ভোরটা শুরু শীতল সূর্যের মোহনীয় আলোয়। প্রকৃতিতে হেমন্তের শীতলতা যেন বইছে। কুয়াশার চাদর একটু একটু ঢেকেছে প্রকৃতি। ফসলের খেত আর ঘাসের ডগায় শিশিরের আনাগোনা। পঞ্জিকার পাতায় যতই আজ দিন-তারিখ দিয়ে হেমন্ত শুরু হোক না কেন, প্রকৃতিতে ঋতুটি এসে গেছে এক সপ্তাহ কিংবা এর একটু আগেই।
কুয়াশামাখা ভোর। দুপুরের পর রোদের তীব্রতা কমে একটু একটু শীতের পরশ। শীতল বাতাস। বিকেলগুলো যেন স্বল্পায়ু। সন্ধ্যা নামতেই শীত শীত মিষ্টি অনুভূতি।
কার্তিক-অগ্রহায়ণ এ দুই মাস বাংলাদেশে হেমন্তকাল। প্রকৃতির আরেক অপরূপ রূপে রুপবতী ঋতু হেমন্ত। পৌষ-মাঘ এ দুমাস শীতকাল হলে ও আশ্বিন-কার্তিক থেকে আগমনী বার্তা দিচ্ছে শীত। সারাদিন গরম অনুভূত হলেও সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হচ্ছে হালকা হিমেল হওয়া। ভোরে উত্তরের কিছু অঞ্চলে মিলছে দেখার কুয়াশার। প্রকৃতিতেও ফুটে উঠছে বৈচিত্র্য। হেমন্তের সাথে আসে এক স্নিগ্ধ সকাল।
এ ঋতুর রয়েছে অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য। সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রকৃতিতে বেজে ওঠে শীতের আগমনী বার্তা। মাঠের পাকা সোনালি ধান, কৃষকের ধান ঘরে তোলার দৃশ্য,কৃষক-কৃষাণির আনন্দ সবই হেমন্তের রূপের অণুষঙ্গ। বৈচিত্র্য রূপের সাজে প্রকৃতিতে হেমন্ত বিরাজ করে। হেমন্ত ঋতুতে চলে শীত-গরমের খেলা। হেমন্তের শুরুর দিকে এক অনুভূতি আর শেষ হেমন্তে অন্য অনুভূতি। ভোরের আকাশে হালকা কুয়াশা, শিশিরে ভেজা মাঠ-ঘাট তারপর ক্রমেই ধরণী উত্তপ্ত হতে থাকে। সৌন্দর্য এবং বৈশিষ্ট্য লালিমায় বাংলার ঋতুর রানী হেমন্ত।
হেমন্ত এলে বদলে যায় প্রকৃতি ও মানুষ। গ্রাম্য মেলা, ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস বানানোর আয়োজন, ঢেঁকির শব্দ সব মিলিয়ে এক অন্যরকম প্রকৃতিকে বরণ করে নেয় হেমন্তে। এ ঋতুতে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম, বকফুল। সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রস্তুত হয় প্রকৃতি, খেজুরের রস সংগ্রহে প্রস্তুত হতে দেখা যায় গাছিদেরও তোলা শুরু হয় নতুন আলু।
শীতের আগমনীতে সবজি ক্ষেতে থাকে কৃষকের ব্যস্ততা। শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, লাউ, টমেটো, লাল শাকসহ বিভিন্ন ধরনের আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত তারা।
বাংলার হেমন্তকাল ধূসর পাণ্ডুলিপির কবি জীবনানন্দ দাশেরই। ভোরের কাক হয়ে কিংবা শঙ্খচিল, শালিকের বেশে যিনি এই কার্তিকের নবান্নের দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন কবিতায়।
টিআর