ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া, অতঃপর বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার স্বপ্ন এখন তার কাছে ধোঁয়াশা নয়, বরং সময়ের সিঁড়ি বেয়ে চলার পথে একরাশ চ্যালেঞ্জ তার সামনে।
আর সেই চ্যালেঞ্জের লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধুর দুই তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা দু’জনই বলেছেন আমার স্বপ্নপূরণে পাশে থাকবেন। তাদের ফোন পেয়ে তো আমিই কেঁদেই ফেলেছিলাম। তারা দু’জনেরই আমার জন্য অনেক অনেক সিমপ্যাথি।’ জানালেন এক পায়ের ওপর ভর করে বেড়ে ওঠা সেই তামান্ন আক্তার নূরা।
এই দুই ব্যক্তিত্বদের অভিনন্দন আর ভালোবাসার বন্যায় সিক্ত তামান্না আক্তার নূরার আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে।
এক পায়ের ওপর ভর করে বেড়ে ওঠা জীবনে লেখাপড়ার নজিরবিহীন সাফল্যে তামান্না রীতিমতো ‘হিরো’ বনে গেছেন। পিএসসি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় তিনি জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। অদম্য তামান্নার সাফল্যগাঁথা নিয়ে ইত্তেফাক অনলাইনে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেলেন এক পায়ে লেখা সেই তামান্না শিরোনামে এবং অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রচারের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা আলাদা আলাদাভাবে তাকে ফোন করেন।
তামান্না জানান, গেলো সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দেন। এর আগে লন্ডন থেকে শেখ রেহেনাও কল করে কথা বলেন। সোমবার সন্ধ্যায় পড়াশোনার প্রস্তুতির সময় হোয়াটসঅ্যাপ কল রিসিভ করতেই বললেন ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছিলাম। আমি কি তামান্নার সঙ্গে কথা বলছি?’ ফোনের কণ্ঠস্বর শুনে রীতিমতো ঘাবড়ে যান তামান্না আক্তার নূরা। হয়ে পড়েন বাকরুদ্ধ। কাঁদতে থাকেন অঝোরে।
অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাকে কান্না থামাতে বলেন। ঘোড় কাটিয়ে বাস্তবে ফিরে এসে কান্না থামিয়ে শেখ হাসিনাকে সালাম দেন তামান্না। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা এবং তার স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে চান। শেখ হাসিনা তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। বলেন, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করতে। এই ট্রাস্টের মাধ্যমের তাকে সবধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।
টানা ৪ মিনিটের কথাপোকথনে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘সাহস আর মনোবল থাকলে তুমি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে।’
এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টায় তামান্নার হোয়াটসঅ্যাপে নাম্বারে ফোন দেন প্রধানমন্ত্রীর ছোটবোন শেখ রেহেনা। ফোন রিসিভ করতেই তামান্না শোনেন, ‘আমি লন্ডন থেকে শেখ রেহেনা বলছি। আমি কি তামান্না নূরার সঙ্গে কথা বলছি। তখনই কান্না শুরু তামান্নার।
এ সময় শেখ রেহেনা বলেন, কেঁদো না। টানা ভালো রেজাল্ট করায় তোমাকে অভিনন্দন। তোমার সংগ্রামের কথা শুনেছি। তুমি খুব সাহসী। তুমি এগিয়ে যাও। আমরা দুই বোন বেঁচে থাকা পর্যন্ত তোমাকে সহযোগিতা করে যাব। যারা সাহস রেখে চলে তারা কখনও হেরে যায় না।’
এরপর গেলো মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রীর পিএস কথা বলেন তামান্নার সঙ্গে। তামান্না জানান, প্রধানমন্ত্রীর পিএস দ্রুত আবেদন পাঠাতে বলেছেন।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না নূরা। তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। গেলো রোববার প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসির মতো এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।
এর আগে তামান্না ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। একই ফল করেছিলেন পিইসি ও জেএসসিতেও। বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার (ননএমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তামান্না সবার বড়। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণির ছাত্র।
তাসনিয়া রহমান