এ পেশার কেউ ভালো নেই। আয় না হওয়ায় এখন তার পরিবারের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। অর্থাভাব থাকলেও সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য নিজের মাইক নিয়ে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করে জনগণকে সচেতন করেন। এমনকি মানুষ মারা যাওয়ার খবর পেলে সেখানে গিয়ে সচেতনামূলক বার্তা প্রচার করেন। এভাবেই কাটছে তার দিন। কিন্ত অর্থাভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। 

তার স্ত্রী ও চার কন্যা রয়েছে। এরমধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। ছোট মেয়েটাকে স্কুলের জুতা কিনে দিতে পারেননি বলে শিক্ষকরা তার মেয়ে মদিনাকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছিল। পরে বুঝিয়ে তাকে স্কুলে ক্লাস করতে পাঠানো হয়। 

তিনি আরো জানান, যুবক বয়সে তিনি কসরত করে নানা ধরণের খেলা দেখাতেন। সব খেলায় ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ও শক্তি দিয়ে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ হলো, চুল দিয়ে মাইক্রোবাস টানা, ২৪ ঘণ্টা মাটির নিচে থাকা, বুক দিয়ে পাথর ভাঙ্গা, নিজের শরীরের উপর দিয়ে মাইক্রোবাস চলতে দেয়া, বাঁশের সাথে চুল দিয়ে ঝুলে গান গাওয়া, লতাপাতা খাওয়া। সব ধরণের জিনিস খাওয়া। 

তার এসব খেলার কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি থেকে তাকে ডাকা হয়। সেখানেও তার খেলা দেখা হয়। তবে ইত্যাদি থেকে তাকে কোনোকিছু দেয়া হয়নি। তিনি আরো জানান, শরীরের শক্তি থাকার সময় খেলা দেখিয়ে যা পেতেন তাই দিয়ে কোনো রকমে চলে যেত। ওই আয়েই তিনি তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়েটি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। এখন স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে ঠিকমতো খেতে পাননা। সব আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া অর্থকষ্টে পড়েছেন। কোনো দিন খেতে পান ও কোনো কোনো দিন না খেয়েই কাটাতে হয়। তাকে পুনর্বাসনের জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। 

 

এসআই/

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন চুল | দিয়ে | ঢেঁকি | ঘোরানো | আলী | আহম্মদ