পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে শাহিনের সঙ্গে ১৬ বছরের সংসার লিজা ও শাহীন দম্পতির। তাদের ঘরে ১০ ও ১২ বছরের দুইটি সন্তান রয়েছে। এই দীর্ঘ সময় কখনো সুখের মুখ দেখেনি লিজা। স্বামীর জুয়া খেলার টাকা যোগাড় করতে প্রতিনিয়ত প্রবাসী ভাইয়ের কাছে হাত পাততে হয়েছে তাকে। টাকা না পেলেই শাহিন লিজার ওপর চালাতো শারীরিক নির্যাতন। বাধ্য হয়ে বোনের সুখের জন্য প্রবাসী ভাই প্রায়ই টাকা দিত শাহীনকে। এরপরেও তাদের সংসার টিকেনি। জুয়া খেলা ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় লিজা শাহিনের বিরুদ্ধে গেলো সপ্তাহে ভাঙ্গুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহীন গেলো তিন দিন আগে লিজাকে ডিভোর্স দেয়। তবে লিজার প্রাপ্য কাবিনের ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেনি শাহীন।
এবিষয়ে থানায় অভিযোগ দেয়ার ৪-৫ দিন পার হলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় সদ্য তালাকপ্রাপ্ত গৃহবধূ লিজা দুই সন্তানকে নিয়ে গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) থেকে চার দিন ধরে শাহিনের বাড়িতে এই অনশন করছেন।
জানা যায়, ১৬ বছর আগে পারিবারিকভাবে শাহিনের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পাটুলি পাড়া গ্রামের জলিল সরদারের মেয়ে লিজার বিয়ে হয়। শাহিন যুবক বয়স থেকেই জুয়া খেলায় আসক্ত। বিয়ের সময় লিজার পরিবার থেকে নেয়া যৌতুকের টাকা সে সময় জুয়া খেলে শেষ করে বলে অভিযোগ লিজার পরিবারের। এরপর অনেকবার শাহীন স্ত্রীকে চাপ দিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা নিয়ে জুয়া খেলে। এভাবে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে শাহিন জুয়া খেলে টাকা হেরেছে। ঋণ পরিশোধ করতে না পেয়ে শাহীন একাধিকবার আত্মগোপনে থাকে। পরে লিজার প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে শাহীন এনজিওর ঋণ পরিশোধ করে। গেলো কয়েক বছর লিজার পরিবার শাহীনকে জুয়া খেলার নেশা থেকে ফেরাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। উপরন্ত জুয়া খেলার টাকা না পেয়ে প্রায়ই লিজাকে ব্যাপক মারধর করে বলে শাহীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিবারের। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে অনেকবার সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল হক সহ, জেলা পরিষদ সদস্য আসলাম আলী, ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ বিষয়ে সালিশি বৈঠক করে সমাধান করতে ব্যর্থ হন। এর পরদিন শাহীন লিজাকে ডিভোর্স দেয়।
লিজা বেগম বলেন, সালিশের দিন রাতেও ব্যাপক মারধর করে শাহীন। এক পর্যায়ে গলায় গামছা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় পা ধরে প্রাণ ভিক্ষা চাইলে ছেড়ে দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। এরপর থেকেই দুই সন্তানকে নিয়ে অসহায় দিনযাপন করছি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, যৌতুকের জন্য প্রায়ই মারধর করত গৃহবধূ লিজাকে। এমনকি সালিশে বসার আগেও ওই গৃহবধূকে মারধর করে তার স্বামী। এরপর ডিভোর্স দেয়ায় ওই নারী এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল হক বলেন, শাহিন জুয়া খেলার কারণেই পরিবারে অশান্তি। তবে সালিশ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু শাহীনের প্রভাবশালী এক আত্মীয়ের জন্য সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল ইসলাম বলেন, ওই গৃহবধূ অভিযোগ দিলেও থানা পুলিশের কিছু করার নেই। তাকে পারিবারিক আদালতে গিয়ে মামলা করে প্রতিকার পাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অনশনের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা অনশনের কোন বিষয় নয়। তার ভাইয়েরা বিষয়টি দেখতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।