নতুন করে শুরু হতে পারে এক মহাকাশ যুদ্ধ। মহাকাশ প্রযুক্তি খাতে কে কত উন্নত, সমৃদ্ধ তা নিয়েই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দুই পরাশক্তি চীন ও আমেরিকা এই বিরোধে জড়িয়ে যেতে পারে।
তাইওয়ান ইস্যুতে বেইজিং-ওয়াশিংটনের বৈরি সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক। এছাড়া, দক্ষিণ চীন সাগর ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা নিয়েও ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এর মধ্যেই ফের চাঁদে যাওয়ার জন্য চীনের সঙ্গে মহাকাশ নিয়ে বিরোধে লিপ্ত হলো যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে, ১৯৬০ এর দশক এবং ১৯৭০-এর দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশ বিরোধে লিপ্ত হয়েছিল। ওইসময় মহাকাশ যুদ্ধে নাসা প্রথম সফলভাবে চাঁদের পৃষ্ঠে মানুষ পাঠায়। সেটি ১৯৬৯ সালের ঘটনা। ওই বছরের ২০ জুলাই প্রথম পৃথিবীর মানুষ নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন চাঁদের বুকে পদার্পণ করেন।
১৯৫৭ সালে কক্ষপথে একটি স্যাটেলাইট প্রতিস্থাপনে প্রথম সফল হয় রাশিয়া। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মহাকাশ গবেষণা নিয়ে লড়াই করছিল দেশটি।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-নাসার প্রশাসক বিল নেলসন জানান ,চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পানির সন্ধান পেয়েছেন তারা। এখন ওই এলাকায় যেতে চান। পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালাতে চান। চীনও দক্ষিণ মেরুতে গিয়েছে। যাওয়ার পরই বেইজিং দাবি করছে, ওই এলাকা এখন তাদের। অন্য কেউ সেখানে যেতে পারবে না।
চীন হলো বিশ্বের একমাত্র দেশ, যার নিজের মহাকাশ স্টেশন আছে। তারা এরই মধ্যে চাঁদের মাটির নমুনা নিয়ে এসেছে পৃথিবীতে। চন্দ্রপৃষ্ঠের মেরু অঞ্চলে পৌঁছার পরিকল্পনা করছে চীনারা।
তবে দক্ষিণ মেরুর ওই এলাকায় চীনের আগে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে প্রচুর অর্থ প্রয়োজনে নাসা বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এরই মধ্যে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স এর সঙ্গে লুনার ল্যান্ডার নির্মাণ করতে ৩০০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি হয়েছে। এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেটও নির্মাণ করেছে তারা।
এছাড়া, চলতি বছরের শুরুর দিকে জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিনের সঙ্গে ৩৪০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে নাসা। সেটাও লুনার ল্যান্ডার নির্মাণ করার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে যখন চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে তখন চীনের আগেই নাসা এসব অর্থ খরচের উদ্যোগ নিয়েছে।
সম্প্রতি চন্দ্র অভিযানে চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতের নাম যোগ হয়েছে। তাদের পাঠানো মহাকাশ যান চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সফলভাবে অবতরণ করেছে। আর সেখান থেকে পাঠাচ্ছে নানা ধরণের তথ্য-উপাত্ত। পাশাপাশি নতুন নতুন ছবি পাঠিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের আরো কৌতুহলী করে তুলেছে। চাঁদে নিজেদের অসম্ভব সফলতা থাকা সত্ত্বেও চীনের মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রম ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের বিষয়ে চীন বলছে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে মহাকাশ গবেষণা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের মহাকাশ গবেষণা স্বাভাবিক ও যৌক্তিক।