আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। মনোনয়ন বাণিজ্যের জন্য হলেও তারা নির্বাচনে আসবে। তারেক জিয়া সেই সুযোগ মিস করবে না। বললেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ নির্দেশনা দেন তিনি
বিএনপি নির্বাচনে আসবে, সেই হিসাব মাথায় রেখেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বিএনপি নির্বাচনে আসবে না বলে মন্তব্য করেন। এসময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। মনোনয়ন বাণিজ্য করে তারেক রহমান টাকা কামানোর সুযোগ নষ্ট করবে না। আর তারা নির্বাচনে এসে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেষ্টা করবে। লক্ষ্মীপুরে যেমন ব্যালটে সিল মারার একটা ছবি তুলে প্রচার হয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে এসে এরকম নানা ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করবে। ফলে তারা নির্বাচনে আসবে ধরে নিয়েই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে। যেখানে বিরোধী কেউ প্রার্থী হবে না সেখানে নিজেদের কাউকে দাঁড় করিয়ে হলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। আর বিএনপি নির্বাচনে আসবে না তা এখনো বলার সময় আসেনি। তারা তলে তলে নির্বাচনের কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। মনোনয়ন দেয়া হবে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন ও দলের সাংগঠনিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তাকে বিজয়ী করতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে।
সভায় সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের সমমনা দলগুলোর আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কর্মযজ্ঞ মনিটরিং করার জন্য ৮ বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সক্রিয় হওয়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সভায় বিএনপির আন্দোলনে সহিংসতার প্রসঙ্গ তোলেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সফুরা বেগম। তিনি নিজ এলাকা লালমনিরহাটে বিএনপি নেতা আসাদুল হাবিব দুলুর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের নানা তথ্য তুলে ধরেন।
বিএনপির হামলায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের একজন নেতার মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে ধরে সফুরা বেগম বলেন, দুলু আবার সেই চার দলের আমলের মতো সন্ত্রাস শুরু করেছে।
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, বিষয়টি আমি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। যেসব এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা সন্ত্রাস করবে, নাশকতা করবে, গাড়িতে আগুন দেবে সেই এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িগুলো চিহ্নিত করে রাখবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।
সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা জানান, সভায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ এবং কুমিল্লার লাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের বিষয়টি উঠে আসে। লাঙ্গলকোট উপজেলায় অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনবার কমিটি গঠন ও স্থগিত করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা ছাড়া কোনো কমিটি না ভাঙতে সতর্ক করে দেন।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতীয় নির্বাচনে প্যুলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
এদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। আর সদস্যসচিব করা হয় দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে। আর দলের কো-চেয়ারম্যান, সদস্য ও ১৪ টি সাব-কমিটির বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন। এসময় পিটার হাসের বিষয়ে শিষ্টাচারবহির্ভূত মন্তব্য করায় দলীয় নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে জানিয়ে তিনি বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে শিষ্টাচারবহির্ভূত অশোভন আক্রমণাত্মক যে বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে তা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের দৃষ্টিগোচরে এসেছে। এজন্য চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চম্বল ইউনিয়নের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ফজলুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে আমরা দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেব। এ ধরনের শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করা মোটেও উচিত নয়। এ ব্যাপারে আমাদের নেত্রী সবাইকে সতর্ক করে দিতে বলেছেন।