আর্কাইভ থেকে জাতীয়

‘জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন বঙ্গমাতা’

‘জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন বঙ্গমাতা’
আমার মা’র অদ্ভুত স্মরণ শক্তি ছিল। তিনি যে কথা একবার শুনতেন বা জানতেন তা সবসময় মনে রাখতেন। আমরা মাকে বলতাম, জীবন্ত টেপরেকর্ডার। সবসময় আমাদের বাড়ি গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকত। গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে আমার মা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলতেন এবং নির্দেশনা দিতেন। ৭ জুনের হরতাল সম্পূর্ণ আমার মা সফল করেছেন। বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বঙ্গমাতা পদক প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ছোটবেলা থেকে তিনি একটা মানবিক চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠেছেন। বাবার রাজনৈতিক কারণে জীবনের যে চড়াই-উতরাই, মাকে কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। বাবার পাশে থেকে সবসময় সহযোগিতা করেছেন। এমনকি তাকে অর্থনৈতিক সহযোগিতাও করেছেন। মা পাশে থাকাতে বাবা কিন্তু সফল হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মা বাবাকে বলতেন রাজনীতি করো আপত্তি নেই, কিন্তু পড়াশোনা করো। জেলজীবনেও তিনি বলতেন, জেলে থাকো আপত্তি নেই, কিন্তু স্বাস্থ্যের খেয়াল রেখ।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার মায়ের মুখে কোনো দিন অভাব-অনটনের কথা শুনিনি। তিনি একটা সাহস নিয়ে চলতেন।’ ‘দলের ভেতরে সমস্যা দেখা দেয়। মওলানা ভাসানী দল ছেড়ে চলে যান। তখন দলের দায়িত্ব নেয়ার জন্য আমার বাবা মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। আম্মা এ ব্যাপারে কোনো দিন অভিযোগ-অনুযোগ করেননি। তিনি হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন। সব সময় স্বামীর পাশে থাকতেন। চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জীবনে মাকে কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি।’ তিনি আরও বলেন, ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি হঠাৎ আব্বাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয় এবং জেলগেটেই আবার গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জেলগেট থেকে সোজা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বাবাসহ ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। সেই সময় ছয়টা মাস অর্থাৎ মামলা চলাকালীন সময়ের আগে আমরা জানতে পারিনি বাবা কোথায় আছেন, বেঁচে আছেন কি না কিচ্ছু জানতে পারিনি আমরা। সেই জানুয়ারি মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত.... আমরা তখনই জানতে পারলাম প্রথম যখন কোর্ট বসে, সেদিন আব্বা যে বেঁচে আছে আমরা দেখলাম। আমার মা কিন্তু ভেঙে পড়েননি, তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন বাবার খোঁজ করতে। এমনকি মাকেও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা বার বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওই মামলায় মাকে জড়াবারও চেষ্টা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, রাজনীতি থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন বঙ্গমাতা। ১৫ আগস্টের ঘাতকদের কাছে নিজের প্রাণ ভিক্ষাও চাননি তিনি। স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে সবসময় প্রেরণা জুগিয়েছেন ফজিলাতুন নেছা মুজিব। দেশ, জনগণ ও রাজনীতি নিয়ে সর্বদা সজাগ থাকতেন বঙ্গমাতা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন জীবনের | শেষ | মুহূর্ত | পর্যন্ত | বঙ্গবন্ধুর | সঙ্গে | ছিলেন | বঙ্গমাতা