বিয়ে নিয়ে কোনো ভাবনা নেই চীনের তরুণ-তরুণীদের। ফলে দেশটিতে বিয়ে ও সন্তান জন্মের হার প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে । ২০১৫ সালে চীন তার এক সন্তান নীতি থেকে বেরিয়ে আসে। তার আগেই ২০১৩ সাল থেকে চীনে জন্মহার কমছে। সম্প্রতি সরকারি পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে
সরকারী হিসেবেই চীনে এখন নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা তিন কোটি বেশি। দেশটির একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্স বলছে, চীনের জনসংখ্যা বর্তমানে ১৪০ কোটি ১৮ লাখ। গত বছরের তুলনায় সংখ্যাটা ৮ লাখ ৫০ হাজার কম। তবে এই সংখ্যা আসছে ৫০ বছরে কমে গিয়ে দাঁড়াবে ১২০ কোটিতে। চলতি বছরের জুনে সরকারের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়,২০২২ সালে চীনে বিয়ে করার হার রেকর্ড পরিমাণে কমে ৬৮ লাখে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮৬ সালের পর এটাই সর্বনিম্ন বিয়ের হার। ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর ৮ লাখ কম বিয়ে হয়েছে।
সন্তান জন্মের হার কমে যাওয়া নিয়ে ও বিয়ের প্রতি তরুণ প্রজন্মের অনাগ্র হওয়ার ঘটনায় বেশ উদ্বিগ্ন চীন। জনসংখ্যা এভাবে কমতে থাকলে দেশটির অবস্থা কী হবে-তা নিয়ে চিন্তিত শি জিনপিং প্রশাসন। জন্মহার বাড়াতে তাই দেশটির সরকার নানা ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে। শুধু তাই নয়,জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক প্রণোদনা এবং শিশুর যত্নের সুযোগ–সুবিধা বাড়াচ্ছে। আর তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিয়ের প্রতি আগ্রহ ও জন্মহার বাড়াতে একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে চীন।
এসব প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে,বিয়ের ক্ষেত্রে কনের বয়স ২৫ বছর বা তার কম হলে এক হাজার ইউয়ান বা প্রায় ১৫ হাজার টাকা পুরস্কার মিলবে। চীনের পূর্বাঞ্চলীয় চ্যাংশান কাউন্টি এমন আর্থিক পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইচ্যাটে চ্যাংশান কাউন্টির সরকারি অ্যাকাউন্টে বিজ্ঞপ্তি আকারে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,‘সঠিক বয়সে প্রথম বিয়ে ও সন্তান জন্ম হলে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। এ ছাড়া সন্তানের যত্ন, সন্তান ধারণের সময় যত্ন ও পড়াশোনার খরচেও ছাড় দেওয়া হবে।’
চীনে কোন নারীর বয়স তিরিশের কাছাকাছি চলে আসার পরও যদি তিনি অবিবাহিত থাকেন, তখন তাদের তাচ্ছিল্য করে ডাকা হয় 'শেং নু'। এর অর্থ 'বাতিল' কিংবা 'বাদপড়া মেয়ে’। এই অপবাদ ঘোচাতে চীনে ত্রিশোর্ধ নারীদের প্রেম করতে 'ডেটিং লিভ' দেয়া হচ্ছে। ডেটিং লিভকে ‘লাভ লিভ’ও বলা হয়ে থাকে। উদ্দেশ্য একটাই, ডেটিং লিভে তারা যেন জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে পারেন।আর সন্তান জন্ম দিতে পারেন।
চীনে জনসংখ্যা বাড়াতে সম্প্রতি আরেকটি স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীনের হেনান প্রাদেশিক সরকার। এটি হলো-অর্থের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ অর্থাৎ ‘টাকা নাও, শুক্রাণু দাও’ কর্মসূচি।হেনান প্রদেশের হিউম্যান ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থীদের শুক্রাণু দেওয়ার আহবান জানিয়েছে।
শুধু তাই নয়, বোনাস হিসেবে স্পার্ম ব্যাংকটি একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণও জানিয়েছে। এই প্রতিযোগিতার লক্ষ্য সর্বোচ্চ শুক্রাণুর সংখ্যা ও সবচেয়ে শক্তিশালী শুক্রাণু সংগ্রহ করা।
আয়োজক সংগঠক জানিয়েছে, ঝেংঝুতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া একজন শিক্ষার্থী প্রতিবার শুক্রাণু দেওয়ার জন্য পরিবহনভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২৭ মার্কিন ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৯৫২ টাকা করে পাবেন। শিক্ষার্থীরা ২ মাসের মধ্যে ৮ থেকে ২০ বারের বেশি শুক্রাণু দান করবেন বলে আশা করছে আয়োজক সংগঠনটি।
চীনের ২৭টি স্পার্ম ব্যাংকের মধ্যে হেনান স্পার্ম ব্যাংক একটি। যাঁরা গর্ভধারণ করতে পারেন না বা যাঁরা বংশগত রোগে আক্রান্ত, তাঁদের সহায়তা করে এই স্পার্ম ব্যাংক। এই স্পার্ম ব্যাংকের উদ্যোগ দেখে দেশের অন্যান্য স্পার্ম ব্যাংকগুলোও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে একই ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। শুক্রাণু দিতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে শত শত মার্কিন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে।