চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ সহ ৩ দফা দাবিতে ‘৩০ এর কারাগার থেকে মুক্তি চাই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ চাই’ শীর্ষক প্রতীকী কারাগার কর্মসূচি করে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ।
শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে ‘চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫, অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি ও চাকরিতে আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা এবং বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঢাবির আইন অনুষদে বঙ্গবন্ধু ল’ কমপেক্স (বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং একটি ম্যুরাল) স্থাপনের দাবিতে’ প্রতীকী কারাগার বানিয়ে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ তে বলা আছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা গ্ৰহণ করা হবে। ২০১১ সালে সরকারি চাকরি হতে অবসরের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করে ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি।
তারা আরও বলেন, বিশ্বের ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর, কোনো কোনো দেশে তা উন্মুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধুমাত্র বাংলআদেশে এবং পাকিস্তানেই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর। বাংলাদেশের জাতীয় যুব নীতিতে ১৮-৩৫ বছর বয়সীদের যুবক বলা হলেও ৩০ বছর হলেই তাদেরকে চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। জাতীয় সংসদে ৭১ বার বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিটি উত্থাপিত হয়েছে এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এর সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি লিখিতভাবে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য সুপারিশ করলেও কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
ঢাবি শাখার সদস্য সচিব এ আর খোকন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা চাকরির আবেদনের জন্য বয়স বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করা হচ্ছে কিন্তু সেটা বারবার বাতিল করা হচ্ছে। নির্বাচনী ইশতেহারে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন চাকরির আবেদনের সময় বাড়ানো হবে যা বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ হয়েছিলো কিন্তু সেটা স্বপ্নই রয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা স্মার্ট উন্নত দেশ গড়তে জানে, তাই এই স্মার্ট দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এই যুবকদের সঙ্গে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা দেখছেন, চাকরিতে আবেদনের নামে বেকার শিক্ষার্থীদের পকেট খালি করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অনেক চাকরির পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে হয়, তারা বেকার কিভাবে তারা এত টাকা দিবে? তাই আমরা চাই চাকরির আবেদন ফি সর্ব্বোচ ২০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ১ম শ্রেণীতে ২০০ টাকা, ২য় শ্রেণীতে ১৫০ টাকা, ৩য় শ্রেণীতে ১০০ টাকা, ৪র্থ শ্রেণীতে ৫০ টাকা করতে হবে, প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকির উদ্যোগ নিতে হবে।
সংগঠনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ রাসেল বলেন, আমরা ১২ বছর ধরে লক্ষ শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি নিয়ে রাজপথে এসে আন্দোলন করছি। একটা মানুষ জেলে যেমন নির্যাতিত-নিপীড়িত হয় তেমনই আজকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জেলে থাকার মতই খাঁচায় বন্দি পাখির মতই নিপীড়িত অবস্থায় রয়েছে। একটা পাখিকে আটকে রাখলে যেমন সে নির্জীব হবে তেমনই শিক্ষার্থীদের বয়সের বেড়াজালে আটকে নির্জীব করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই চাকরিতে আবেদনের বয়স বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের এই ট্রমা থেকে বের করা হোক। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ কিন্তু আমরা উন্নত দেশে পদার্পন করতে যাচ্ছি অথচ আমাদের চাকরির বয়স মাত্র ৩০। আজ ২৬ লক্ষ বেকার, এভাবে চলতে থাকলে সেটা আরও বৃদ্ধি পাবে কারণ তারা যোগ্য হলেও চাকরির বাজারে তারা আবেদনই করতে পারে না
সংগঠনের আহ্বায়ক শরিফুল হাসান শুভ বলেন, ৩০ বছর হলো একটা কারাগার স্বরূপ যার নিচে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছে। সরকার সবার পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায় করছে কিন্তু শিক্ষার্থীদের চাকরির বয়সসীমা বাধা থাকায় আমরা দেশের জন্য কাজে লাগতে পারছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী ইশতেহারে স্পষ্ট করে বলেছিলেন চাকরির আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানো হবে কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই আজকে আমরা এই প্রতীকী কারাগার থেকে আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি করার ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বয়স বেড়ে যায় ফলে তারা চাকরিতে সময়মতো যোগ দিতে পারে না এমনকি সে অনুযায়ী পড়াশোনাও করতে পারে না। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী পদ পেলেও অধিকাংশই পদ না পেয়ে হতাশায় পড়ে যায়। অন্যদিকে তাদের সরকারি চাকরির বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ায় তারা আর আবেদনও করতে পারে না। এমন চলতে থাকলে ছাত্র রাজনীতির পথও বন্ধ হয়ে যাবে ফলে দেশ পরিচালনার জন্য মেধাবীরাও আর রাজনীতিতে যোগ দিবে না।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে অবশ্যই এই তরুণ সমাজকে সাথে নিয়েই করতে হবে। আপনি আমাদের চাকরির বয়সসীমা বাড়িয়ে দিন, আমরা লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী আপনাকে ভোট দিয়ে পুনরায় জয়ী করবো। অন্যথায় এই শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব এ আর খোকনের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক শরিফুল হাসান শুভ। কর্মসূচিতে বিশেষ বক্তা হিসেবে ছিলেন সংগঠনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ রাসেল, ঢাবি শাখার আহবায়ক সানোয়ারুল হক মনি, যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম মানিক, সদস্য মো. সোহাগ প্রমুখ।