১৫২ রান; খুব একটা বড় লক্ষ্য না। শুরুটাও দুর্দান্ত হয়েছিলো ফরচুন বরিশালের। কিন্তু কোথায় কিভাবে যেন হোঁচট খেলো সাকিব আল হাসানের দলটি। তাতে কপাল খুললো ইমরুল কায়েস বাহিনীর। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) হ্যাটট্রিক শিরোপা ঘরে তুললো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। মিরপুর স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ফরচুন বরিশালকে ১ রানে হারিয়েছে তারা।
তবে কি ফাইনাল মানেই কুমিল্লার জয় অবধারিত! বিপিএলে দলটির পরিসংখ্যান তেমনই বলছে। এর আগে দুইবার ফাইনালে উঠে প্রতিবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো নাফিসা কামাল স্কোয়াড। এবার তৃতীয়বারের মতো শিরোপা নিজেদের করে নিলো তারা। তবে কুমিল্লার জন্য ইতিহাস স্পর্শ করা এ জয়টা এতটা সহজ ছিলো না। ফাইনালটা হয়েছে ফাইনালের মতোই। প্রতিমুহূর্ত ছিলো রোমাঞ্চে ঠাসা। একবার বরিশালের দিকে পাল্লা ভারি তো অন্যবার কুমিল্লার দিকে। শেষ ওভারেও উত্তেজনার পারদ চূঁড়ায় ছিলো।
মিরপুর স্টেডিয়ামে কুমিল্লার দেওয়া ১৫২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে বরিশালের শুরুটা ভালো হয়নি। মুস্তাফিজের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই পরাস্ত হন টুর্নামেন্টে দারুণ পারফম করা বরিশালের অন্যতম নির্ভরতার প্রতীক মুনিম শাহরিয়ার। ৭ বলে খেলে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন তিনি।
তার অভাব এদিন পূরণ করলেন ফাইনালের একাদশে সুযোগ পাওয়া সৈকত আলী। চার-ছক্কার ফুলঝুরি ফুটিয়ে মাত্র ২৬ বলে ফিফটি তুলে নেন এ অলরাউন্ডার। রেকর্ড ১১ চার ও এক ছক্কায় ৩৪ বলে করেছেন ৫৮ রান। ফাইনালের মঞ্চে সুযোগ পেয়েই দুর্দান্ত এক ইনিংস খেললেন সৈকত।
ক্রিস গেইলের আউটটা কি ম্যাচের মোড় ঘুরে যাওয়া? হয়তো হ্যাঁ কিংবা না! তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ক্রিকেটে দুই ছক্কা ও এক চারে ৩১ বলে ৩৩ রানের ম্যাড়ম্যাড়ে ইনিংসটা আক্ষেপই বাড়াচ্ছে বারবার।
হতাশায় আবারো পুড়ালেন সাকিব। ৭ বলে মাত্র ৭ করে তানভীরের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে গেছেন। তবে বোলারের চেয়ে এ ক্ষেত্রে বড় অবদান দুর্দান্ত ক্যাচ লুফে নেওয়া মুস্তাফিজের। এরপরই রীতিমত ভেঙে পরে বরিশালের ব্যাটিং লাইনআপ। ভরসার শেষ প্রতীক ডোয়াইন ব্রাভো ১ রান করে বিদায় নেওয়ার সাথে সাথে পরাজয়ের ক্ষণ গুণতে শুরু করে বরিশালবাসী।
গ্যালারিতে ছিলো পিনঃপতন নিরবতা। শেষ ৬ বলে বরিশালের দরকার ছিলো মাত্র ১০ রান। তবে এমন ম্যাচেও মাত্র এক রানে হারতে হয়েছে সাকিব বাহিনীকে।
এর আগে প্রথম ইনিংসে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তবে এক সুনীল নারিন ছাড়া খেলতে পারলেন না কেউই। ফাইনালে বিধ্বংসী রূপ নেন নারিন। ২৩ বলে ৫টি করে চার-ছক্কায় ৫৭ রান করেন তিনি। দ্রুতই রান-আউট হয়ে ফিরে যান ৭ বলে ৮ রান করা মাহমুদুল হাসান জয়।
ফাইনালের মঞ্চে আলো ছড়াতে পারেননি ফাফ ডুপ্লেসিস (৪)। মুজিব উর রহমানের অফ স্টাম্পের ডেলিভারিটি মিডউইকেটে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে ধরা পড়েন বোলারের হাতে। ১২ বলে ১২ রান করা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস তো চরম বাজে শট খেলে ডিজে ব্র্যাভোকে উইকেট বিলিয়ে দেন। ৯৪ রানে কুমিল্লার ইনিংসের অর্ধেক শেষ হয়। উইকেটে এসেই গোল্ডেন ডাক মারেন আরিফুল হক। তার লেগ স্টাম্প উপড়ে দেন মুজিব। ৬ নম্বরে নামা মঈন আলীও আজ ধীরে শুরু করেন। ৭ম উইকটে মঈনের সঙ্গে আবু হায়দার রনির জুটিতে এগোতে থাকে কুমিল্লা।
রান উঠছিলো খুব ধীরে। শেষের দিকে মঈন হাত খুলেছিলেন। কিন্তু যখন তাকে বেশি প্রয়োজন ছিলো, তখনই রান-আউট হয়ে যান। মঈনের সংগ্রহ ৩২ বলে ২ চার ১ ছক্কায় ৩৮। সেইসঙ্গে ভাঙে ৫১ বলে ৫৩ রানের জুটি। তৃতীয় বলে ১ চার ১ ছক্কায় ১৯ করা আবু হায়দারও শফিকুলের বলে ক্যাচ দেন। চতুর্থ বলে ডাক মারেন শহিদুল। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫১ রান তোলে কুমিল্লা। ২টি করে উইকেট নেন মুজিব এবং শফিকুল।
হাসিব মোহাম্মদ