আসরের শুরু থেকেই নানা বিতর্কে জর্জরিত ছিলো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তারপরেও প্লে অফে আসাটাই ছিলো দলটির সমর্থকদের কাছে বিস্ময়কর। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারেই তাদের বিপিএল অভিযান সমাপ্ত হলো। আজ (১৬ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরে-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সুনিল নারাইনের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স জিতেছে ৭ উইকেটের ব্যবধানে। সেটাও আবার ৪৩ বল হাতে রেখে। এই জয়ে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি ফাইনালের মঞ্চে তারা মুখোমুখি হবে ফরচুন বরিশালের।
১৪৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শরিফুল ইসলামের করা ইনিংসের প্রথম বলেই গোল্ডেন ডাক মারেন ভিক্টোরিয়ান্সের লিটন দাস। অপর ওপেনার সুনিল নারাইন রীতিমতো ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠেন। শরিফুলকে এক ছক্কা দুই চার মেরে হাত খোলার পর মিরাজের করা দ্বিতীয় ওভারে তিন ছক্কা এক চারে নেন ২২ রান। মাত্র ১৩ বলে ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি তুলে নেন এই ক্যারিবিয় ব্যাটার। বিপিএলের ইতিহাসের দ্রুততম ফিফটি।
টুর্নামেন্টের দ্রুততম ফিফটির আগের রেকর্ডটি ছিলো ক্রিকেটার আহমেদ শেহজাদের। প্রথম বিপিএলের সেমিফাইনালে বরিশাল বার্নাসের হয়ে দুরন্ত রাজশাহীর বিপক্ষে মাত্র ১৬ বলে ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন পাকিস্তানি তারকা। আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম ফিফটির মালিক যুবরাজ সিং। ১২ বলে অর্ধশতক হাঁকান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
অবশেষে ক্যারিবিয় ঝড় থামান মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। ১৬ বলে ৫ চার এবং ৬ ছক্কায় ৫৭ রানে ফেরেন নারিন। সেই সঙ্গে ভাঙে দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের সঙ্গে তার ৩৩ বলে ৭৯ রানের টর্নেডো জুটি। বেনি হাওয়েলের শিকার হওয়ার আগে ইমরুল ২৪ বলে ২২ রান করেন।
চারে নেমে ফাফ ডুপ্লেসিও কম যাননি। মঈন আলীর সঙ্গে তার জুটি জমে ওঠে। ২৭ বলে ৫৪ রানের অবিচ্ছিন্ন এই জুটিতেই ৭ উইকেট আর ৪৩ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভিক্টোরিয়ান্স। ডু প্লেসিস ২৩ বলে অপরাজিত ৩০ আর মঈন ১৩ বলে করেন হার না মানা ৩০ রান। এর আগে ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে দু’বার ফাইনালে খেলে কুমিল্লা। দুইবারই শিরোপা জিতে তারা।
এরআগে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪৮ রানে গুটিয়ে যায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। অসুস্থতা কাটিয়ে ফেরা উইল জ্যাক আর জাকির হোসেনের ব্যাটে ভালো শুরু পায় তারা। ৯ বলে ১৬ রান করা জ্যাকের বিদায়ে প্রথম ধাক্কা খায় চট্টগ্রাম। ১২ রানের মাঝে প্যাভিলিয়নে ফেরেন দলটির চার ব্যাটার। দারুণ ফর্মে থাকা চ্যাডউইক ওয়ালটনকে (২) এলবিডাব্লিউ করে দেন তানভীর ইসলাম। অপর ওপেনার জাকির হোসেন (২০) আর পাঁচ নম্বরে নামা শামীম হোসেনকে (০) ৬ষ্ঠ ওভারের পরপর দুই বলে ফেরান মঈন আলী।
৪৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দলকে টেনে তোলার চেষ্টা শুরু করেন অধিনায়ক আফিফ হোসেন আর মেহেদি মিরাজ। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১০ বলে ১০ রান করা আফিফ হোসেনকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন মঈন আলী। ৫০ রানে নেই ৫ উইকেট। ম্যাচের এই পর্যায়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন আকবর আলী আর মিরাজ।
৪০ বলে ৬১ রানের চমৎকার এই জুটি ভাঙে আকবর আলীর বিদায়ে। ২০ বলে ৩৩ রান করেন আকবর। বেনি হাওয়েলও বড় ইনিংস খেলার সুযোগ পান নি। রান আউট হয়ে ফেরেন মাত্র ৩ রানৎ করে। দলীয় সর্বোচ্চ ৪৪ রানের ইনিংস খেলা মিরাজকে ফেরান শহীদুল। মৃত্যুঞ্জয় করে ১৫ রান।
শেষ ওভারের প্রথম বলে নাসুম আহমেদকে (০) মুস্তাফিজ এলবিডাব্লিউ করে দিলে ১৪৮ রানে অল-আউট হয় চট্টগ্রাম। সমান তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন মঈন আলী আর শহীদুল।
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) টুর্নামেন্টের ফাইনালে ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। মিরপুর শেরে-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বিকাল সাড়ে ৫টায়।
হাসিব মোহাম্মদ